কিশোর বয়সে অত্যধিক চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার

আজকাল কিশোর-কিশোরীদের একটি অতি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত চুল পড়া। এটা কিশোরদের কাছে তো বটেই, কিশোরীদের কাছে বেশ উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

সাধারণত একজন মানুষের দৈনিক ১০০টির মতো চুল পড়তে পারে। সেগুলো আবার গজিয়েও যায়। কিন্তু, চুল পড়ার সংখ্যা যদি এরচেয়েও বেশি হয়, তাহলে তার কারণ জানা জরুরি।

বিভিন্ন কারণেই অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। এর একটি কারণ হতে পারে পর্যাপ্ত পুষ্টির ঘাটতি। তরুণ বয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক সময় ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে অল্প খাবার খায়। এতে করে সুষম খাদ্যের ঘাটতি হতে পারে। চুলের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন (এ, বি, বিশেষ করে বায়োটিন, সি, ডি ও ই) এবং বেশকিছু খনিজ (আয়রন, জিঙ্ক) নিয়মিত গ্রহণ করা অপরিহার্য। এসব উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে ডিমের কুসুম, কলিজা, বাদাম, বীজ, কলা, মিষ্টি আলু, মাশরুম, ব্রকলি ইত্যাদি।

অতিরিক্ত চুল পড়ার আরেকটি কারণ হতে পারে থাইরয়েডের সমস্যা। এই সমস্যার কারণে চুল তৈরি বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং চুল বেশি পড়তে পারে।

অত্যধিক চুল পড়া পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের (পিসিওএস) একটি বৈশিষ্ট্য হতে পারে। ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন উত্পাদন করে। সেইসঙ্গে পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের একটি অংশও উৎপাদন হয় ডিম্বাশয় থেকে। পিসিওএস-এ আক্রান্ত হলে ডিম্বাশয় অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যান্ড্রোজেন তৈরি করে, যার ফলে অতিরিক্ত চুল পড়ে।

মাথার ত্বকে কিছু ছত্রাকের সংক্রমণের কারণেও চুল পড়তে পারে। দীর্ঘ সময় স্যাঁতসেঁতে চুল ঢেকে রাখার ফলে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। মাথায় চুলকানো বা মাখার ত্বক লাল হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়েছে।

চুলে রং করার মতো কারণেও অনেক সময় চুল পড়তে পারে। রাসায়নিক পদার্থ বারবার করে চুলে রং করা বা ব্লিচ করা, চুল স্ট্রেট করার মতো কারণে চুলের ক্ষতি হতে পারে। এরর ফলে চুল ভেঙে যায় বা পড়ে যায়। আয়রন বা গরম ব্লো-ড্রাইং থেকে অতিরিক্ত তাপ দেওয়ার ফলেও চুলের ক্ষতি হয়।

শ্যাম্পুতে অনেক সময় সালফারযুক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই রাসায়নিকের কারণে মাথার ত্বক থেকে তেল ধুয়ে যায়। এর ফলে চুল শুকিয়ে যায়, চুলের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন ভেঙে যায়, চুলে বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং চুল ভেঙে যায়। সোডিয়াম ক্লোরাইডও শ্যাম্পুতে ব্যবহার করা হয়, যার কারণে ত্বক শুষ্ক হতে পারে বা চুলকাতে পারে এবং চুল পড়া বৃদ্ধি করতে পারে।

চুলকে খুব বেশি টানটান করে, এমন হেয়ারস্টাইল করা হলে চুলের ফলিকল স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ভেজা অবস্থায় স্টাইল করলেও চুল ভেঙে যেতে পারে।

এ ছাড়া, ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ার মতো রোগও চুল পড়ার কারণ। এটি এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ, যার ফলে মানুষ বারবার চুল টেনে ধরে। এমন ক্ষেত্রে প্রায়শই তাদের টাক পড়ে যায়। ট্রাইকোটিলোম্যানিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে চুল টানা বন্ধ করার জন্য একজন থেরাপিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাদারের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।

হঠাৎ কোনো মানসিক চাপ, যেমন: অস্ত্রোপচার, কোনো আঘাতজনিত ঘটনার মধ্য দিয়ে যাওয়া, গুরুতর অসুস্থতা বা উচ্চ জ্বরের মতো কারণেও সাময়িকভাবে প্রচুর চুল পড়ে যেতে পারে।

চুল পড়া বন্ধ করতে নিয়মিত সুষম খাবার খাওয়া উচিত। এ ছাড়া, স্বাভাবিকভাবে চুল শুকানো, উচ্চ তাপে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার কমানো বা ব্যবহার না করা, খুব টাইট হেয়ারস্টাইল এড়িয়ে চলা, নিয়মিত চুল আঁচড়ানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চুল ধোয়া বা আঁচড়ানোর সময় খুবই যত্নশীল হওয়া উচিত।

চুলে যেকোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। শ্যাম্পু ও হেয়ার জেল ব্যবহার করলে তা সঠিকভাবে ধুয়ে ফেলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো দীর্ঘ সময় মাথায় থাকলে তা ত্বকের ছিদ্রগুলো আটকে দিতে পারে, যা মাথার ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

ডা. আব্দুল্লাহেল আমান, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ; abdullahelamaan@gmail.com

ডা. খাইনুর জাহান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ; khainoorzahan@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

1h ago