আশা জাগানিয়া সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল । ছবি: সংগৃহীত

রোবটিক সার্জারি, জিনথেরাপি, জিনোম সিকোয়েন্স ও বিভিন্ন জটিল সার্জারিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে আরও এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এখন দেশেই মিলবে আরও উন্নত চিকিৎসাসেবা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালুর মধ্য দিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্তে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধন করেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে যে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে তা বিশ্বমানের।

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনগণকে উন্নত চিকিৎসা সেবার দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রথম সেন্টারভিত্তিক সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। ২০১৮ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

যেসব সুবিধা থাকছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৯টি ফ্লোর ও ৩টি বেজমেন্ট আছে। থাকছে প্রযুক্তি ভিত্তিক মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি অ্যান্ড সুপার স্পেশালাইজড হেলথ কেয়ার সার্ভিস।

হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৭৫০টি। এর মধ্যে আছে ১০০টি আইসিইউ ও ১০০টি ইমার্জেন্সি শয্যা। প্রায় ২৫০টি গাড়ি রাখার মতো পার্কিং সুবিধা আছে এই বিশেষ হাসপাতালটিতে।

অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য এ হাসপাতালকে ৫টি স্পেশালাইজড সেন্টারে ভাগ করা হয়েছে। এখানে আছে দুর্ঘটনা ও জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র, হৃদরোগ ও স্নায়ুরোগ সেবাকেন্দ্র, হেপাটোবিলিয়ারি ও যকৃৎ প্রতিস্থাপনকেন্দ্র, কিডনি রোগকেন্দ্র এবং মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এখানে অত্যাধুনিক সিটিস্ক্যান, এমআরআই, পেটসিটি থেকে শুরু করে সব পরীক্ষার সুযোগ আছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ও জিন থেরাপি এখানেই সম্ভব। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৩ থেকে ৫ হাজার নতুন রোগীকে সেবা দেওয়া হবে। অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ানের সমন্বয়ে পরিচালনা করা হবে এই হাসপাতাল। মৌলিক গবেষণার সুযোগসহ গবেষণার জন্য আলাদা সেন্টার রাখা হয়েছে। দেশেই বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা মিলবে এই হাসপাতালে।

অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ তিনি বলেন, 'হাসপাতালটিতে ১১টি ম্যুলার অপারেশন থিয়েটার আছে, যেখানে উন্নত মানের সার্জারিসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হবে। হাসপাতালে আছে ৬টি ভিভিআইপি ও ভিআইপি কেবিনসহ অন্যান্য আইসোলেটেড কেবিন, ওয়ার্ড, সিআইসিইউ, এনআইসিইউ, পিআইসিইউ, সিসিইউ ও এমআইসিইউ। উন্নত এসব সেন্টার এবং ইউনিটে কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে সব অ্যাডভান্সড যন্ত্র ও অপারেটিং থিয়েটার টুলস, যার গুণগত ব্যবহার নিশ্চিত হবে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে।'

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের ভাষ্য, 'এই হাসপাতালে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত- সব শ্রেণির মানুষই যাতে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার মান ধরে রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এটি চলমান থাকবে।'

চিকিৎসক ও নার্স কারা থাকছেন

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য চিকিৎসকসহ প্রায় মোট ৬১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তোলা হবে। তাদের মধ্যে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ জন নার্স, ১০ জন মেডিকেল টেকনিশিয়ান এবং প্রশাসনের ২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশে ৪৮০ জনকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দেশে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৮ জন চিকিৎসকসহ মোট ৫৬ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়ে আসা হবে।

হাসপাতাল নির্মাণে ব্যয়

হাসপাতালটি নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে কোরিয়া সরকার দিয়েছে ১ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ৩৩০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে এসেছে ১৭০ কোটি টাকা।

হাসপাতাল নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়ার এক্সিম ব্যাংকের মধ্যে ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর প্রকল্পের ঋণচুক্তি সম্পাদিত হয়। শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ সুদহারে ৪০ বছরে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যার গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর।

অন্যান্য সুবিধা

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই স্পেশালাইজড হাসপাতালে সেবা নিতে এসে গ্রাহককে অন্য কোনো জায়গায় যেতে হবে না। হাসপাতালের ভেতরেই থাকবে একটি কনভেনিয়েন্স শপ, ব্যাংকিং সুবিধা, ফার্মেসি ও উন্নত কিচেন। কিচেনের আওতায় থাকবে ৩৫০ আসনবিশিষ্ট ৩টি ক্যাফেটেরিয়া। থাকবে ৯০ আসনবিশিষ্ট ডক্টরস ক্যাফেটেরিয়া ও উন্নত লন্ড্রি হাউস।

এ ছাড়া এখানে ১টি ভিভিআইপি এলিভেটরসহ ১৬টি এলিভেটর ও ১টি চলন্ত সিঁড়ি থাকবে। থাকবে উন্নত অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাপনা, হিটিং, ভেনটিলেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম। এর সবকিছু সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ।

Comments

The Daily Star  | English

Portfolios of 7 advisers redistributed in major shakeup

Sk Bashir Uddin gets commerce, textile ministries; Farooki gets cultural affairs ministry

1h ago