মার্কিন সহায়তা বন্ধে সংকটে পড়তে পারে দেশের স্বাস্থ্য খাত

ছবি: এএফপি

যক্ষ্মা নির্মূলে এ বছর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের। ইতোমধ্যে প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য এ রোগে বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যা কয়েক হাজার কমেছে।

তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন প্রশাসন হঠাৎ করে ৪৮ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় যক্ষ্মা প্রতিরোধে বাংলাদেশের কয়েক বছরের কার্যক্রম বৃথা যেতে চলেছে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের আশঙ্কা, হঠাৎ এই সহায়তা বন্ধের কারণে যক্ষ্মায় মৃত্যু বেড়ে যেতে পারে।

মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।

প্রতিবেদনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যক্ষ্মা রোগী মোহাম্মদ পারভেজের (৩৫) উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। পেশায় শ্রমিক পারভেজ দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগছেন। তিনি বলেন, 'ডাক্তাররা বলেছেন আমি যক্ষ্মায় আক্রান্ত।'

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এতদিন তিনি যক্ষ্মার চিকিৎসা পাচ্ছিলেন। কিন্তু, যক্ষ্মার সম্পূর্ণ চিকিৎসার জন্য তাকে আরও এক বছরের বেশি সময় হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিতে হতো, যা এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

ঢাকার বিশেষায়িত সরকারি যক্ষ্মা হাসপাতালটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত হতো।

হাসপাতালের উপপরিচালক আয়েশা আখতার বলেন, 'যক্ষ্মাপ্রবণ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম সাতটি দেশের একটি। আমরা ২০৩৫ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূলের লক্ষ্য নিয়েছি।'

তিনি জানান, এ জন্য মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় বাংলাদেশ একটি কঠোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছিল।

'তারপর হঠাৎ এক সকালে ইউএসএআইডি তাদের সহায়তা প্রত্যাহার করল,' বলেন তিনি।

যক্ষ্মা সাধারণত থুতু ও হাঁচি-কাশিরর মাধ্যমে ছড়ায়, আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করে ফেলে এবং কখনো কখনো কাশির সঙ্গে রক্ত বের হয়। ব্যাকটেরিয়াবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০১০ সালে যক্ষ্মায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৮১ হাজার, যেখানে ২০২৩ সালে এটি ৪৪ হাজারে নেমে আসে।

ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির অর্থায়িত ৮০ শতাংশের বেশি মানবিক কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।

ঢাকার আইসিডিডিআরবির কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম খান জানান, মার্কিন সহায়তায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যক্ষ্মা শনাক্তকরণ পদ্ধতি উন্নত করেছিল, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।

তিনি বলেন, 'মার্কিন সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। ওই প্রকল্পে পাঁচ কোটি ২০ লাখ লোকের পরীক্ষা করে এক লাখ ৪৮ হাজার লোকের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়, যাদের মধ্যে ১৮ হাজার শিশু।'

মার্কিন সহায়তা বন্ধে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি এখন থেমে যেতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, 'স্বাস্থ্য খাতের সবখানে ইউএসএআইডির ভূমিকা ছিল। আমি বিশেষভাবে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে চিন্তিত।'

শিশুদের ডিপথেরিয়া, হাম, পোলিও ও টিটেনাস টিকা মার্কিন সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

'যদি কোনো ব্যাঘাত হয়, তাহলে টিকাদানে আমাদের অর্জিত সাফল্য হুমকির মুখে পড়বে,' বলেন উপদেষ্টা।

Comments

The Daily Star  | English
probe committee for past elections in Bangladesh

Govt launches probe into last 3 national polls

The government has formed a committee to investigate alleged corruption, irregularities and criminal activities in the last three general elections.

3h ago