পেশেন্ট রেফারেল সিস্টেম: জরুরি, তবুও জোর উদ্যোগ নেই

সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। স্টার ফাইল ছবি

২০১৪ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর বিভাগের জন্য পেশেন্ট রেফারেল সিস্টেম (রোগীদের রেফার করা) চালুর ঘোষণা দেন।

তবে, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক ও সহায়ক স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় প্রক্রিয়াটি শুরুর আগেই ব্যর্থ হয়।

২০১৬ ও ২০১৯ সালে রেফারেল সিস্টেম চালু করতে আরও ২ বার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। উচ্চপদস্থদের মধ্যে আলোচনার পরেই তা ব্যর্থ হয়।

রেফারেল সিস্টেমের অধীনে একজন রোগী প্রথমে নিকটবর্তী সরকারি বা বেসরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যাবেন। যদি প্রয়োজন হয়, সেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোগীকে এমন হাসপাতালে পাঠাবে, যা তাদের চিকিত্সার জন্য আরও ভালো ও সজ্জিত।

অন্যদিকে, বড় হাসপাতালগুলোতে কোনো ওয়াক-ইন রোগী দেখা যাবে না, যদি না রোগীর অবস্থা গুরুতর হয়। তারা শুধুমাত্র ছোট হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে রেফার করা রোগীদের চিকিত্সা দেবে।

বড় হাসপাতালগুলো ফলো-আপের জন্য রোগীদের ছোট হাসপাতালে ফেরত পাঠাতে পারে।

সেবার মান নিশ্চিত করতে, খরচ কমাতে ও টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয় ভিড় এড়াতে এই ব্যবস্থাটি ৩ স্তরের হাসপাতালগুলোর মধ্যে একটি সংযোগ তৈরি করে— প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতাল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সরকার রেফারেল সিস্টেম চালু করা তো দূরের কথা, এর জন্য কোনো প্রোটোকলও তৈরি করতে পারেনি। যার ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমানে মোট স্বাস্থ্যসেবা ব্যয়ের মধ্যে গড়ে সাড়ে ৬৮ শতাংশই বহন করেন রোগীরা। যদি রেফারেল ব্যবস্থা চালু থাকত, তাহলে এই খরচ কমানো যেত। কারণ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় অদক্ষতার জন্য রোগীদের আর অর্থ ব্যয় করতে হতো না।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই ব্যবস্থা চালু হলে টারশিয়ারি হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ অর্ধেক কমে যেত। বর্তমানে অনেকে ছোটখাটো অসুস্থতা নিয়েও সরাসরি সেই হাসপাতালগুলোতে যান। যা গুরুতর রোগীদের সঠিকভাবে চিকিত্সা দেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।

তারা বলেন, একটি সঠিক রোগী রেফারেল সিস্টেম দেশের প্রায় ১৮ হাজার সরকারি ও ১৬ হাজার বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দেশের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে।

প্রাথমিক যত্নে অনাস্থা

সারাদেশে ইউনিয়নভিত্তিক প্রায় ৫ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র রোগীদের চিকিৎসা নিতে যাওয়ার প্রাথমিক স্থান হওয়ার কথা। কিন্তু সেসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও অন্যান্য সাপোর্ট স্টাফের কেউই ২৪ ঘণ্টা কাজ করেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসক, সাপোর্ট স্টাফ, লজিস্টিকস ও হাসপাতাল পরিচালনায় অদক্ষতার কারণে রোগীদের সঠিকভাবে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়।

বিকল্প না থাকায় মানুষ শহরের বড় হাসপাতালে ছুটে যান।

কুমিল্লার জয়নাল আবেদীন (৬২) গত ৬ মাস ধরে বুকের ব্যথায় ভুগছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতি তার আস্থা নেই। তিনি বলেন, 'সেখানে যথাযথ চিকিৎসা নেই।'

তাই ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তিনি রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এসে ৫০০ রোগীর লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক নুর উন নবী খন্দকার বলেন, 'জয়নাল তার এলাকাতেই চিকিৎসা নিতে পারতেন। হৃদরোগ ইনস্টিটিউট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেখানে হার্টের জটিল রোগীদের আসা উচিত। তবে আমাদের প্রতিদিন ছোটখাটো অসুস্থতায় আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক রোগীকে সামলাতে হয়। এই রোগীরা যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে যেতেন, তবে আমাদের এখানে ভিড় অর্ধেক হয়ে যেত।'

যদি রোগীর রেফারেল ব্যবস্থা থাকত, তাহলে জয়নালকে প্রথমে একজন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক দেখতেন। সেই চিকিৎসক তাকে ইসিজির জন্য পাঠাতেন। ফলাফল দেখার পরে চিকিৎসক যদি প্রয়োজন মনে করতেন, তাহলে রোগীকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মতো আরও ভালো-সজ্জিত হাসপাতালে পাঠাতেন। এর ফলে রোগীকে খরচ কমত, রোগী সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেত এবং বড় হাসপাতালে অতিরিক্ত ভিড়ও কমত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিম্নমানের সেবা রেফারেল সিস্টেমে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতক্ষণ না আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে মানসম্মত সেবা দিতে পারব এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা যাই বলি না কেন, রেফারেল সিস্টেম বাস্তবায়ন করা যাবে না।'

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Patient Referral System: Still elusive after all these years

Comments

The Daily Star  | English

Leather legacy fades

As the sun dipped below the horizon on Eid-ul-Azha, the narrow rural roads of Kalidasgati stirred with life. Mini-trucks and auto-vans rolled into the village, laden with the pungent, freshly flayed cowhides of the day’s ritual sacrifices.

17h ago