রুশ বাদুড়ে নতুন সংক্রামক ভাইরাস খোস্টা-২
সম্প্রতি রাশিয়া থেকে পাওয়া বাদুড়ের শরীরে খোস্টা-২ নামক একটি নতুন ভাইরাস আবিষ্কার করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। এই ভাইরাস মানবদেহেও সংক্রামিত হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
খোস্টা-২ করোনাভাইরাসের একটি উপগোষ্ঠী 'সার্বেকোভাইরাসের' অন্তর্ভুক্ত। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনগুলো এখনও এই ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকর নয়, যেটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পিএলওএস প্যাথোজেনস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম নিউজউইক জানায়, মানবদেহে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের মাধ্যমে তৈরি অ্যান্টিবডি এই ভাইরাসকে প্রতিহত করতে পারেনা।
২০২০ সালে রাশিয়ায় বাদুড়ের দেহে ভাইরাসটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু সে সময় বিজ্ঞানীরা ভাবেননি যে ভাইরাসটি মানুষের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
পরবর্তীতে আরও গবেষণার পর, বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করে, এই ভাইরাস মানবদেহের কোষগুকেও সংক্রামিত করতে পারে এবং এর সংক্রমণে মাধ্যমে সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খোস্টা-২ কীভাবে কাজ করে?
টাইম ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রুশ বাদুড় থেকে খোস্টা-১ নামক এরকম আরেকটি ভাইরাস পাওয়া গেছিল, যেটি মানুষের কোষে সহজে প্রবেশ করতে পারে না।
তবে খোস্টা-২ এ কাজে পারদর্শী। খোস্টা-২ ভাইরাস মানবকোষের এসিই২ নামক রিসেপ্টর প্রোটিনকে লক্ষ্য করে দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে। উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসও একই প্রক্রিয়ায় মানবদেহকে আক্রান্ত করে।
এই গবেষণাপত্রের অন্যতম সহ-লেখক মাইকেল লেটকো জানান, যারা করোনাভাইরাস টিকা নিয়েছেন বা যারা ওমিক্রন থেকে সেরে ওঠেছেন, তারাও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত নন।
তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, সার্স-কোভ-২ এর ওমিক্রন ধরনের মতো এই ভাইরাসে এমন কোনো জিন নেই যা মানুষের মধ্যে গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে সার্স-কোভ-২ এর জিনের সঙ্গে মিশে গেলে এটি শেষ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
খোস্টা-২ কীভাবে ছড়ায়?
বিভিন্ন বন্যপ্রাণী যেমন বাদুড়, প্যাঙ্গোলিন, র্যাকুন ডগ (শিয়ালের মতো প্রাণী) এবং পাম সিভেটদের (বেজীর মতো এক ধরনের প্রাণী) মধ্যে খোস্টা-২ দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে মাইকেল লেটকো নিউজউইককে বলেন, এই পর্যায়ে বলা কঠিন যে খোস্টা-২ মহামারিতে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কীনা।
তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে খোস্টা-২ যদি সার্স-কোভ-২ এর সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে এর সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বাড়তে পারে।
খোস্টা-২ এর বিরুদ্ধে টিকা
লেটকো বলেন, এখন বিভিন্ন গবেষক দল এমন একটি টিকা তৈরি করার চেষ্টা করছেন, যেটি শুধুমাত্র সার্স-২ ও এর পরবর্তী রূপের বিরুদ্ধেই নয়, বরং সব ধরনের সার্বেকোভাইরাস থেকেই আমাদের সুরক্ষিত রাখবে।
তিনি আরও বলেন, "দুর্ভাগ্যবশত, বর্তমানে আমাদের বেশিরভাগ টিকাই নির্দিষ্ট ভাইরাসের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যেগুলো আমরা জানি যে মানব কোষগুলিকে সংক্রামিত করে কিংবা যেগুলির দ্বারা আমাদের সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এটি এমন একটি তালিকা যা সর্বদা পরিবর্তনশীল। তাই সমস্ত সার্বেকোভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য আমাদের এই টিকাগুলির নকশা প্রসারিত করতে হবে।"
তিনি আরও জানান, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা যেসব ভাইরাসের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানি, শুধু সেগুলোর বিরুদ্ধে টিকা তৈরি করতে পারি। কিন্তু এধরনের ভাইরাসের তালিকা সদা-পরিবর্তনশীল।
'এ কারণে সব ধরনের সার্বেকোভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, এমন ভ্যাকসিন তৈরিতে আমাদের প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে', যোগ করেন লেটকো।
তবে কয়েকজন বিজ্ঞানীর মতে, মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করার খোস্টা-২ তে এখনও কিছু জিনের অভাব রয়েছে।
গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি
তথ্যসূত্র: এনডিটিভি, টাইম ম্যাগাজিন
Comments