সেন্টমার্টিনে ৮-১২ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের

সেন্টমার্টিনে ৮-১২ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের
সেন্টমার্টিনে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার পরিস্থিতি। ছবি: তৈয়ব উল্লাহ

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর পাশের এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন, টেকনাফসহ উপকূলীয় অঞ্চলে গত রাত থেকেই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা জোয়ারের সময় আঘাত হানলে কিছু সময়ের জন্য পুরো সেন্টমার্টিন পানির নিচে থাকতে পারে। তবে জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আজ রোববার সকাল ১১টার পর থেকে জোয়ার শুরু হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, জোয়ার চলাকালে ঘূর্ণিঝড় মোখা সেন্টমার্টিনে আঘাত হানতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ গওহার নঈম ওয়ারা টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড় মোখা যদি জোয়ারের সময় আঘাত হানে তাহলে ক্ষতি বেশি হবে। বাতাসের গতি খুব বেশি মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না। ক্ষতি করতে পারে জলোচ্ছ্বাস। অমাবস্যা ১৯ তারিখে। অমাবস্যা যত কাছে আসবে সাগর তত উত্তাল থাকবে। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তবে বর্তমানে যে গতিতে আসছে সেই গতিতে এলে জোয়ারের সময় আঘাত হানার একটি আশঙ্কা আছে। যদি গতি কমে যায় বা অন্য দিকে মোড় নেয় তাহলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তবে এটি যত কাছে আসবে অন্যদিকে মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তত কম থাকবে।'

গওহার নঈম ওয়ারা বলেন, 'যদি জলোচ্ছ্বাস হয়, তাহলে আমাদের সব পানির আধারগুলো লবণ পানিতে ঢেকে যাবে। এখন সেটার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। পাম্প রেডি করে রাখতে হবে। যাতে ঝড়ের পর বৃষ্টির পানিটা ধরে রাখা যায়, যেন মানুষ সেটা ব্যবহার করতে পারে।'

এই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ বলেন, 'বৃষ্টিপাত কেমন হচ্ছে সেটির ওপর মোখার প্রভাব নির্ভর করছে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে প্রভাব কম পড়বে এবং কম হলে প্রভাব বেশি হবে। একটা ঠান্ডা বাতাস আসছে। সুতরাং গরম যেদিকে বেশি থাকবে বাতাস সেদিকেই বেশি যাবে। বৃষ্টি বেশি হলে আক্রমণের গতি কমে যাবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'জোয়ারের সময় আঘাত হানলে ভয়াবহতা বেড়ে যাবে। এখন যে ৮-১২ ফিট উচ্চতার কথা বলা হচ্ছে, জোয়ারের সময় হলে এটি আরও ৩ ফিট বেশি হবে। ৮ থেকে ১২ ফিট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হলেই সেন্টমার্টিন পুরোটা তলিয়ে যাবে। জোয়ারের সময় আঘাত হানলে সেন্টমার্টিনের নিচ তালায় কেউ থাকতে পারবে না।'

জিল্লুর রহমান বলেন, 'সেন্টমার্টিন তলিয়ে গেলেও সেখানে কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হবে না। সাময়িক কিছুটা লবণাক্ততার সমস্যা হলেও সেই সমস্যা বেশি দিন থাকবে না।'

এই অধ্যাপক বলেন, 'ভারী বৃষ্টি হলে আবার পাহাড় ধসের একটি আশঙ্কা আছে। তখন আবার আরেক ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যাবে। কারণ সেখানে যে পাহাড় সেগুলো বৃষ্টিতে ধসে পড়ার আশঙ্কা বেশি। পাহাড়ে যারা আছেন তাদের সরিয়ে নেওয়া উচিত। ধারণা করা হচ্ছে মোখার প্রভাবে ৪৪ থেকে ১১৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।'

টেকনাফে কাজ করা কোস্ট ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক এমএ হান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাস আছে তবে খুব বেশি না। এমন পরিস্থিতি থাকলে তেমন একটা ক্ষয়ক্ষতি হবে না। তবে বাতাস মাঝেমধ্যে আবার বাড়ছে। কিছু গাছপালা হেলে গেছে।'

কোস্ট ফাউন্ডেশনের উখিয়ার টিম লিডার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে বাতাস আছে যেটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো ক্ষয়ক্ষতি চোখে পড়েনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে থাকা সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। কেউ কেউ আবার নিজেদের ঘরেও আছেন। যারা হোস্ট কমিউনিটি আছেন তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।' 

Comments

The Daily Star  | English
US attack on Iran nuclear sites

Iran denounces US attack as ‘outrageous’

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

10h ago