প্রশাসন একাডেমির জন্য বরাদ্দ ৭০০ একর সংরক্ষিত বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিল

বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমি। ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের সংরক্ষিত বনে 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ করা সাতশ একর বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এ বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উল্লিখিত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিটি পাঠানো হয়েছে গতকাল ১০ নভেম্বর।

সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আরেকটি প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণ করতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন ঝিলংজা 'রক্ষিত বনভূমির' ৭০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। হয়েছে। বনভূমির ওই এলাকা প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন। এটি বরাদ্দের ক্ষেত্রে বন বিভাগ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আপত্তি ছিল।

১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ সরকার একে রক্ষিত বন ঘোষণা করে। বন বিভাগ এত বছর ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছিল। বিপন্ন এশীয় বন্য হাতিসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্য প্রাণীর নিরাপদ বসতি এই ঝিলংজা বনভূমি। বন আইন অনুযায়ী, পাহাড় ও ছড়াসমৃদ্ধ এই বনভূমির ইজারা দেওয়া বা না দেওয়ার এখতিয়ার ছিল কেবল বন বিভাগের।

কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই জমি বরাদ্দ নেয় ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে। বরাদ্দ দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় জায়গাটিকে 'অকৃষি খাসজমি' হিসেবে দেখায়।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, প্রতিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এ বনভূমিতে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা নিষেধ। এ কারণে বন বিভাগ থেকে 'এই ভূমি বন্দোবস্তযোগ্য নয়' বলেও বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দিয়েছিল।

এখন বন্দোবস্ত বাতিলের কথা জানিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্থাপনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বন্দোবস্তকৃত কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার বিএস ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত বিএস ২৫০০১ নম্বর দাগের "পাহাড় শ্রেণির" ৪০০ একর ও বিএস ২৫০১০ নম্বর দাগের "ছড়া" শ্রেণির ৩০০ একর মোট ৭০০ একর জমি রক্ষিত বনের (Protected Forest) গেজেটভুক্ত হওয়ায় উক্ত বন্দোবস্ত এতদ্দ্বারা নির্দেশক্রমে বাতিল করা হয়েছে।'

এতে আরও বলা হয়, ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে আধা-সরকারি পত্র প্রেরণ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা। রেকর্ডে 'রক্ষিত বন' উল্লেখ না থাকায় বন বিভাগ এ বিষয়ে মামলা করে। পাশাপাশি, ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল চেয়ে একটি রিট মামলাও হাইকোর্টে দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগ এ বন্দোবন্তের বিষয়ে স্থগিতাদেশ প্রদান করেন, যা আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে।

১৯৯৯ সালে ঝিলংজা ইউনিয়নকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে বনভূমির গাছ কাটাসহ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন নিষিদ্ধ করা হয়। বন্দোবস্ত দেওয়া ৭০০ একর রক্ষিত বনও এই সংকটাপন্ন এলাকার অন্তর্ভুক্ত।

Comments

The Daily Star  | English

The ceasefire that couldn't heal: Reflections from a survivor

I can’t forget the days in Gaza’s hospitals—the sight of dismembered children and the cries from phosphorus burns.

5h ago