‘যারা যমুনা নদী সংকুচিত করতে চায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে’

সিরডাপ মিলনায়তনে পানি অধিকার ফোরাম, এএলআরডি এবং বেলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত

পানি উন্নয়ন বোর্ডের যমুনা নদী সংকুচিত করার উদ্যোগের মূল পরিকল্পনাকারীদের ফৌজদারি বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার। 

তিনি বলেছেন, 'সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। যারা যমুনা নদী সংকুচিত করতে চায়, কেন ও কী কারণে করতে চায় তার সঠিক কারণ জনগণকে জানাতে হবে।' 

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে পানি অধিকার ফোরাম, এএলআরডি এবং বেলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে মুজিবুর রহমান হাওলাদার এসব কথা বলেন। 

বক্তব্যে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে নদীকে মেরে ফেলার পেছনে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়ী করেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, 'সরকারি সংস্থা যেমন নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে কাজের হিসাব নেওয়া উচিত।'

সেমিনারে বুয়েটের অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডল বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ড তার প্রধান দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে উল্টো পথে কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ নদী ও পানি রক্ষা করা। কিন্তু তারা এখন বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে নদীকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে।' 

সরকারি সংস্থাগুলো নদীগুলোকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেলার নির্বাহী প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। 

তিনি বলেন, 'জলাশয় রক্ষা করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর উন্নয়ন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা বালু উত্তোলনকারী ও কোম্পানিকে ভোগ দখলের জন্য দিয়েছি।' 

তিনি বলেন, 'আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিবেশকর্মীদের দায়িত্ব হবে রাজনৈতিক দলগুলো যেন তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের ক্ষতি করে উন্নয়ন প্রকল্প না নেওয়া হয় তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি পানি রক্ষার জন্য স্বচ্ছতা ও স্পষ্ট অঙ্গিকার করা।' 

এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, 'বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও নদীকে মেরে ফেলা হচ্ছে। আমাদের বাঁচিয়ে রাখলেও, আমরা নদী দখল, দূষণের মাধ্যমে হত্যা করে যাচ্ছি।' 

তিনি আরও বলেন, 'নদীকে ঘিরে সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো কাজই সফলভাবে পরিপূর্ণ হয় না। সরকারি সংস্থাগুলোর অসচেতনতার জন্যই দেশে নদী, খাল বিল ও জলাধারগুলো মৃতপ্রায়।'

নদী রক্ষা কমিশন দেশের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করে এসব জলাধারের খোঁজখবর নিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

শামসুল হুদা আরও বলেন, 'বর্তমান কমিশনের তৎপরতা থেমে গেছে। এমনকি প্রভাবশালী ব্যক্তি-কোম্পানি নদী দখল করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ সংশ্লিষ্ট একাধিক আইন থাকলেও সরকারি সংস্থাগুলো কোনো আইনের প্রয়োগ করছে না।' 

বর্তমানে দেশে নদী, খাল, বিলগুলোর করুণ দশার পেছনে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে শামসুল হুদা বলেন, 'বিভিন্ন পদে থাকা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ম্যানেজ করে এসব করা হচ্ছে।' 

আদালত নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা ঘোষণা করলেও অবৈধ নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন এএলআরডির চেয়ারপারসন খুশী কবির। 

তিনি বলেন, 'নদীকে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান হত্যা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন তার থেকে উত্তরণের জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন দরকার।'

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

6h ago