তুলির আঁচড়ে নদী দখল-দূষণের গল্প

নদী দূষণ
হবিগঞ্জ শহরের সাইফুর রহমান টাউনহল সংলগ্ন দেয়ালে ২০ জন চিত্রশিল্পী ছবি এঁকে নদী দখল ও দূষণের প্রতিবাদ জানান। ছবি: স্টার

আগামীকাল আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), খোয়াই রিভারকিপার ও হবিগঞ্জ আর্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগে ছবি এঁকে নদী দখল-দূষণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চিত্রশিল্পীরা।

হবিগঞ্জ শহরের সাইফুর রহমান টাউনহল সংলগ্ন দেয়ালে ২০ জন চিত্রশিল্পী ছবি আঁকা শুরু করেন। প্রায় ৪ ঘণ্টায় ৩০ ফুট দেয়ালে তাদের তুলির আঁচড়ে খোয়াই, সুতাংসহ জেলার নদী দখল ও দূষনের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন তারা।

চিত্রশিল্পী আশিষ আচার্য্য বলেন, দূষণ বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বরং দিনের-পর-দিন দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। কৃষিজমি খাল, ছড়া এবং নদীসহ জীবন ও জীবিকা মারাত্মক দূষণের শিকার হচ্ছে। এটিই আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি।

চিত্রশিল্পী উৎপল আহমেদ বলেন, হবিগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে নদ-নদী, খাল, জলাশয়গুলো দূষিত হচ্ছে। ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি যেন মানুষজন সচেতন হয়।

খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কলকারখানাগুলো বেপরোয়াভাবে যে দূষণ চালিয়ে যাচ্ছে তা সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীদের সাংবিধানিক অধিকারের ওপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অথচ অনিয়ন্ত্রিত শিল্পবর্জ্য দূষণ রোধে দায়িত্বশীলরা ভূমিকা নিচ্ছেন না।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বাপা হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদ।

তিনি বলেন, উজানে ভারত সরকারের পানি সমীকরণ এবং দেশের অভ্যন্তরে দখল-দূষণ, খনন না হওয়ায় খোয়াই নদী ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্ষা মৌসুমে মানুষকে বন্যা আশঙ্কায় থাকতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত এবং অপরিকল্পিত বালু, মাটি উত্তোলনের ফলে নদীর তীর ঝুঁকিতে থাকে। কিন্তু এই নদী রক্ষায় নেই কোনো উদ্যোগ।

হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদীর চিত্র তুলে ধরে চিত্রশিল্পী নার্গিস আক্তার, বর্না সুত্রধর, লোকমান আহমেদ বলেন, রীতিমত আঁতকে ওঠার মতো পুরাতন খোয়াই নদীর চিত্র। নদীর অধিকাংশ দখল-দূষণের শিকার হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানির প্রধান আধার পুরাতন খোয়াই নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে শহরে দেখা দেয় জলবদ্ধতাসহ কৃত্রিম বন্যার। এটা আমরা ছোট থেকেই দেখছি। তাই চিত্রতে ফুটিয়ে তুলেছি।

সাহিত্যক তাহমিনা বেগম গিনি বলেন, প্রায় দেড় দশক ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের ফলে পুরাতন খোয়াই নদীর একাংশের দখল উচ্ছেদ করা হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। যা পুনরায় দখলদারদের আওতায় চলে যাচ্ছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিলেও ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি কবে দখলমুক্ত করা হবে তা কেউ জানে না।

হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল বলেন, সোনাই নদীর বুকে গড়ে উঠেছে বিশাল স্থাপনা। যা অবশ্যই নদীর প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে সহজে দৃশ্যমান। নদী ভরাট কিংবা কোনো স্থাপনা নির্মাণ আইন ও জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।  নদীর বুকে স্থাপনাকে প্রাধান্য না দিয়ে, সোনাই নদীকে বাঁচানোকে প্রাধান্য দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

7h ago