বংশী নদী পাড়ের ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, অভিযান চলবে কালও

সাভার অবৈধ স্থাপনা
শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের উচ্ছেদ অভিযানে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শতাধিক পাকা- আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/ স্টার

ঢাকার সাভারের বংশী নদী তীরবর্তী জমিতে গড়ে ওঠা অন্তত ৩ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের উচ্ছেদ অভিযানে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই শতাধিক পাকা- আধাপাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।

অভিযান আগামীকালও চলবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি, সাভার পৌরসভা ও স্থানীয় থানা পুলিশের সহযোগিতায় শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম।

'ক্রাশ প্রোগ্রাম' নামে ঢাকা জেলা প্রশাসনের এ উচ্ছেদ অভিযান সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাভারের নামাবাজার এলাকায় চলে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাজহারুল ইসলাম।

সাভার
ঢাকার সাভারের বংশী নদী পাড়ের ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ছবি: আকলাকুর রহমান আকাশ/ স্টার

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০১৪ সালে আমরা বলেছিলাম যে বংশী নদীর প্রায় ২ থেকে ৩ একর জমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে, সময়ের পরিক্রমায় এই পরিমাণ এখন ৬ থেকে ৭ একর বলে আমরা ধারণা করছি, যেখানে অন্তত ৩ শতাধিক স্থাপনা রয়েছে।

অভিযানটি দুই দিনব্যাপী করার চিন্তা থাকলেও পুরো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি বিধায় আগামীকালও অভিযান চলবে যোগ করেন তিনি।

পরিবেশবাদী সংগঠন সাভার নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম ঠান্ডু মোল্লা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও নদীর জমিতে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই, আমরা চাই নদী তার প্রাণ ফিরে পাক, অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত হোক আমাদের নদী।

ছবি আকলাকুর রহমান আকাশ/ স্টার

এই পরিবেশকর্মী বলেন, 'অভিযানে যেন কোনো প্রভাবশালীর স্থাপনাকে ছাড় না দেওয়া হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে।'

ইতোপূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের করা অবৈধ দখলদারদের তালিকায় নাম আসে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গনীসহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির। তখন থেকেই সমালোচনার মুখে পড়েন এই জনপ্রতিনিধি।

তবে বারবার নদীর জমিতে তার কোনো অবৈধ স্থাপনা নেই বলে দাবি করে এসেছেন তিনি।

তবে এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন সাভার পৌর মেয়র হাজী আব্দুল গনি।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নদীর জমিতে আমার কোনো স্থাপনা নেই। নদীর জমিতে কোনো প্রভাবশালীদের স্থাপনা থাকলে সেগুলো যেন উচ্ছেদের আওতায় আনা হয়। আমি এই অভিযানকে স্বাগত জানাই।

অবৈধ স্থাপনায় পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার,  বৈধ বিদুৎ সংযোগ

এদিকে অভিযানকালে নামাবাজার ঘুরে দেখা যায়, নদীর জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনার প্রতিটিতেই রয়েছে পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার ও বিদ্যুৎ সংযোগ।

শনিবার দুপুরে এসব অবৈধ স্থাপনার একটির মালিক ব্যবসায়ী মোতালেব মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আমার আধাপাকা ঘরটিতে ১৯৮০ সালের আগে থেকে চালের মিল পরিচালনা করে আসছিলাম। আমার ঘরে পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার ও বৈধ বিদ্যুত সংযোগ ছিল। আমি নিয়মিত বিদুৎ বিল ও পৌরসভাকে ট্যাক্স (কর) পরিশোধ করি। প্রতিটি স্থাপনায়ই পৌরসভার হোল্ডিং নাম্বার ও বৈধ বিদ্যুত সংযোগ রয়েছে।

এদিকে অবৈধ এসব স্থাপনা কীভাবে হোল্ডিং নাম্বার পেয়েছে সেটি জানতে চাইলে  সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আব্দুল গনি বলেন কীভাবে হোল্ডিং নাম্বার পেয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।

এসব স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা পল্লিবিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর জেনারেল ম্যানেজার মোল্লা মো. আবুল কালাম আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত জমির মালিকানার কাগজ দাখিলের পরই কোনো স্থাপনায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই স্থাপনাগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ যেহেতু অনেক আগেই দেওয়া হয়েছে, সেহেতু এই মুহূর্তে ফাইল চেক না করে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

অভিযানে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা ছাড়াও সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় পল্লি বিদ্যুৎসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Drone crash triggers commotion on Ijtema ground, 40 injured

It was not immediately known how the drone fell or who it belonged to

29m ago