চট্টগ্রামে আবারও ২ বিপন্ন রাজধনেশ উদ্ধার

উদ্ধার করা মহাবিপন্ন রাজধনেশ। ছবি: সংগৃহীত

২ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রাম থেকে পাচারের সময় আবারও ২টি বিপন্ন রাজধনেশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার ভোরে চান্দনাইশ উপজেলার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে পাখি ২টি উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মিজানুর রহমান (৪৭) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ৪ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এর আগে গত শুক্রবার বাঁশখালীতে আরও ৪টি রাজধনেশ উদ্ধারের পর ২ পাচারকারীকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মোঃ আরিফ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাছবাড়িয়া কলেজ গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালায় পুলিশ। সেখান থেকে পাখি ২টি উদ্ধার করে মিজানকে গ্রেপ্তারের পর চন্দনাইশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাদণ্ড দেন।

পাখিগুলো বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানান আরিফ।

এ ব্যাপারে চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'পাখিগুলো বান্দরবানের আলীকদম এলাকার দুর্গম এলাকা থেকে ধরা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিজান। এগুলো চকরিয়া থেকে চট্টগ্রাম হয়ে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এই কাজে প্রতিটি পাখির জন্য মিজানের ২ হাজার টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল।'

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকারের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এখানে বন্যপ্রাণী পাচার ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। এই কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ পাখি দিতে তারা একেক সময় একেক কৌশল অবলম্বন করেন।

সুদীপ্ত সরকার বলেন, 'আইন অনুযায়ী বন্যপ্রাণী হত্যা করা না হলে আমরা সরাসরি কোনো মামলা করতে পারি না। আর এই সুযোগে পাচারকারীরা পার পেয়ে যায়।'

বাংলাদেশের সবচেয়ে বিরল পাখিগুলোর একটি রাজধনেশ। এটি পাহাড়ি বনের আবাসিক পাখি। একসময় গহিন বনে নিয়মিতই দেখা যেত এদের। কিন্তু শিকারিরাই পাখিটির টিকে থাকা অসহনীয় করে তোলে। এখন রাজধনেশ খুব বেশি টিকে নেই।

রাজধনেশ বাংলাদেশে বিচরণ করা বৃহত্তম পাখিগুলোর একটি। ইংরেজি নাম 'Great Hornbill'; বৈজ্ঞানিক নাম 'Buceros bicornis'। বিশালতার দিক থেকে শকুন ও মদনটাকের কাছাকাছি এর অবস্থান।

বাংলাদেশে নিয়মিত এই পাখি শিকার করা হয়। মূলত পাখিটি খাওয়ার জন্য ধরা হয়। আবার কবিরাজি চিকিৎসায় ধনেশের মাথার বেশ কদর আছে। তাই বিশেষ করে রাজধনেশের মাথা অনেক দামে বিক্রি হয়।

পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলছেন, রাজধনেশের দৈর্ঘ্য ১৩০ সেন্টিমিটার এবং ওজন গড় ওজন ৩ কেজি। ছেলে পাখির ঠোঁটের সামনের অংশ ও খাঁজ কালো, চোখ রক্তলাল। মেয়ে পাখির চোখের পাশের চামড়া লাল, ঠোঁটের ওপরে অতিরিক্ত অংশের পেছনটা লাল। জোড়ায় জোড়ায় বা ৩ থেকে ৫টি পাখির ছোট দলে ওরা ঘুরে বেড়ায়।

রাজধনেশের প্রধান খাবার পাহাড়ি ফল। তবে টিকটিকি, ইঁদুর, সাপ এবং পাখির ছানাও খায়। ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এদের প্রজনন মৌসুম। এরা ১ থেকে ৩টি ডিম দেয়। মেয়ে পাখি একাই একটানা ৪ সপ্তাহ ডিমে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, চীন, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ আছে।

রাজধনেশ রক্ষায় পাশের দেশ ভারতে বড় উদ্যোগ চোখে পড়ে। নাগাল্যান্ডে প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় 'হর্নবিল ফেস্টিভ্যাল'। এর মাধ্যমে সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারছে পাখিটিকে রক্ষার আবেদন। এ ছাড়া ভারতের একাধিক রাজ্যের জাতীয় পাখি হলো রাজধনেশ।

Comments

The Daily Star  | English

Teknaf customs in limbo as 19 mt of rice, authorised by AA, reaches port

The consignment of rice weighing 19 metric tonnes arrived at Teknaf land port on Tuesday evening with the documents sealed and signed by the Arakan Army

6h ago