মৌলভীবাজারে মাছের মেলায় নিষিদ্ধ বাঘাইড় বিক্রি

মাছের মেলায় বাঘাইড়। ছবি: সংগৃহীত

সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার মিলনস্থল মৌলভীবাজারের শেরপুরে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা বসেছে। কুশিয়ারা নদীর পাড়ে এই মেলায় উঠেছে বিশালাকৃতির বাঘাইড় মাছ। মাছগুলোর একেকটির ওজন ৮০ থেকে ১০০ কেজি, দামও আকাশচুম্বী। বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী এই মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না কেউই। মাছ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে দাম হাঁকিয়ে বিক্রি করছেন বাঘাইড়।

প্রতি বছর ১৩ জানুয়ারি রাতে পৌষ সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় এই মেলা। চলে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। মৌলভীবাজারে এ বছর প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় মাছের মেলা বসেছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেলাটি হচ্ছে শেরপুরে। বিক্রেতারা জানান, গত বছরগুলোর তুলনায় এবার মাছের প্রজনন বেশি হয়েছে বলে মেলায় মাছের সংখ্যা বেশি। মিলছে বাঘআইড়ও।

যদিও বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর আওতায় বাঘাইড় মাছ শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ। কেউ তা অমান্য করলে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। দেশের কোন প্রান্তে যে কোনো ধরনের মেলা কিংবা মাছের মেলায় বাঘাইড় বিক্রি হতে না পারে সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন আগে থেকেই উদ্যোগ নিয়ে থাকে। কিন্তু মৌলভীবাজারে এমন কোনো উদ্যোগের দেখা মেলেনি।

শেরপুরের মেলায় বাঘাইড় নিয়ে এসেছেন ইব্রাহিম।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ৫০ লাখ টাকার মাছ নিয়ে মাছের মেলায় এসেছি। এই মাছটি পদ্মা নদীর মাছ। ৮০ কেজি ওজনের মাছটি ২ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চাই।'

বাঘাইড় বিক্রি আইনে নিষিদ্ধ তা জানেন বা বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শেরপুর মাছের মেলায় ৩০টির বেশি এরকম ছোট-বড় বাঘাইড় মাছ উঠেছে, যেগুলো বিক্রি হচ্ছে আকাশচুম্বী মূল্যে। ইব্রাহিমের মতো অন্য কয়েকজন বিক্রেতাও জানালেন, তারা বাঘাইড় বিক্রি আইনে নিষিদ্ধ তা জানেন না।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ফাহমিদা সুলতানা বলেন, 'বাঘাইড় মাছ বিলুপ্তির পথে। আইন করে এটি শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন প্রয়োগের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের আরেকটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। হয়তো প্রথমদিকে কিছু কষ্টকর হলেও একটি সুদূরপ্রসারী ফলাফল আসবে। জাটকা ইলিশের মত এই মাছের শিকার ও বিক্রিও অনেকটা বন্ধ করা যাবে। সেক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি যারা সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে।'

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'উৎসব উপলক্ষে মানুষ না বুঝে এটি ধরে এবং খায়। এটি অনেকদিন ধরে চলতে থাকায় একটি ট্রেন্ড চালু হয়ে গেছে। আমাদের পক্ষ থেকে মাছ বাজারে মাইকিং ও প্রচার কাজ করছি মানুষকে সচেতন করতে। গত বছরও জেল-জরিমানা করেছি। আশা করি এভাবে মানুষ সচেতন হলে ১-২ বছরের মধ্যে এটি আর শিকার ও বিক্রি হবে না।'

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'আমি আমার কর্মকর্তাকে বলে দিচ্ছি এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। আইনে নিষিদ্ধ এই মাছ কোনোভাবেই বাজারে বিক্রি করা যাবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Penalty less than illegal gains fuels stock manipulation

While fines are intended to deter future offences, questions remain over their effectiveness if the amount is lower than the illegal gain.

12h ago