সরবরাহ কম, একমাস ধরে গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামবাসী
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা গত প্রায় একমাস ধরে তীব্র গ্যাস সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় রান্নার জন্য তাদের বিকল্প উপায়ে যেতে বাধ্য হতে হচ্ছে কিংবা বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।
নগরীর আসকার দীঘির পাড়, খুলশী, জামাল খান, দেওয়ানজি পুকুর পাড়, দেওয়ান বাজার, হেম সেন লেন, শুলক বহর, ঘাট ফরহাদবেগ, বাকলিয়া, চকবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় অক্টোবরের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত এ সমস্যা অব্যাহত আছে।
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, শুধু চলতি বছরই এমন গ্যাস সংকট হচ্ছে এমন নয়। বরং, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি, এই চার মাস তারা একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা শ্যামল ধর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতি বছর শীত মৌসুমে আমাদের গ্যাস সংকটে পড়তে হয়। অক্টোবরের শেষ থেকে এখনো এ সংকট চলছে।'
'কেন প্রতি বছর একই সময়ে এই সমস্যা হয়, জানি না,' বলেন তিনি।
নগরবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত চুলায় গ্যাস সরবরাহ থাকছে না। এতে রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে।
আসকার দীঘির পাড় এলাকার গৃহবধূ আফসানা বিনতে রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্যাস না থাকায় সকালে আমার দুই বছর বয়সী বাচ্চার জন্য খাবার বানাতে পারি না। কারণ, ভোর থেকেই গ্যাস থাকে না, বিকেল ৪টার দিকে আসে।'
'আমার স্বামীকে গত প্রায় একমাস ধরে প্রতিদিন রেস্টুরেন্ট থেকে সকালের নাস্তা কিনে আনতে হচ্ছে,' বলেন তিনি।
খুলশী এলাকার বাসিন্দা শর্মিলা রুদ্র বলেন, 'গ্যাস সংকটের কারণে বিকল্প হিসেবে তিনি রাইস কুকার ব্যবহার করছেন। প্রতিবেশীদের অনেকেই কেরোসিনের চুলা ব্যবহার করছেন।'
জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)।
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, বন্দরনগরীর দৈনিক চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৪০ মিলিয়ন মেট্রিক স্ট্যান্ডার্ড ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এই সংকট।
সূত্র আরও জানায়, কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনাল থেকে সরবরাহ ঘাটতির কারণে চট্টগ্রামের জন্য দৈনিক বরাদ্দ ৩২০ এমএমসিএফ থেকে ২৮০ এমএমসিএফে নামিয়ে আনা হয়েছে।
তাছাড়া, দেশের কৃষিখাতে সারের চাহিদা মেটাতে চট্টগ্রামের ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) এবং কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডে (কাফকো) নিরবচ্ছিন্ন উত্পাদনের স্বার্থে কেজিডিসিএলকে এ দুই কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে হচ্ছে।
এ কারণে গৃহস্থালি খাতে গ্যাস সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে বলে কেজিডিসিএল কর্মকর্তারা জানান।
কেজিডিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২৮০ এমএমসিএফ গ্যাসের মধ্যে দুটি সার কারখানায় ৭৫ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৩ এমএমসিএফ এবং সিএনজি-রিফুয়েলিং স্টেশনে ১২ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
বাকি গ্যাস যাচ্ছে বাসাবাড়িতে ও অন্যান্য শিল্প কারখানায়।
যোগাযোগ করা হলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (বণ্টন) প্রকৌশলী গৌতম চন্দ্র কুন্ডু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মহেশখালীর দুটি এলএনজি টার্মিনালের একটি রক্ষণাবেক্ষণের কারণে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হলে সংকট অনেকাংশে মিটবে।'
প্রতি বছর শীত মৌসুমে গ্যাস সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'কৃষিখাতে সারের চাহিদা মেটাতে এ সময়ে চট্টগ্রামের দুটি সার কারখানা পুরোপুরি চালু থাকে। নিরবচ্ছিন্ন সার উৎপাদনের জন্য কেজিডিসিএলকে এই দুই কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করতে হয়। গৃহস্থালিতে গ্যাস সংকট সৃষ্টির অন্যতম কারণ এটি।'
Comments