সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ গেলো কুতুবদিয়ায়

সাবমেরিন কেবল, বিদ্যুৎ, কুতুবদিয়া, জাতীয় গ্রিড,
বৃহস্পতিবার দুপুরে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-২ আসনের (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। ছবি: সংগৃহীত

সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। গতকাল রাত ৯টা থেকে দ্বীপটির দেড় হাজার মানুষ পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা পেতে শুরু করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কক্সবাজার-২ আসনের (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।

আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, 'অসম্ভবকে সম্ভব করার জীবন্ত উদাহরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যারা এ ধরনের প্রকল্পের কথা চিন্তাও করেনি তা প্রধানমন্ত্রী বাস্তবায়ন করে দেখালেন। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় এই প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলো। কুতুবদিয়ায় সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দ্বীপবাসীর জন্য একটি বড় স্বপ্ন পূরণ। তাই কুতুবদিয়াবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।'

প্রকল্পটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুধবার রাত ৯টা থেকে দ্বীপটিতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকভাবে দেড় হাজার গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। এখানে ১৯৮০ সালে কুতুবদিয়া দ্বীপের সদর ইউনিয়ন বড়ঘোপ এলাকায় ডিজেল দিয়ে পরিচালিত জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। এবার পুরানো সেই দেড় হাজার গ্রাহককে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন গ্রাহকদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ হাজার গ্রাহককে পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্পের অধীনে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে কুতুবদিয়া। কুতুবদিয়াকে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সাগরের তলদেশ দিয়ে ২ লেনে ৬ কিলোমিটার কেবল বসানো হয়েছে। সেখানে ১২ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন উপকেন্দ্র এবং ৭২০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপে ৩টি সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এছাড়া, হাতিয়া থেকে ১১ কেভি সাবমেরিন লাইনের মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে। চলতি মাসে নিঝুম দ্বীপও জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত হবে।'

কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আজ সত্যিই দ্বীপবাসীর দীর্ঘকালের একটি লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো। আজ দ্বীপবাসীর ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।'

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, ২১৫ দশমিক ৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় বর্তমানে দেড় লাখের বেশি মানুষের বসবাস। ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় ১৯৮০ সাল থেকে জেনারেটরের মাধ্যমে সান্ধ্যকালীন কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্বল্প পরিসরে জেনারেটরের মাধ্যমে উপজেলা সদরের কয়েকটি এলাকায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিমার্ণ করা হলেও তা কার্যত কোনো কাজে আসেনি। ২০২০ সালে দেশের শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। চারশ কোটি টাকা ব্যয়ে 'হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন' প্রকল্পটির মেয়াদকাল ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের আগেই দ্বীপটিতে পৌঁছে গেল জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।

Comments

The Daily Star  | English

Nahid warns against media intimidation, vows stern action

The government will take stern action against those trying to incite violence or exert undue pressure on the media or newspapers, said Information Adviser Nahid Islam today

2h ago