দেশে ঋতুর ধরন বদলে যাচ্ছে, দাবদাহ বাড়ছে বর্ষায়

ঢাকায় বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আবহাওয়াবিদরা। ছবি: স্টার

দেশে মৌসুম-ভিত্তিক আবহাওয়ার ধরণ দ্রুত পাল্টাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনাও বাড়ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ও নরওয়ের আবহাওয়া দপ্তরের পাঁচ আবহাওয়াবিদের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে 'বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু: আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন' শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা, এস এম কামরুল হাসান এবং নরওয়ের আবহাওয়াবিদ এলিনা কোয়া, কাজসা পারিং এবং হ্যান্স ওলাভ হাইজেন।

আবহাওয়াবিদরা জানান, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর ধরে তারা এই গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তাপমাত্রার পরিবর্তন বুঝতে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩৫টি স্টেশনের ৪৩ বছরের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

তারা আরও জানান, বছরের চারটি- শীতকাল (ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি), প্রাক্‌-বর্ষা (মার্চ, এপ্রিল ও মে) বর্ষা (জুন থেকে সেপ্টেম্বর) এবং বর্ষা-পরবর্তী (অক্টোবর ও নভেম্বর) সময় ধরে এসব তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে। 

এর আগেও, ২০১৬ সালে নরওয়ের আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে 'বাংলাদেশের জলবায়ু' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে সেটি আজকের প্রতিবেদনের 'বেসমেন্ট রিপোর্ট' ছিল বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।

তিনি বলেন, 'সিজনাল প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। এক্সট্রিম ইভেন্ট বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো দাবদাহের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। সারাদেশেই এটি বাড়ছে। শীতেও স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের এখানে ধূলিকণা প্রচুর। এ ছাড়াও, আন্তমহাদেশীয় দূষণের কারণে দিনের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে, এ সময় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বেশি।'

'এই দাবদাহ ও শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়বে কৃষিতে। সেঁচের জন্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে, এসি লাগবে বেশি। সাধারণত তাপপ্রবাহ দেখা যেত গ্রীষ্মকালে- এপ্রিল ও মে মাসে। এখন অক্টোবর পর্যন্ত চলে গেছে। আগে গ্রীষ্মকালে যে দাবদাহ হতো, গত ১২ বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, এটা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। শুধু গ্রীষ্মকালে না, এটা বর্ষাকালেও হচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, 'দেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। বর্ষা আসছে দেরিতে, যাচ্ছেও দেরিতে। তাপপ্রবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্ষা, শীত ও গ্রীষ্মেও তাপ বেড়ে যাচ্ছে। শীতের দিনে তাপ বাড়লেও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বেশি। মেঘাচ্ছন্ন দিনের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বায়ুদূষণ।'

বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত এসপেন রিক্টার সেভেন্ডসন বলেন, 'বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি। আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে কার্যকর বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য–উপাত্তের ব্যবহার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।'

নরওয়ের সরকার গত ১৩ বছর ধরে আবহাওয়াসংক্রান্ত গবেষণায় বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরকে সহায়তা করে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবে নরওয়ে।'

নরওয়ের আবহাওয়া দপ্তরের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হ্যান্স ওলাভ হাইজেন বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা পেতে ভবিষ্যতের জন্য কোনো কিছু ফেলে রাখার অবকাশ নেই। ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাপপ্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। ভবিষ্যতে বৃষ্টির সময়ও কমে আসতে পারে। হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এমন বৈরী পরিস্থিতি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার বিষয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন ফাতিমা আকতার বলেন, 'শুধু গবেষণার পরিসংখ্যান নয়, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার প্রভাব প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি। আমাদের কৃষি এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। ভবিষ্যতে আমাদের খাদ্যনিরাপত্তা, অবকাঠামো আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।'

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের 'ক্লাইমেট প্রজেকশন' কী হবে, নরওয়ের আবহাওয়া দপ্তরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়েও পরবর্তীতে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।

 

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

3h ago