সাতক্ষীরায় উপকূল রক্ষা বাঁধের ২৫ জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ, ৩ নম্বর সংকেত

সাতক্ষীরায় উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে পাউবোর বাঁধের ২৫ জায়গা ঝুঁকিতে আছে। ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরার উপকূল রক্ষা বাঁধের ২৫টি জায়গা ঝুঁকিতে রয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপকূল রক্ষা বাঁধে এই দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সাতক্ষীরায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পাউবোর কর্মকর্তারা জানান, আশাশুনিতে উপকূল রক্ষা বাঁধে ১৫টি জায়গা ঝুঁকিতে আছে। পাউবোর বিভাগ-২ এর উপ সহকারী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, আশাশুনির কামালকাটি, ঝাপালি, চুইবাড়িয়া, বৌদিরখেয়াঘাট, নয়াখালি, কাকবাশিয়া, গদাইপুর, রুইয়েরবিল, হরিশখালি নাকনাসহ ১৫টি জায়গায় বাঁধ কমবেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

উপকূলীয় অন্য উপজেলা শ্যামনগরের অবস্থা সম্পর্কে পাউবোর বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, শ্যামনগর এলাকার দুর্গাবাটি এলাকার তিনটি জায়গা ও গাবুরার চারটি জায়গাসহ বাঁধে ৮-১০ জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আগামী মঙ্গলবার নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে 'সিত্রাং'।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত জারি করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া ও উপকূলীয় নদ-নদীতে ৩-৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আগামী ১-২ দিন আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি থাকবে।

শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা। এ ইউনিয়নের তিন দিক খোলপেটুয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদ ঘিরে রেখেছে, আর একদিকে সুন্দরবন। ৪০ হাজার জনসংখ্যার ৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ইউনিয়নটি চারদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বাঁধ দিয়ে ঘেরা। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেলেই এই ইউনিয়নের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে।

এখানকার গাবুরা গ্রামের বাসিন্দা আরমান বিবি বলেন, 'কখন যে কি হয় তা কাওয়া যেতেছে না। খুব ভয় করতেছে।'

সাতক্ষীরার আরেকটি দ্বীপ ইউনিয়ন প্রতাপনগর। এলাকাটি ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াস এর ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অনেকেই বাস্তুভিটায় ফিরতে পারেনি। এরমধ্যে ঝড় ও বৃষ্টির পূর্বাভাসে ইউনিয়নবাসী আতঙ্কে আছেন।

প্রতাপনগর গ্রামের হাওলাদারবাড়ি এলাকার আব্দুর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে বাঁধ ভেঙে তারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আবার বাঁধ ভাঙলে বাস্তুভিটা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। নয়াখালি গ্রামের ইশরাদ আলী জানান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। একটু জলোচ্ছ্বাসেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হলে দুর্গতির সীমা থাকবে না।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন কর্মকর্তা ইকবাল হুসাইন চৌধুরী জানান, গতকাল সকাল ১১টায় বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন অফিসে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। সভায় সুন্দরবনের চারটি স্টেশনের ১২টি ক্যম্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে জেলেদের সুন্দরবনে ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সুন্দরবনের ভেতরে থাকা জেলেদের বন বিভাগের ক্যাম্পের পাশে অথবা নিরাপদ জায়গায় থাকতে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, শনিবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। শ্যামনগর ও আশাশুনির ২৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই উপজেলায় পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি জলযান ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের জন্য ৮৫ হাজার সিনথেটিক্স ব্যাগ ও ১২ হাজার জিও ব্যাগ রাখা হয়েছে। সুপেয় পানি, খাবার স্যালাইন ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা আছে। ৮৭টি মেডিকেল দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago