সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি: জীবনের অলিখিত ভ্রমণের গল্প

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমায় ফারুকী ও তিশা
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও তিশা। ছবি: সংগৃহীত

জীবন একটা যাপিত পাণ্ডুলিপি। কিন্তু এই পাণ্ডুলিপিতে কী লেখা আছে, তা আমাদের অজানা। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বুঝতে পারি, এই বুঝি ছিল লেখা। তারপর, গল্প টুকে রাখি স্মৃতির খাতায়, প্রস্তুত হই যাপন করতে যা থাকে আমাদের জীবনলিপির পরবর্তী পাতায়।

'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি' জীবন, বাস্তবতা ও কল্পনার মিশেলে রূপালি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছে যাপিত জীবনের কিছু অলিখিত ভ্রমণের গল্প। ইশতিয়াক আহমেদের গানের কথায় বলা যায়,

'ধীরে ধীরে ঘিরে যত ভয়,

ফিরে ফিরে তবু যেতে হয়

জীবন অলিখিত ভ্রমণ, আর কিছু নয়।'

জর্জ অরওয়েলের '১৯৮৪' উপন্যাসের 'মিনিস্ট্রি অব লাভ' ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত। কিন্তু চরকির 'মিনিস্ট্রি অব লাভ' ভিন্ন কিছু। ভালোবাসার গল্প রূপালি পর্দায় দেখানো এই মিনিস্ট্রির উদ্দেশ্য। চলতি বছরের ৩ আগস্ট ১১ জন চলচ্চিত্র নির্মাতা শপথ গ্রহণ করেন ১২টি ভিন্নধর্মী ভালোবাসার গল্প নির্মাণের। এই মিনিস্ট্রির চিফ মিনিস্টার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি' প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়েছে মিনিস্ট্রি অব লাভ অ্যান্থলজির। সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে গত ৩০ নভেম্বর। সমাজ বাস্তবতার নানান রুক্ষ রূপ এবং শিশুকন্যার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি' ইজ 'সামথিং লাইক অ্যা ওয়াও'।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’তে ফারুকী ও তিশা
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’তে ফারুকী ও তিশা। চরকির সৌজন্যে

আত্মজীবনী নয়, আত্মজীবনীর মতো এই সিনেমার প্রধান চরিত্র তিথি (নুশরাত ইমরোজ তিশা) ও ফারহান (মোস্তফা সরয়ার ফারুকী) দম্পতি। সিনেমায় পেশাগত জীবনে তিথি ও ফারহান বাস্তব জীবনের তিশা-ফারুকীর মতোই অভিনেত্রী ও পরিচালক। নানাবিধ ব্যস্ততায় বিয়ের ১২ বছর পার হয়ে গেলে তাদের মনে জাগে সন্তান গ্রহণের ইচ্ছে। কিন্তু ততদিনে দেখা দেওয়া জটিলতা ও আগতপ্রায় সন্তানকে স্বাগত জানানোকে ঘিরে গল্প আবর্তিত হতে থাকে।

এই আবর্তনে তিথি-ফারহান চরিত্রের মাধ্যমে পরিচালক আপনাকে ধাক্কা দেবে সংলাপে সংলাপে। যেমন: তিথি যখন তার অনাগত সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলে, 'এই পুচকু, তোর বাবা তোর জন্য কী কী করছে, তোর মনে থাকবে তো?'। তখন ফারহান বলে, 'না, মনে না থাকলেও অসুবিধা নাই। আমরা কি মনে রাখছি আমাদের আব্বা-আম্মা কী করছে আমাদের জন্য!'

এই সংলাপ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে অসঙ্গতি, জানান দেবে শিশুকে পৃথিবীতে আনতে বাবা-মায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষা। আবার সন্তান যদি সেসব মনে না রাখে, তাতেও কিছু যায়-আসবে না বলে কর্তৃত্ব ছেড়ে দিলেন, মনে করিয়ে দিলেন কাহলিল জিবরানের সেই অমরবাণী, '...তোমরা তোমাদের ভালোবাসা তাদের (সন্তানদের) দিতে পারো, কিন্তু তোমাদের ভাবনা দিও না।'

এই সিনেমার সম্পূর্ণ গাঁথুনি কতটুকু আর কতটুকু কাল্পনিক, বলা মুশকিল। তবে, শেষদৃশ্য মূলত আপনার-আমার জন্য এবং একইসঙ্গে নবাগত শিশুর জন্য সমাজের তৈরি সত্য বিপদের সংকেত। গল্পের শেষ যেখানে, সেখানেই আঁচ দিয়ে গেছে আসন্ন জীবন কেমন হতে চলছে। 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি'র সফলতা এখানেই। এক ঘণ্টা ২২ মিনিটের চিত্রনাট্য পুরো যাপিত ও আসন্ন জীবন অনুমান করিয়ে যায়।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’তে ডিপজল
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’–তে ডিপজল। চরকির সৌজন্যে

এই গল্পে প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে পর্দায় দেখা দিয়েছেন মিডিয়া জগতের জনপ্রিয় দম্পতি তিশা-ফারুকী। তাই হয়তো নামও এমন 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি'। তাদের অভিনয়ের কথা না বললেই নয়। বিনা বাক্যব্যয়ে তিশা যেন মুখভঙ্গি দিয়ে সব কথা প্রকাশের ক্ষমতা রাখেন। আর ফারুকী প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন বলে মনে হয় না। পুরোটা সময় সাবলীল, সুন্দর ছিলেন তিনি। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রের অভিনয়ও ছিল প্রয়োজনীয় ও সুন্দর। ঢাকাই সিনেমার ভিলেন হিসেবে খ্যাত ডিপজলের নেতিবাচক চরিত্রের ধীরতাও ছিল হৃদয়গ্রাহী।

পরিচালক ফারুকী মানেই যেন সিনেমার কালার গ্রেডিং শীতের সকালের মোলায়েম রোদ, যে রোদে ফুটে ওঠে মিহি দুঃখ। এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'ডুব' সিনেমা। ব্যতিক্রম হয়নি এই সিনেমাতেও। বেদনার নীল রঙে দৃশ্যায়িত হয়েছে মা হতে না পারার দুঃখ। সঙ্গে মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।

ইশতিয়াক আহমেদের লেখা 'জীবন অলিখিত ভ্রমণ, আর কিছু নয়' গানটি গেয়েছেন তিশা নিজেই। যে শিশুকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার গল্প সিনেমার ছাঁচে ফেলে নির্মাণ করেছেন 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি', সেই শিশুর জন্য বার্তা দিয়ে গেলেন চিরকুট ব্যান্ডের ভোকাল শারমিন সুলতানা সুমির লেখা ও গাওয়া 'জোছনার ফুল' গানে, 'জীবনটা তোরই, বাকি হাতেখড়ি, ঠিক করে নিস যা ভুল'। এই গানের দৃশ্যের মাধ্যমে সিনেপর্দায় হাতেখড়ি হলো তিশা-ফারুকীর আদুরে শিশুকন্যা ইলহামেরও।

আত্মজীবনী হোক বা আত্মজীবনীর মতো কিছু, বাবা-মায়ের সংগ্রাম এবং ছোট্ট শিশুর জন্য ভালোবাসার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ এই সিনেমাটি, যা শাশ্বত সুন্দর।

Comments

The Daily Star  | English
CSA to be repealed

CSA to be repealed within a week: Nahid Islam

About the election, Nahid said an election based on national consensus will be held after completing all necessary reforms.

3h ago