এয়ারপোর্ট-ডিবি অফিস-কারাগার: নুসরাত ফারিয়ার ৫২ ঘণ্টা

যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'আশিকী' দিয়ে রুপালি পর্দায় আগমন নুসরাত ফারিয়ার। ক্যারিয়ারের শুরুতে রেডিও জকি ও টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
কিন্তু, গত দুই দিন ধরে দেশজুড়ে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিলেন জনপ্রিয় এই চিত্রনায়িকা।
নুসরাত ফারিয়ার গত দুই দিন ছিল তার 'জীবনের সবচেয়ে মূমূর্ষু সময়'।
রোববার সকালে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে তিনি যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। সেখানে সকাল ১১টার দিকে হঠাৎ করেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটক করে।
এরপর তাকে নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ, আদালত, কারাগার সব মিলিয়ে প্রায় ৫২ ঘণ্টা বাসায় ফিরতে পারেননি ঢালিউডের এই নায়িকা।

যেভাবে গ্রেপ্তার
১৮ মে, রোববার। থাইল্যান্ডের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে হযরত শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান নুসরাত ফারিয়া।
তাকে প্রথমে চেকপোস্টে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ তাকে নিয়ে যায় ভাটারা থানায়। এরপর নেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে। সেখানে চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
কেউ কেউ ভেবেছিলেন জ্ঞিজ্ঞাসাবাদের পর হয়তো নুসরাতকে ছেড়ে দেওয়া হবে। পরে জানা যায়, ভাটারা থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে নুসরাত ফারিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

২৩ ঘণ্টা পর কারাগারে
জিজ্ঞাসাবাদের পর নুসরাত ফারিয়াকে হেফাজতে নেয় ডিবি। পরদিন সকাল ১০টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসে তোলা হয়। শুনানি চলে প্রায় আধা ঘণ্টা।
নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন। কিন্তু আদালত জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২২ মে তারিখ ধার্য করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটে চিত্রনায়িকা
ডিবি কার্যালয় থেকে নুসরাত ফারিয়াকে নেওয়া হয় আদালতের হাজতখানায়। সেখান থেকে যখন আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়, তখন তার মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট। এছাড়া, পরনে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
পর্যাপ্ত নারী পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিয়ে নিয়ে যান তাকে। এ সময় তার মা আদালত চত্বরেই ছিলেন। চেয়েছিলেন মেয়ের সঙ্গে একটু দেখা করবেন, যদিও তা সম্ভব হয়নি।

কাঠগড়ায় ৩০ মিনিট
গতকাল নুসরাতকে যখন আদালতে নেওয়া হয়, তখন আদালত চত্বরে ছিল উপচে পড়া ভিড়।
আদালতের কাঠগড়ায় কোনো কথা বলেননি তিনি, নির্বাক ছিলেন পুরোটা সময়। বিমর্ষ দেখাচ্ছিল তাকে।
পুলিশ নুসরাত ফারিয়াকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে। নুসরাত ফারিয়ার আইনজীবী তার জামিন আবেদন করেন।
আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন, যেন এই চিত্রনায়িকার জামিনের পক্ষে জমা দেওয়া ভিসা সংক্রান্ত নথি যাচাই করা হয়।

কারাগারে ২৪ ঘণ্টা
গতকাল আদালতের আদেশের পর নুসরাত ফারিয়াকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়।
তাকে গ্রেপ্তার ও হত্যাচেষ্টা মামলায় কারাগারে পাঠানো নিয়ে সমালোচনার মধ্যেই আজ মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ শোনা যায় নুসরাত ফারিয়ার জামিনের গুঞ্জন।
তার আইনজীবী মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন আদালতে আবারও জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনের কাগজ
কারাগারে জামিনের কাগজ পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেজে যায় দুপুর সাড়ে ১২টা। এরপর কাগজ যাচাই-বাছাই করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

যেভাবে বের হন কারাগার থেকে
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন নুসরাত ফারিয়া। এ সময় তার স্বজনরা অপেক্ষা করছিলেন কারাগারের বাইরে। আরও অপেক্ষা করছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
কিন্তু, কারও সঙ্গে কথা বলেননি নুসরাত। কালো কাঁচের প্রাইভেটকারে চেপে কারাগার এলাকা ছেড়ে যান তিনি।

জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফেসবুক পোস্ট
কারাগার থেকে বের হয়ে বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নুসরাত ফারিয়া লেখেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য আজ কথা বলতে পারিনি। সুস্থ হয়ে খুব দ্রুত ফিরে আসব আপনাদর মাঝে।
একই পোস্ট এডিট করে বিকেল ৪তা ৫৩ মিনিটে লেখেন, জীবনের সবচেয়ে মূমূর্ষু সময় পার করেছি এই দুইটা দিন। মানসিকভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলাম। তবে এই সময়টাতে যারা সর্বক্ষণ আমার পাশে ছিলেন সেসব মানুষদেরকে মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আমার সহকর্মী থেকে শুরু করে ইন্ডাস্ট্রির সবাই, এমনকি আপামর সাধারণ মানুষ যারা আমার হয়ে কথা বলেছেন, ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছেন, পাশে থেকেছেন তাদের এই সাপোর্ট/ভালোবাসা আমি আজীবন মনে রাখবো। আপনারা পাশে না থাকলে হয়তো এত দ্রুত আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পারতাম না।

সোচ্চার সহশিল্পীরা
নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তারের পর অধিকাংশ শিল্পী নীরব থাকলেও, তাকে কারাগারে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেন অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও এই শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হন তারা। সংস্কৃতি উপদেষ্টা ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী আজমেরী হক বাঁধন, তমা মির্জা, পরিচালক আশফাক নিপুণসহ আরও অনেকে ফেসবুকে নুসরাতের মুক্তি চেয়ে পোস্ট করেন।
Comments