৪০ বছর পর টপচার্টে ‘লাস্ট ক্রিসমাস’, তবে গানটি বড়দিনের নয়

ছবি: সংগৃহীত

বড়দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী অনেক আয়োজনই হয়ে থাকে। গোটা বিশ্ব এ দিনে সাজে লাল, নীল, সাদার ঝিকিমিকি বাতিতে। যুক্তরাজ্যের মিউজিকের টপ চার্টে টেইলর সুইফট ও সেলেনা গোমেজের মতো পপ তারকাদের গানের বদলে জায়গা করে নেয় ক্রিসমাসের গান।

তবে এবারের গল্প অদ্ভুত। ৪০ বছর পর যুক্তরাজ্যের টপচার্টের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে হোয়াম ব্যান্ডের গান 'লাস্ট ক্রিসমাস'।

বিবিসি রেডিও ওয়ানের ক্রিসমাসের অফিসিয়াল চার্টের এক নম্বরে অবস্থান করছে এই গানটি। আশি-নব্বই দশকের দর্শকপ্রিয় শিল্পী জর্জ মাইকেল ও এন্ড্রু রিজলির অমর সৃষ্টি এই গান। গানের লিরিকও লেখেন জর্জ মাইকেল।

শুধু এ বছর নয়, ২০১৫ সালে এই বড়দিন উপলক্ষে অস্ট্রিয়ার এক রেডিও জকি তার রেডিও অনুষ্ঠানে টানা ২৪ বার বাজিয়েছিলেন এই গান।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হোয়াম ব্যান্ড ও বিবিসি রেডিও ওয়ানের অফিসিয়াল পেইজ গানটির শীর্ষে অবস্থানের বিষয়টি একটি পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করে।

একই পোস্ট শিল্পী এন্ড্রু রিজল রিয়েক্ট করে শেয়ার করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, 'জর্জ বেঁচে থাকলে এই মুহূর্তে তার পাশেই অবস্থান করতেন, কেন না এত বছর পর অবশেষে তাদের গান ক্রিসমাস নম্বর ওয়ান অর্জন করেছে।'

'লাস্ট ক্রিসমাস' গানটি এর আগেও চার্টের শীর্ষে অবস্থান করেছিল। তবে সেগুলো ক্রিসমাস উৎসবের আশেপাশে। ২০২১ সালে গানটি নিউ ইয়ারের সময় শীর্ষে অবস্থান করে। তারপর আবার নেমে যায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আবারও শীর্ষে পৌঁছায় এই গান আর ২০২৩ সালে, গত দুই সপ্তাহ ধরে এক নম্বরে অবস্থান করছে 'লাস্ট ক্রিসমাস।'

চার্ট বিক্রির হিসেব করলে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় গান 'লাস্ট ক্রিসমাস'। এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে 'ব্যান্ড এইড' এবং প্রথম স্থানে আছে এড শিরানের 'শেপ অব ইউ'।

এন্ড্রু রিজল বলেন, 'এটা খুবই দুঃখজনক যে গানটি টপ চার্টে পৌঁছাতে এতদিন লেগেছে। ১৯৮৪ সালেই এটি শীর্ষে যাবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। ইউকে ক্রিসমাস টপ চার্টকে উদ্দেশ্য করে গানটি লিখেছিল মাইকেল। অবশেষে গানটি তার প্রাপ্য মূল্য পেল।'

হোয়ামের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা বার্তাটি শেষ করেন রিজল।

জর্জ মাইকেল তার স্কুল সময়ের বন্ধু এন্ড্রু রিজলের সঙ্গে ১৯৮১ সালে গড়ে তোলেন মিউজিক্যাল ব্যান্ড 'হোয়াম'। ১৯৮৪ সালে 'হোয়াম' প্রকাশ করে 'লাস্ট ক্রিসমাস' গানটি। বড়দিনে মুক্তি পাওয়া এই গান সে সময়ের যুক্তরাজ্যের টপচার্টে টানা ৫ সপ্তাহ ধরে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিল।

গানটিতে 'লাস্ট ক্রিসমাস' উল্লেখ থাকলেও গানটি আদতে ক্রিসমাসকে কেন্দ্র করে নয়। এটি একটি ব্যর্থ প্রেমের গল্প। কোনো এক ক্রিসমাসে প্রেম নিবেদন করেছিলেন প্রেমিক। বিচ্ছেদের এক বছর পর সেই ক্রিসমাসেই হয় তাদের দেখা। তাই ক্রিসমাস শুধু উপলক্ষ্য এখানে। বাবা-মায়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গানটি মাইকেল রচনা করেন বলে স্মুদ রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান এন্ড্রু রিজল।

তিনি বলেন, 'খাবার শেষ করে আমরা নিচেই বসে ছিলাম। মাইকেল ঘণ্টাখানেকের জন্য উপরের তলায় গেল। কিছুক্ষণ পরে উচ্ছাসিত হয়ে ফিরল সে যেন কোনো মুক্তার সন্ধান পেয়েছে।'

গানটি এতটাই জনপ্রিয় যে জর্জ মাইকেল ছাড়াও বিশ্বজুড়ে অনেক শিল্পী ৪০০ বারের বেশি গেয়েছে এই গান।

'হোয়াম' ব্যান্ড ভেঙে যায় ১৯৮৭ সালে। ২০১৬ সালে, ৫৩ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ারে নিজ বাড়িতে মারা যান জর্জ মাইকেল।

'লাস্ট ক্রিসমাস' প্রেমিকাকে দেওয়া ভালোবাসা আর সে ভালোবাসা প্রত্যাখানের গান। প্রতি বছর ঘুরে আসে বড়দিন সেইসঙ্গে ফিরে আসে এই দিনকে ঘিরে বিভিন্ন শিল্পীর গান। কিন্তু জর্জ মাইকেল তার 'লাস্ট ক্রিসমাসের' প্রতিটি শব্দ বুনেছিলেন বড়দিনের টপ চার্টের শীর্ষে যাওয়া মতো সম্মানের জন্যেই। ২০২৩ এর বড়দিনে তার এই আশাই যেন পূরণ হলো। যুক্তরাজ্যের টপচার্টের ঠিক চূড়ায় আছে প্রায় চার দশক আগে মুক্তি পাওয়া 'লাস্ট ক্রিসমাস'।

 

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

15h ago