বাকের ভাই-হিমুসহ হুমায়ূন আহমেদের আরও যত চরিত্র
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তাকে বলা হয় কথার জাদুকর। নাট্যকার হিসেবেও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চলচ্চিত্রকার হিসেবেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন। 'আগুনের পরশমণি' তার কালজয়ী সৃষ্টি।
তার লেখা 'বাকের ভাই' চরিত্রটি টিভি নাটকে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তার সৃষ্টি মীর্জা, হিমু, মিসির আলী, রূপা, মতিসহ অনেক চরিত্রই দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। জন্মদিন ঘিরে জানা যাক তার লেখা সিনেমা ও নাটকের আলোচিত কিছু চরিত্রের গল্প।
মতি
হুমায়ূন আহমেদের 'শ্রাবণ মেঘের দিন' চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মাঝে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছিল। ভাটি অঞ্চলের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমা ছিল হুমায়ূন আহমেদের অন্যতম সফল নির্মাণ। যদিও উপন্যাস হিসেবেই এটি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে, রূপালি পর্দায় মুক্তির পর আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এই সিনেমার অন্যতম প্রধান চরিত্র 'মতি'। মতি খুব গরিব মানুষ। সে-ও ভাটি অঞ্চলের মানুষ। মতি চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিদ হাসান। নতুন প্রজন্মের দর্শকরাও জাহিদ হাসানের অভিনয় মনে রেখেছেন। অন্যদিকে, জাহিদ হাসানের ক্যারিয়ারেও 'মতি' চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে এই সিনেমার 'কুসুম' চরিত্রটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন মেহের আফরোজ শাওন।
শুভ্র
হুমায়ূন আহমেদের পাঠকপ্রিয় উপন্যাস 'দারুচিনি দ্বীপ'। এই উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র 'শুভ্র'। চশমা ছাড়া চোখে দেখে না শুভ্র। সে খুব মেধাবী ছাত্র। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। এই উপন্যাস নিয়ে তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেছেন 'দারুচিনি দ্বীপ' সিনেমা। রূপালি পর্দায় শুভ্র চরিত্রে অভিনয় করেছেন নায়ক রিয়াজ। তবে, উপন্যাসের শুভ্রই বেশি মানুষের কাছে বেশি জনপ্রিয়-পরিচিত। শুভ্রকে নিয়ে বেশ কয়েকটি উপন্যাস রয়েছে এই লেখকের। প্রকাশ হয়েছে শুভ্র সমগ্রও।
বদিউল আলম
হুমায়ূন আহমেদের অসাধারণ সৃষ্টি বদিউল আলম, যিনি মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম নামে পরিচিত। এই লেখকের কালজয়ী সৃষ্টি 'আগুনের পরশমণি' উপন্যাসের চরিত্র বদিউল আলম। লেখক একসময় এই উপন্যাস অবলম্বনে নির্মাণ করেন সিনেমাও, যেখানে বদিউল আলম চরিত্রে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। বদিউল আলমের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। যারা চলচ্চিত্রটি দেখেছেন, চোখের পানি ফেলেছেন। দর্শকদের কাছে দারুণভাবে প্রশংসা পেয়েছে চরিত্র ও সিনেমাটি।
মিসির আলী
হুমায়ূন আহমেদের লেখা চরিত্রগুলোর মধ্যে মিসির আলী পাঠকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। যারা যুক্তির খেলা পছন্দ করেন, তারা জানেন মিসির আলী যুক্তি ছাড়া কিছু করেন না। সব সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি সময় নেন, চিন্তা-ভাবনা করেন এবং যুক্তি দিয়ে বোঝান। তারপর সমস্যার সমাধান করেন। সমস্যা সমাধানের জন্য তার কাছে অনেকেই ছুটে আসেন। তিনি অবশ্য পেশায় একজন শিক্ষক। টেলিভিশন নাটকে মিসির আলী চরিত্রে প্রথমে অভিনয় করেন গুণী অভিনেতা আবুল হায়াত। আর অনম বিশ্বাস পরিচালিত 'দেবী' সিনেমায় মিসির আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী।
বাকের ভাই ও মুনা
বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র 'বাকের ভাই'। এটিও হুমায়ূন আহমেদের লেখা। 'কোথাও কেউ নেই' নাটকের বাকের ভাই চরিত্রে অভিনয় করে আলোচিত হন আসাদুজ্জামান নূর। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি নিয়ে রাজপথে মিছিলও হয়েছে। দর্শকরা এই চরিত্রের জন্য প্রবল ভালোবাসা দেখিয়েছেন।
'কোথাও কেউ নেই' নাটকের আরেক আলোচিত চরিত্র মুনা। চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। খুব নিঃসঙ্গ একজন মেয়ে মুনা, প্রেমিকের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। একটা সময় বাকের ভাইয়ের প্রতি মুনার দুর্বলতা দেখা দেয়। বাকেরের বিপদে এগিয়ে যান মুনা। বাকেরের শেষ সময়েও পাশে থাকেন তিনি। ফাঁসির পরও মুনা ছাড়া কেউ বাকেরের পাশে থাকে না।
হিমু
হুমায়ূন আহমেদের লেখা চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন 'হিমু'। বিশেষ করে তার লেখা উপন্যাসে 'হিমু' বেশি প্রিয় পাঠকের কাছে। প্রতিবছর বই মেলায় পাঠকেরা অপেক্ষা করতেন কখন হিমুকে নিয়ে নতুন বই আসবে। এখনো হিমুর অপেক্ষায় থাকেন পাঠকেরা। কিন্তু আর কখনো নতুন হিমু আসবে না। তবে, নাটকে হিমু কম এসেছ। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক নক্ষত্রের রাতে হিমু চরিত্রটি ছিল। এই নাটকে হিমুর চরিত্রে অভিনয় করেন ফজলুল কবির তুহিন।
আনিস ও মতি
'আজ রবিবার' নাটকের কথা নিশ্চয়ই অনেকেরই মনে আছে। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই নাটকটি। এই নাটকে আনিস চরিত্রটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আনিস চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। নতুন প্রজন্মের দর্শকরাও আনিস চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত।
হুমায়ূন আহমেদের অনেক নাটকে 'কাজের লোক মতি' চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ফারুক আহমেদ। বিশেষ করে 'আজ রবিবার' নাটকে মতি চরিত্রে ফারুক আহমেদ অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া পান।
হুমায়ূন আহমেদের আলোচিত একটি ধারাবাহিকের নাম 'বহুব্রীহি'। দর্শকরা দারুণভাবে এই নাটকটি গ্রহণ করেছিলেন। 'বহুব্রীহি' নাটকে আনিস চরিত্রটি বেশ আলোচিত হয়। আনিস চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর।
অয়োময়ের মীর্জা ও এইসব দিনরাত্রির নীলু
বিটিভির সাদাকালো যুগে হুমায়ূন আহমেদের লেখা অনেক নাটকই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। তার মধ্যে 'অয়োময়' অন্যতম। নাটকটির মীর্জা চরিত্রটিও দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল দর্শকদের। এই চরিত্রেও অভিনয় করে সাড়া ফেলেন আসাদুজ্জামান নূর।
অপরদিকে, 'এইসব দিনরাত্রি' নাটকে নীলু চরিত্রটি সেই সময়ে বেশ সাড়া ফেলেছিল। দর্শকরা আজও নীলু চরিত্রের কথা মনে রেখেছেন। গুণী অভিনেত্রী ডলি জহুর এই চরিত্রে অভিনয় করেন।
এ ছাড়া, নান্দাইলের ইউনুস চরিত্রটিও বেশ আলোচিত হয়। নাটকটির নাম 'মাটির পিঞ্জিরা'। আসাদুজ্জামান নূর এই চরিত্রে অভিনয়ে করেন। 'দোতারা চাচা' চরিত্রে অভিনয় করেন চ্যালেঞ্জার। এরকম আরও অনেক আলোচিত চরিত্র লিখে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ, যা আজও মনে রেখেছেন দর্শকরা।
Comments