অভিনেত্রী থেকে নেত্রী: ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব তিনি

জয়া প্রদা
জয়া প্রদা। ছবি: সংগৃহীত

হিন্দি সিনেমার স্বর্ণালী যুগের অভিনেত্রী তিনি। তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালায়লম কিংবা বাংলা ভারতের অন্যান্য ভাষার সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। তিনি শুধু বড় পর্দায় রাজত্ব করেননি, নজর কেড়েছেন দাউদ ইব্রাহিমের মতো আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনদেরও। বর্তমানে তিনি ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের একজন।

তিনি জয়া প্রদা, যার নামের অর্থ জয় এনে দেন যিনি।

নামের মতো বাস্তবেও জয়া প্রদা প্রযোজকদের জন্য জয় এনে দিয়েছেন। আশির দশকে তার সিনেমা মানেই বক্স অফিস হিট। এই দশকে তার অভিনীত 'মাওয়ালি', 'তোফা', 'শারাবি' এগুলো সবই বক্স অফিসে সুপার হিট।

অভিনয়ের শুরু

জয়া প্রদা
জয়া প্রদা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজামুন্দ্রি জেলায় জন্মেছিলেন তিনি। বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ললিতা রানি রাও। বাবা কৃষ্ণ রাও ছিলেন তেলেগু চলচ্চিত্রের প্রযোজক আর মা নীলাবেণী ছিলেন গৃহবধূ।

মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ করেন ললিতা। সে অনুষ্ঠানে দর্শকদের সারিতে ছিলেন স্বনামধন্য অভিনেতা প্রভাকর রেড্ডি। ১৩ বছর বয়সী এই শিশুর নাচ দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে সঙ্গে সঙ্গে তাকে একটি সিনেমার গানে পারফর্ম করার কথা জানান। সেই সিনেমাটির নাম 'ভূমি কোসম', যা মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। তিন মিনিটের সে গানে পারফর্ম করেন ললিতা, বিনিময়ে পান ১০ রুপি।

এই ১০ রুপি ও তিন মিনিটের নাচের মাধ্যমেই সিনেমা জগতে তার যাত্রা শুরু। প্রভাকর রেড্ডি জয়াকে শুধু প্রথম সিনেমা এনে দেননি, সেইসাথে দিয়েছেন এক নতুন নাম 'জয়া প্রদা'।

জয়া প্রদার নামে তৈরি বিভিন্ন হাসপাতাল
জয়া প্রদার নামে তৈরি বিভিন্ন হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

এরপরের ৩০ বছর দক্ষিণের ললিতা রানি বলিউডসহ যেকোনো ইন্ডাস্ট্রির সিনেমায় জয়া প্রদা নামেই রাজত্ব করেন।

১৯৭৬ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বেশিরভাগ জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের একজন স্বনামধন্য তারকা হয়ে ওঠেছিলেন জয়া। ১৯৭৯ সালে তেলেগু সিনেমা 'সিরি সিরি মুভ্ভা'র হিন্দি রিমেক 'সরগম' সিনেমার মাধ্যমে বলিউডের রূপালী পর্দায় আসেন জয়া। একইসাথে এই সময় মারাঠি ও তামিল সিনেমাতেও কাজ করেছেন এই অভিনেত্রী।

'সিতা কল্যাণম' ও 'আডাভি রামুডু' তার সেসময়ের উল্লেখযোগ্য হিট সিনেমা। ১৯৮৪ সালে বলিউডের সর্বাধিক আয়কৃত অভিনেত্রীদের তালিকায় স্থান করে নেন জয়া। ধ্রুপদী ধাঁচের সৌন্দর্যের জন্য অজান্তা গুহার মূর্তিগুলোর সঙ্গে অনেকেই তার তুলনা করেছিলেন সেসময়।

জিতেন্দ্রর সঙ্গে জয়ার তোফা

জিতেন্দ্রর সঙ্গে জুটি বেঁধে একাধিক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন জয়া প্রদা। আশির দশকে মুক্তি পায় এই জুটির সিনেমা 'তোফা'। সিনেমাটি সেসময়ে আয় করে ৯ কোটি রুপি। এই সিনেমার 'তোফা লায়া' গানটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। মুক্তির চার দশক পরেও ভক্তদের মনে এখনো সতেজ এই গান।

শুধু জিতেন্দ্রর সঙ্গে নয়, রাজেশ খান্না ও অমিতাভ বচ্চনের মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাদের সঙ্গে সুপারহিট সিনেমা উপহার দেন তিনি। 'মাকসাদ' 'আজকা আর্জুন' 'থানেদার' তার এসময়ের হিট সিনেমা। এরমধ্যে বিগ বি'র সঙ্গে অভিনীত 'শারাবি' সিনেমার 'মুঝে ন লাক্ষা মানগাদে' ও 'দে দে পিয়ার দে' গান দুটি ব্যাপক হিট হয় এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পুরস্কারও জেতে।

শ্রীদেবীর সঙ্গে দ্বৈরথ

জয়া প্রদা ও শ্রী দেবী
জয়া প্রদা ও শ্রী দেবী। ছবি: সংগৃহীত

মাধুবালা ও নার্গিসদের পরে আশির দশকে বলিউডের প্রথম নারী মহাতারকা ধরা হয় শ্রীদেবীকে। অভিনয়ের পাশাপাশি জনপ্রিয় গানগুলোতে নাচের জন্যও বিখ্যাত ছিলেন শ্রীদেবী। আর একই ক্ষেত্রে নাম-ডাক ছিল জয়া প্রদারও। আবার দুজনেরই শুরু দক্ষিণী সিনেমা দিয়ে। তাই এই দুই অভিনেত্রীর মাঝে সবসময়ই একটি শীতল যুদ্ধ ছিল।

একবার একটি সিনেমার শুটিংয়ে জিতেন্দ্র ও রাজেশ খন্না মিলে এই দুজন অভিনেত্রীকে মেকাপ রুমে এক ঘণ্টার জন্য আটকে রেখেছিলেন। ধারণা করেছিলেন, এভাবে আটকে রাখলে তারা কথা বলবেন। কিন্তু এমনটা ঘটেনি। বড় পর্দায় বোনের ভূমিকায় অভিনয় করলেও, শুটিং শেষে আবার শীতল সম্পর্ক ছিল তাদের। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই দুজনের মধ্যে এই দ্বৈরথ ছিল। ঘটনাটি জয়া প্রদা সঙ্গীতভিত্তিক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো 'ইন্ডিয়ার আইডলে' বলেছিলেন।

বাংলাদেশি সিনেমায় জয়া

১৯৯৮ সালের ঈদুল আযহায় মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ–ভারতের যৌথ প্রযোজনায় মাল্টিস্টার সিনেমা 'আমি সেই মেয়ে'। বাংলাদেশের অভিনেতা আলমগীরের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন জয়া প্রদা।

আহমেদ শরীফ, কবিতার সঙ্গে আরও ছিলেন কলকাতার প্রসেনজিত, রঞ্জিত মল্লিক, বিপ্লব চ্যাটার্জী ও ঋতুপর্ণার মতো তারকা অভিনেতা। সিনেমার অন্যতম বিখ্যাত গান 'আগুনের দিন শেষ হবে একদিন' এখনো দর্শক হৃদয়ে স্থান করে আছে। এই গানে কণ্ঠ দেন কুমার শানু ও কবিতা কৃষ্ণ মূর্তী।

সম্মাননা

দু-দশকের ফিল্মি ক্যারিয়ারে তিনশ'র বেশি সিনেমায় অভিনয় করেন জয়া। তিনটি ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান এই অভিনেত্রী। এছাড়া আউটলুক ইন্ডিয়ার জরিপে সেরা ৭৫ অভিনেত্রীর মধ্যে স্থান করে নেন জয়া প্রদা।

জয়া প্রদা
জয়া প্রদা। ছবি: সংগৃহীত

রাজনীতিতে প্রবেশ

অন্যান্য তারকাদের তুলনায় বেশ আগেই রাজনীতিতে যোগ দেন জয়া। ১৯৯৪ সালে তেলুগু দেশম পার্টির হাত ধরে রাজনীতিতে যাত্রা শুরু করেন তিনি।২০০৪ থেকে ২০১৪ রামপুর কেন্দ্রের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি ও ২০১৯ সালে তিনি 'ভারতীয় জনতা পার্টি' বা 'বিজেপি'তে যোগ দেন এই অভিনেত্রী।

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

15h ago