পেনশন স্কিম জনপ্রিয় করতে চায় সরকার
দেশের সর্বস্তরের মানুষকে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা কাঠামোর আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম (ইউপিএস) জোরদারের পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, সম্প্রতি জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ (এনপিএ) পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় গ্রাহকের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে।
গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর অক্টোবরের মধ্যে জমানো অর্থের ওপর কমপক্ষে আট শতাংশ মুনাফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলার মোস্তফা বলেন, 'শুরুর বছরের আমানতের ওপর ভিত্তি করে মুনাফা সর্বনিম্ন ৮ শতাংশ হবে। অক্টোবরের মধ্যে প্রত্যেক হিসাবধারী নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে তার মুনাফার পরিমাণ দেখতে পারবেন।'
তিনি বলেন, প্রতি বছর জুনের মধ্যে এই হিসাব করা হবে এবং অক্টোবরের মধ্যে মুনাফা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, পেনশন কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান পেনশন স্কিমগুলো আরও আকর্ষণীয় করতে স্বাস্থ্য বিমা এবং এককালীন গ্র্যাচুইটি চালুর বিষয়টি বিবেচনার পরামর্শ দিয়েছে।
তারা জানান, ট্রেজারি বন্ড ছাড়া বিনিয়োগের জন্য আরও লাভজনক ও কম ঝুঁকিপূর্ণ খাত খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
এ বছরের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা এই চারটি পেনশন স্কিমে মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার গ্রাহক তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবং প্রায় ১৩১ কোটি টাকা জমা হয়েছে।
পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে নিরাপদ ও লাভজনক বিকল্প হিসেবে সরকারি ট্রেজারি বন্ডে ১২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন প্রকল্পের চারটি স্কিমের মধ্যে সমতা স্কিম সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং মোট গ্রাহকের ৭৮ শতাংশ এই স্কিমের। সমতা স্কিমের মাসিক কিস্তি এক হাজার টাকা।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক এম আবু ইউসুফ সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের এই প্রকল্পগুলোকে জনপ্রিয় ও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।'
পেনশন স্কিমের চারটি স্কিম নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, গ্রাহকের 'সংশয়' দূর করা ও তাদের আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেনশন কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে।
ওই বৈঠকে পেনশন কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালী করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে একটি পৃথক প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে এডিবির কাছে প্রস্তাব পাঠাতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে কাজ করতে পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে বোর্ড।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে ৩২০ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের খসড়া তৈরি করেছেন।
২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
অবকাঠামো, সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সুবিধা, জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ, পেনশন কর্তৃপক্ষের স্থায়ী অফিস স্থাপন, পরামর্শক নিয়োগ সবই এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যে এডিবির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছি এবং তারা এই প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।'
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বোর্ড বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের প্রগতি স্কিমে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই স্কিমটি বেসরকারি সংস্থার কর্মচারীদের জন্য চালু করা হয়েছে।
চারটি প্রকল্পের পাশাপাশি সরকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে প্রত্যয় নামে একটি পেনশন স্কিম চালু করেছিল।
তবে আগস্টের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে সরকার প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে দেয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই প্রকল্পটি পুনরায় চালুর কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।
Comments