জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৯ শতাংশ

বিদেশি ঋণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদেশি ঋণ ও বৈশ্বিক সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশের বিদেশি ঋণ পরিশোধ আগের বছরের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের মূল ও সুদ পরিশোধ করেছে এক দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে ছিল ৮৭০ মিলিয়ন ডলার।

ঋণের মূল পরিশোধ ৩১ শতাংশ বেড়ে ৬৮৫ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সুদের খরচ ১৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৪১ মিলিয়ন ডলার।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের 'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিকনীতি বিবৃতি (এমটিএমপি)' শীর্ষক প্রতিবেদন বলেছে, আগামীতে সুদ পরিশোধ ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে।

এতে আরও বলা হয়, ক্রমবর্ধমান বিদেশি ঋণের কথা মাথায় রেখে জাতীয় বাজেটের শতাংশ হিসাবে বিদেশি সুদ দেওয়ার অনুপাত ২০২১-২২ অর্থবছরে শূন্য দশমিক নয় শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দুই দশমিক ছয় শতাংশ হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উচ্চ সুদের হার ও বিদেশি ঋণের গ্রেস ও ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড কমে আসায় ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়াচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'গত এক দশকে বিদেশি ঋণের মূল ও সুদ বেড়েছে। সেই হিসাবে জাপানসহ সব বিদেশি ঋণ এখন ব্যয়বহুল।'

তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে এই বোঝা আরও বাড়বে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিগত সরকারের নেওয়া নির্বিচার বিদেশি ঋণের খেসারত দেশকে দিতে হচ্ছে।'

তার মতে, ঋণের বোঝা শিগগিরই কমবে না। অনেক বিদেশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ২০২৬ ও ২০২৭ সালে শেষ হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বলছে, ২০৩১ সালের পর ঋণের বোঝা কমবে।

'এ ছাড়া নতুন ঋণের সুদের হার না কমলে ঋণ পরিশোধের বোঝা কমার সম্ভাবনা নেই,' বলেও মনে করেন তিনি।

যেমন, সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) ইতোমধ্যে পাঁচ দশমিক তিন শতাংশ থেকে কমিয়ে চার দশমিক আট শতাংশ করা হয়েছে। তাই কম সুদে নতুন ঋণ দিয়ে বোঝা লাঘব করা যেতে পারে।

বিদেশি ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'অনেক উন্নয়ন প্রকল্প শিগগিরই মুনাফা না দিলে তা জাতির জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।'

এ প্রেক্ষাপটে তিনি জানান, গ্যাস সংযোগ পেতে দেরি হওয়ায় বিদেশি ঋণে তৈরি রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পকে 'সাদা হাতি' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, 'ক্ষমতাচ্যুত সরকার যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই বা অর্থনৈতিক আয়ের প্রাক্কলন না করেই অনেক প্রকল্প গ্রহণ করে।'

এমনকি প্রকল্প সাইট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের জড়িত করতেও তারা হিমশিম খেয়েছিল।

এ ছাড়াও, বিগত সরকার নিজেদের বা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে প্রকল্প খরচ আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।

'এখন আমাদের সেই ঋণের বোঝা বহন করতে হচ্ছে,' যোগ করেন সানেম নির্বাহী পরিচালক।

এ দিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বৈশ্বিক ঋণদাতা ও বহুপাক্ষিক অংশীদারদের ঋণ বিতরণ আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ কমে ৮৪৬ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

তিনি জানান, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধে খরচ চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তাদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে।

ঋণ কম দেওয়ার বিষয়ে তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন। তবে আশা করেন, আগামীতে ঋণ পাওয়ার পরিমাণ বাড়তে পারে।

এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ২১০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে জাপান। এ সময়ে উন্নয়ন সহযোগীরা ২৭ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি আগের বছরের একই সময়ে ছিল দুই দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার।

Comments

The Daily Star  | English
G7 statement on Israel Iran war

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Revolutionary Guards say missiles targeted industrial areas in Israel

11h ago