দায় পরিশোধ-রিজার্ভ বাড়াতে

৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ চায় সরকার

বিদেশি ঋণ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও রিজার্ভ বাড়াতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আট বিলিয়ন ডলার ঋণ খুঁজছে সরকার।

সম্প্রতি বন্যায় বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্বাসনের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক ঋণ পেতে কাজ করছে বাংলাদেশ।

প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিয়ে সরকার এরই মধ্যে এডিবিকে চিঠি দিয়ে বন্যা পুনর্বাসনের জন্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। তারা বিশ্বব্যাংকের কাছে বড় অঙ্কের অর্থ চাইবে, তবে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়নি।

বাজেট সহায়তার মধ্যে আইএমএফের কাছ থেকে তিন বিলিয়ন ডলার আশা করা হচ্ছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যে চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন—বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) কাছ থেকে সরকার পাঁচ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাইবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বিদেশি গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা আইএমএফের কাছে তিন বিলিয়ন ডলার চাইবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ঋণের জন্য ইতোমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য আইএমএফের স্টাফ মিশন আগামী মাসের শেষের দিকে বাংলাদেশ সফর করতে পারে। তখন বাড়তি ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএমএফের কাছে চিঠি দেওয়া হবে।'

আইএমএফ কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছেন, বিদ্যমান কোটার বাইরে গিয়ে তারা বাংলাদেশকে কত টাকা ঋণ দিতে পারে তা মূল্যায়ন করছে।

দেশ পালানোর সময় শেখ হাসিনা দেশের ঘাড়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার স্থানীয় ও বিদেশি ঋণ রেখে যান। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮৮ বিলিয়ন ডলার ও বাকি ৬৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, আগামী অক্টোবরে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভার সময় এই ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর অংশ নিতে পারেন।

গত বছরের জানুয়ারিতে অনুমোদনের পর থেকে আইএমএফ চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বব্যাংক ও এডিবি অর্থ উপদেষ্টা, জ্বালানি উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে। বৈঠকে বাংলাদেশ তাদের কাছ থেকে আরও বাজেট সহায়তা চেয়েছে। তবে পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সঙ্গে বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা তাৎক্ষণিক বাজেট সহায়তা হিসেবে এক বিলিয়ন ডলার চেয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান—নীতিভিত্তিক ঋণ, আঞ্চলিক তহবিল বা ধীরগতির প্রকল্প—এই তিন ব্যবস্থার আওতায় বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ পাওয়া যেতে পারে।

এ ছাড়াও, বাংলাদেশ এডিবির কাছ থেকে দ্রুত এক থেকে দেড় বিলিয়ন ডলার পেতে পারে। জাইকা ও এআইআইবি উভয়ই এডিবির সঙ্গে যোগ দিতে পারে বলে কর্মকর্তাদের ধারণা।

মুদ্রাস্ফীতির চাপ ও দুই বছর ধরে রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চলতি মাসের শুরুতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আইএমএফের বিপিএম-৬ এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত ২১ আগস্ট রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে ২০ বিলিয়ন ডলার।

গত মাসে মূল্যস্ফীতি অনেক ছিল। ভোক্তা মূল্য সূচক আগের মাসের তুলনায় এক দশমিক ৯৪ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত ১৩ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে।

দেশ পালানোর সময় শেখ হাসিনা দেশের ঘাড়ে ১৫৬ বিলিয়ন ডলার স্থানীয় ও বিদেশি ঋণ রেখে যান। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৮৮ বিলিয়ন ডলার ও বাকি ৬৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ।

আগের সরকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততায় আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ঋণ খেলাপির কারণে ব্যাংকিং খাত ভঙ্গুর পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান আর্থিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু দ্রুত ও কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব খাতে সংস্কার আনা হচ্ছে।

টাকা ও ডলারের বিপরীতে পলিসি রেট বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, ব্যাংকিং খাতের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাজেট সহায়তার জন্য এটি উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘদিনের পরামর্শ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে উন্নয়ন কর্মীরা আরও বেশি সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

Comments

The Daily Star  | English
Gen Z factor in geopolitics

The Gen Z factor in geopolitics and the Bangladesh-US dynamics

Gen Z should keep in mind that the US cannot afford to overlook a partner like Bangladesh given the country’s pivotal position in South Asia’s economic landscape.

10h ago