বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ৯ ঝুঁকি

আইএমএফ
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দেশের রিজার্ভ ও মূদ্রাস্ফীতিসহ সামষ্ঠিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় নয়টি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না হলে রিজার্ভের ওপর চাপের পাশাপাশি মূদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।

গত ২৪ জুন বাংলাদেশকে দেওয়া চার দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে এক দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।

বাংলাদেশের ঝুঁকিগুলো বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ।

এসব ঝুঁকির মধ্যে আছে—আঞ্চলিক সংঘাত তীব্রতর হওয়া, নিত্যপণ্যের দামে অস্থিরতা, আকস্মিক বৈশ্বিক মন্দা, আর্থিকখাতে অস্থিরত, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভাজন আরও গভীরতর হওয়া, ডলারের বিনিময় হার আরও উদারিকরণে ব্যর্থতা, ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কমাতে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যাওয়া।

আইএমএফের মতে, কোনো কোনো ঝুঁকি স্বল্পমেয়াদি। যেমন, আঞ্চলিক সংঘাত স্বল্পমেয়াদে বাংলাদেশকে উচ্চ ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

আঞ্চলিক সংঘাতের ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ যদি আরও তীব্র হয় তাহলে জ্বালানি, খাদ্য, পর্যটন, রেমিট্যান্স খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে, জ্বালানি ও খাদ্যশস্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।

এর কারণে কম আয়ের মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

সংস্থাটির দৃষ্টিতে আরেকটি স্বল্পমেয়াদে উচ্চ ঝুঁকি হচ্ছে—পণ্যের দামের অস্থিরতা। এটি দেখা দিলে চলতি হিসাবের ঘাটতি, আর্থিক সংকট, মুদ্রার বিনিময় হার ও রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বেড়ে যাবে।

সংস্থাটি কম আয়ের মানুষদের সহায়তা আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

অভ্যন্তরীণ ঝুঁকির মধ্যে নতুন বিনিময় হার ব্যবস্থায় বাংলাদেশ যদি বিনিময় হারে নমনীয়তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয় তাহলে মুদ্রাবাজারে ভারসাম্যহীনতা আরও বাড়বে। যা টাকাকে দুর্বল করে তুলবে।

রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

তাই আইএমএফ মুদ্রার বিনিময় হার পুনর্বিন্যাসের জন্য পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেছে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন ও গুজব মোকাবিলায় ইতিবাচক সুদের হারের পার্থক্য বজায় রাখতে মুদ্রানীতি কঠোর করার সুপারিশও করা হয়েছে।

গত ৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রার বিনিময় হার বেঁধে দেওয়ার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়। এটি প্রায় চার বছর পর ব্যাংকের সুদের হারকে বাজারমুখী করে তুলে।

দেশে যে পরিমাণ ডলার আসে তার তুলনায় বেশি ডলার বিদেশে চলে যাওয়ায় ২০২১ সালের আগস্টে যে রিজার্ভ ৪১ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার ছিল তা পরের বছর মার্চে ১৯ দশমিক আট বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত ৭ মার্চ পর্যন্ত ডলার বিক্রির নিট পরিমাণ ছিল সাত দশমিক আট বিলিয়ন ডলার।

রিজার্ভ দ্রুত কমে যাওয়ায় গত দুই বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমেছে ৩৫ শতাংশ।

আইএমএফের তথ্য বলছে—গত অর্থবছরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে, তার অর্ধেকই হয়েছে টাকার দাম অনেক কমে যাওয়ার কারণে। চলতি অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতি সাড়ে নয় শতাংশের বেশি।

আইএমএফের ভাষ্য, মধ্যমেয়াদে রপ্তানি আয় বাড়ানো ও রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্যকরণের নীতি বাস্তবায়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে তা রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

8h ago