দুই চাপে অর্থনীতি

নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ক্রমাগত ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমাচ্ছে। স্টার ফাইল ফটো

মুদ্রাস্ফীতি দুই অংকের দিকে যাওয়া এবং কোয়ার্টারলি জিডিপি প্রবৃদ্ধি বছরের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের ওপর বাড়ছে চাপ। সেইসঙ্গে সামনে আরও কঠিন সময়ের ইঙ্গিত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন যে মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাবিত করতে পারে এবং জনগণের ওপর চাপ কমাতে সাবধানতার সঙ্গে অর্থনীতি পরিচালনা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশে, যা তিন প্রান্তিকের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির।

ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাতে প্রবৃদ্ধির পতনই এর জন্য দায়ী।

২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে হয়েছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ।

গত মার্চে মূল্যস্ফীতি আগের মাসে কমার পর ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ক্রমাগত ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমছে।

ফলে জনগণের আয়ের সুযোগ ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যোগ করেন তিনি।

জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে শিল্পোৎপাদন ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেড়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০ শতাংশ।

২০২১-২২ অর্থবছরের একই প্রান্তিকে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। এমনকি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অন্যদিকে জিডিপির অর্ধেক অবদান রাখা সেবা খাত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে।

তবে অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৪ দশমিক ২২ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে আমদানি আরও কঠিন হয়ে পড়ায় উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে। যন্ত্রপাতি আমদানি করতে না পারলে উৎপাদনের গতি ধরে রাখা কঠিন।

তিনি বলেন, দেশের উৎপাদন খাত রপ্তানিমুখী এবং অভ্যন্তরীণ-উভয়মুখী। তিনি বলেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় চাহিদার অভাবে দেশীয় বাজারে উৎপাদন কমেছে।

জাহিদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সামগ্রিক পতনের পেছনে তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছেন: সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, আমদানি বিধিনিষেধ এবং দুর্দশাগ্রস্ত আর্থিক খাত।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা না যাওয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা প্রকট হয়ে উঠেছে, যার ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে আমদানি সীমিত করতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিক না হওয়ায় এ ধরনের সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া ভালো ঋণগ্রহীতারা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ পান না। পরিবর্তে, ঋণখেলাপিরা ঠিকই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সেটি পাচ্ছেন, তিনি বলেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, কম বিনিয়োগ এবং আমদানি বিধিনিষেধ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ করে উৎপাদন ও সেবা খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

তিনি বলেন, 'অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতির পেছনে বাইরের কারণের চেয়ে দেশীয় কারণই বেশি দায়ী।'

তিনি আরও বলেন, দেশের রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে শিপিং খরচসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়বে, বলেন তিনি।

তিনি বলেন, উত্তেজনা কতদিন থাকবে তার ওপর বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নির্ভর করছে।

এ প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারকে পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Built by expat brothers, rural factories send shoes abroad

In search of a better future, Md Selim and Hasanuzzaman Hassan migrated to the US roughly over three decades ago. The brothers eventually found success in construction business there but could not ignore the urge for contributing to their homeland. 

19h ago