পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর যশোর ও বরিশালে ফ্লাইট বন্ধের পথে

ঢাকা বরিশাল ফ্লাইট
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-বরিশাল রুটে ফ্লাইটের চাহিদা কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছে নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস।

যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় এই দুই এয়ারলাইনস বরিশালে ফ্লাইট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে এবং যশোরে ফ্লাইটের সংখ্যা প্রতিদিন এক বা দুয়ে কমিয়ে এনেছে।

নভোএয়ারের দুটি এটিআর-৭২ টার্বোপ্রপ উড়োজাহাজ নেপালের শীর্ষ অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠান ইয়েতি এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভ্যন্তরীণ এই দুই রুটে যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ কমে যাওয়ায় আমাদের সাতটি উড়োজাহাজের মধ্যে দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'পদ্মা সেতুর উদ্বোধন যশোর ও বরিশালে যাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ার মূল কারণ। মানুষ এখন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে এই জেলাগুলোয় যেতে পারছেন।'

এ ছাড়াও, সড়কপথে যাতায়াতের খরচ বিমান ভাড়ার তুলনায় অনেক অনেক কম।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্লেনের তুলনায় সড়কপথে বরিশালে যেতে ভাড়া অনেক কম লাগে। আবার সময়ও প্রায় কাছাকাছি। তাহলে কেন প্লেনে যাব।'

তার হিসাবে, ঢাকা বিমানবন্দরে যেতে সাধারণত প্রায় এক ঘণ্টা হাতে রাখতে হয়। আবার প্লেন ছাড়ার কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হয়। ফ্লাইটের সময় বিবেচনায় নিলে বরিশাল যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।

এয়ারলাইনস দুটির কর্মকর্তারা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, ঢাকা-বরিশাল রুটে চাহিদা কমে যাওয়ায় বারবার ফ্লাইট বাতিল করতে হতো। শেষমেশ ফ্লাইটই বন্ধ করতে হয়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক মাস আগে ২০২২ সালের মে মাসে যশোর বিমানবন্দর ৩৪ হাজার ২২৮ যাত্রী পরিচালনা করে।

২০২৩ সালের জুনে বিমানবন্দরটিতে যাত্রী সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৭৯৬ জনে।

২০২২ সালের মার্চে বরিশাল বিমানবন্দরে যাত্রী ছিল ১২ হাজার ১১৩ জন। ২০২৩ সালের জুনে তা কমে হয় চার হাজার ১৪৩ জন।

২০২২ সালের এপ্রিলে যশোর বিমানবন্দরে মোট ফ্লাইট পরিচালিত হয়েছিল ৯৩২টি। ২০২৩ সালের জুনে এই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৭২টিতে।

২০২২ সালের এপ্রিলে বরিশাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় ২৫৬টি। ২০২৩ সালের জুনে তা নেমে আসে ৯০-এ।

বর্তমানে দেশে সাতটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আছে।

এর আগে ঢাকা-যশোর রুটে প্রতিদিন সাত ও ঢাকা-বরিশাল রুটে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা।

এয়ারলাইনসটি বর্তমানে ঢাকা-যশোর রুটে প্রতিদিন দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

একইভাবে ঢাকা-যশোর রুটে নভোএয়ারের ফ্লাইটের সংখ্যা প্রতিদিন এক-দুয়ে নেমে এসেছে। আগে ছিল নয়টি।

নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান আরও বলেন, 'যশোরে যাত্রী প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এর আগে আমাদের সব ফ্লাইটে ৯০ শতাংশ আসন ভরে যেত। এখন ফ্লাইটের সংখ্যা কমানো হলেও আমরা মাত্র ৬৫ শতাংশ আসন ভরছে।'

সাতটি উড়োজাহাজ নিয়ে তারা প্রতিদিন প্রায় ৩০টি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবেন।

'এখন পর্যাপ্ত যাত্রীর অভাবে আমরা ১৫ থেকে ২০টির বেশি ফ্লাইট চালাতে পারছি না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'উড়োজাহাজ বসিয়ে রাখলেও অনেক খরচ। তাই অভ্যন্তরীণ রুটের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা দুটি উড়োজাহাজ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'

যশোর বিমানবন্দরের স্টেশন ম্যানেজার আবুল বাশার ডেইলি স্টারকে জানান, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা ছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়েছে।

তবে লোকসান হলেও ঢাকা-বরিশাল রুটে এখনো ফ্লাইট চালাচ্ছে জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি।

যাত্রীর সংখ্যা কম হওয়ায় এক পর্যায়ে এ রুটে ফ্লাইট স্থগিত করেছিল বিমান।

Comments

The Daily Star  | English
VAT changes by NBR

NBR revises VAT, SD on 9 items following public outcry 

NBR said it has slashed VAT on ready-made clothes, restaurants, sweets, non-AC hotels and motor workshops and mostly restored to the previous levels

1h ago