চিনি রপ্তানিতে ভারতের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কি বাংলাদেশে পড়বে?

ভারতের চিনি রপ্তানি
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-চাকতাই পাইকারি বাজার। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

গত কয়েক মাস ধরে বিশ্বব্যাপী চিনির দাম বাড়ছে এবং আগামী মৌসুমে ভারত রপ্তানি নিষিদ্ধ করলে এর মূল্য আরও বাড়তে পারে।

দেশের চিনি পরিশোধন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ধরনের যেকোনো নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। কারণ দেশে চিনির বার্ষিক ২০ লাখ টন চাহিদার ৯৮ শতাংশই পূরণ করা হয় আমদানির মাধ্যমে।

গত সপ্তাহে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ভারত সরকারের ৩টি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশটি অক্টোবরে শুরু হওয়া আখ মাড়াইয়ের জন্য পরবর্তী মৌসুমে চিনি রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে পারে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ার পরেই এই উদ্বেগ দেখা দেয়।

বৃষ্টির কারণে ভারতে আখের ফলন কমে যাওয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে, যা গত ৭ বছরের মধ্যে প্রথম।

বাংলাদেশের ৫টি বেসরকারি চিনি শোধনাগারের মধ্যে একটির পরিচালনা প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। এই শোধনাগারের চিনি শোধনের বার্ষিক সক্ষমতা প্রায় ৫০ লাখ টন।

আব্দুল মোনেম লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন মোনেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈশ্বিক চিনির বাজারে ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তাই তারা নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটির প্রভাব বিশ্বব্যাপী পড়বে এবং তা বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করবে।'

বিশ্বব্যাংকের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে চিনির দাম এর আগের বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেড়ে কেজিপ্রতি দশমিক ৫৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত ৬ মাসে চিনির দাম আরও বেড়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ ভারতসহ কয়েকটি অঞ্চলে ফসলের ক্ষতি ও বিশ্বের বৃহত্তম চিনি রপ্তানিকারক ব্রাজিলে ফসল কাটার ধীরগতির কারণে এবং চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

দেশের বাজারে কয়েক মাস ধরে রেকর্ড ১৪০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি হয়েছে। চিনি পরিশোধনকারী মিলগুলো মূল্য কিছুটা কমানোয় গত ২ সপ্তাহে চিনির দাম সামান্য কমেছে। তখন পাইকারি বাজারেও চিনির দাম কমেছে।

তবে গত ২ দিনে দাম আবারও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি আবুল হাসেম।

তিনি জানান, পাইকারিতে চিনি কেজিতে দেড় টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা বা তারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রোববার মিলগুলো ১২৬ টাকা কেজি দরে চিনি সরবরাহ করেছে বলেও জানান তিনি।

তবে, আবুল হাসেমের ভাষ্য, 'ভারত চিনি রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও আমাদের দেশে এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না।'

'কিন্তু, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকলে এবং মার্কিন ডলারের দাম যদি বাড়তে থাকে, তাহলে সরকার উদ্যোগ না নিলে স্থানীয় বাজারে চিনির দাম বাড়তে পারে।

মহিউদ্দিন মোনেমের ভাষ্য, ভারত চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এর প্রভাব দেশের বাজারে তেমন পড়বে না। কারণ বাংলাদেশ মূলত ব্রাজিল থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে।

'বাংলাদেশ চাহিদার ৮০-৯০ শতাংশ অপরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করে', বলেন তিনি।

মহিউদ্দিন মোনেম বলেন, 'আমাদের নির্ভরতা ব্রাজিলের ওপর এবং লাতিন আমেরিকার এই দেশে উৎপাদন বাড়লে ভারত রপ্তানি সীমাবদ্ধ করলেও আন্তর্জাতিক বাজারে সামান্য বা কোনো প্রভাবই পড়বে না।'

চলতি মাসের শুরুর দিকে রয়টার্স জানিয়েছে, ব্রাজিলের কেন্দ্র-দক্ষিণে ফসলের উৎপাদন আগের মৌসুমের ৩ দশমিক ৩৮ কোটি টন থেকে বেড়ে ৩ দশমিক ৮৭ কোটি টন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার এই উৎপাদন বেড়েছে।

বিশ্লেষকের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তবুও, বিশ্বব্যাপী চিনির উৎপাদন ২০২৩-২৪ সালের দ্বিতীয় মৌসুমে প্রত্যাশিত চাহিদার চেয়ে কম হবে। কারণ ব্রাজিলে রেকর্ড উৎপাদন হলেও অন্যান্য অঞ্চলে তা কমেছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) সিনিয়র সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়ে তারা ভারত থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছেন। পরবর্তীতে ভারত নিজেদের রপ্তানিসীমা ৬১ লাখ টন নির্ধারণ করায় তাদের কাছ থেকে আর আমদানি করা যায়নি।

তিনি বলেন, 'এরপর থেকে আমরা আমাদের অপরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করে আসছি। ব্রাজিলে ফসলের অবস্থাও ভালো।'

'তবে, সব ক্রেতারা যদি একজন সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাহলে তা দামকে প্রভাবিত করতে পারে। আমরা চিনি পাব। কিন্তু আমাদের বেশি দাম দিতে হতে পারে', বলেন তিনি।

ভোক্তাদের সুবিধার্থে রাজস্ব কর্তৃপক্ষের চিনি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর কথা বলেন তসলিম শাহরিয়ার।

তিনি জানান, সব মিলিয়ে চিনির ওপর মোট কর হার কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

সরকার শুল্ক কমালে চিনির দাম ধীরে ধীরে কমবে বলে জানান আবুল হাসেমও।

বাংলাদেশ বাণিজ্য ও ট্যারিফ কমিশনের উপ-প্রধান (বাণিজ্য নীতি) মো. মাহমুদুল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছি এবং পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করব।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh Bank new leadership

LC margin bar withdrawn for crisis-hit six banks

They are: IBBL, FSIBL, SIBL, Union, Global Islami, Bangladesh Commerce

19m ago