উপকরণ সস্তা, তবুও পোল্ট্রি ফিডের কেন দাম বেশি

পোল্ট্রি ফিডের দাম
বরিশাল শহরে পোল্ট্রি খামার। ছবি: টিটু দাস/স্টার

চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পোল্ট্রি ফিড তৈরির উপকরণের দাম কমলেও স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত ফিডের দাম কমছে না।

দেশের মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের প্রধান উৎস ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ার ৩ কারণের মধ্যে এটি একটি।

গত ১২ আগস্ট ঢাকায় ৩ দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ১০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি ১৮০ টাকায় পৌঁছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যে দেখা গেছে, বাদামি ডিমের দাম প্রতি ডজন ২০ টাকা বেশি হয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যা দিয়ে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির মাংস কেনা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন—অন্য ২ কারণের মধ্যে আছে ডিমের উত্পাদন কম হওয়া ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজার কারসাজি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের তথ্য অনুসারে, প্রতিকূল আবহাওয়া ও রোগব্যাধির কারণে চলতি আগস্টে দৈনিক ডিম উৎপাদন প্রায় ১০ লাখ কমে ৩ কোটি ৯০ লাখে দাঁড়িয়েছে।

পোল্ট্রি ফিডের উপকরণ ভুট্টা, সয়াবিন ও ধানের কুঁড়ার প্রায় ৭০ শতাংশ আমদানি করতে হয়।

বিশ্বব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সয়াবিন বিক্রি হয়েছে টনপ্রতি ৫১৯ ডলারে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম।

এ ছাড়াও, প্রতি টন ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ২৭৫ ডলারে। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ কম।

তবে দেশের ফিড মিল মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এফআইএবি) শুধু ভুট্টার দাম কমেছে বলে জানায়। এরা প্রতি বছর প্রায় ৭৫ লাখ টন থেকে ৮০ লাখ টন ফিডের চাহিদা পূরণ করে।

সংগঠনটির মতে, ভুট্টার দাম ১৫ শতাংশ কমলেও সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।

ফিড ব্যবসায়ীরা বলছেন, টাকা ও ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এবং মহামারির আগের সময়ের তুলনায় পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেও ফিডের দাম কমানো যাচ্ছে না।

গত জানুয়ারিতে ডলারের মূল্য এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে।

তবে একটি শিপিং এজেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে পণ্য পরিবহনের খরচ গত জুনে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে।

সাভারের কলমা ইউনিয়নের খামারি শাকিল আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক বছরে ৫০ কেজির বস্তা পোলট্রি ফিডের দাম ৩ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার ৪০০ টাকা হয়েছে।'

তার ভাষ্য, গত বছর যেখানে তিনি ৪০ হাজার টাকা মুনাফা করেছিলেন, এখন সেখানে তিনি মাত্র ১০ হাজার টাকা মুনাফা করতে পারছেন।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর বিবেচনায় ফিড কারখানার মালিকদের পক্ষে ফিডের দাম প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ফিডের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক নেই। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়া উচিত ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'স্থানীয় ফিডের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।'

এফআইএবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও প্রায় ৭০ শতাংশ ফিড উপকরণ আমদানি করতে হয় বলে টাকার অবমূল্যায়ন ও উচ্চ পরিবহন খরচ কারণে দেশের বাজারে ফিডের দাম কমানো যাচ্ছে না।'

পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্থানীয় পরিবহন খরচ, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম ও কর্মচারীদের মজুরি বেড়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য কারণও আছে বলে তিনি দাবি করেন।

মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, 'গত বছর পোল্ট্রি ফিড প্রস্তুতকারক ও খামারিরা এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ বছর তারা কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।'

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago