আগামী বাজেটে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য তেমন সুখবর নেই
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের দরিদ্র মানুষ। তবুও আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী কর্মসূচির বরাদ্দ খুব বেশি বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর জন্য বরাদ্দ হতে পারে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বাজেট ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
পরবর্তী অর্থবছরের জন্য পরিকল্পিত এই বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার চেয়ে কিছুটা বেশি। কিন্তু তা চলতি অর্থবছরের মোট বাজেট ৬ লাখ ৭৮ হাজার কোটির ১৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এ ছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বর্তমান বরাদ্দ জিডিপির (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, যা আগামী অর্থবছরে হতে পারে ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছিল, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে বেশি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল থাকায় বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি এতটা বেড়েছে, যার ফলে দেশে দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যার বেড়েছে।
সরকারের ১৪১টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি রয়েছে। আগামী অর্থবছরের পরিকল্পনা হচ্ছে বয়স্ক মানুষ, বিধবা ও নিঃস্ব নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো। এই সুবিদার আওতায় ভাতাপ্রাপ্তদের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, বয়স্কদের জন্য ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হবে এবং প্রায় ৫৮ লাখ সুবিধাভোগী থাকবে, যা বর্তমান সংখ্যার চেয়ে প্রায় ১ লাখ বেশি।
এতে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে ৭৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ফলে মোট বরাদ্দ ৪ হাজার ৩০৫ কোটি টাকায় দাঁড়াবে।
বিধবা ও নিঃস্ব নারীদের জন্য ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৫০ টাকায় উন্নীত করা হবে এবং সুবিধাভোগীদের তালিকায় আরও ১ লাখ নাম যুক্ত হবে। ফলে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা গিয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়াবে। এর জন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে ২১৬ কোটি টাকা। ফলে মোট বরাদ্দ ১ হাজার ৭১১ কোটি ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়াবে।
তবে, দরিদ্র প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা আগের মতো ৮৫০ টাকাই থাকবে। এই তালিকায় আরও ৫০ হাজার মানুষের নাম যুক্ত হবে। ফলে মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২৪ লাখ ১৫ হাজারে।
বর্তমানে প্রায় ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছে এবং এই সংখ্যাও বাড়বে।
ওএমএস (খোলা বাজারে বিক্রয়), ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) ও অন্যান্য কর্মসূচি, যা দরিদ্রদের খাদ্য কিনতে সহায়তা করে, সেগুলোর জন্য বরাদ্দ বর্তমান ১৯ হাজার কোটি টাকাই থাকবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির কর্মসূচির বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা করা হবে।
সরকার চলতি বছরের সামাজিক সুরক্ষা বরাদ্দের প্রায় ২৫ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারকে পেনশন দেওয়ার জন্য ব্যয় করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এটিকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে গণনা না করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি শুধু দরিদ্রদের জন্য।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যখন আইএমএফকে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী কর্মসূচির তথ্য সরবরাহ করবে, তখন তারা পেনশনের জন্য ব্যয় করা অর্থ তহবিল বাদ দেবে।
এসব বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার এই চ্যালেঞ্জ প্রায় কাটিয়ে উঠেছে।'
'মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন। এখন আমাদের লক্ষ্য সুবিধা বাড়ানোর পরিবর্তে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো', বলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুদ প্রদান ও ভর্তুকির মতো চাপের কারণে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে না।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ কম নয় বলে মনে করেন তারা।
Comments