৩ বছরে দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে বেসরকারি বিনিয়োগ

বাংলাদেশে চলমান অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে বিনিয়োগের অনুপাত কমেছে। অব্যাহত ডলার সংকট ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের চাহিদা কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া প্রাক্কলিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ-মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাত ০.৮৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

তিন বছরের মধ্যে এই অনুপাতের এটি দ্বিতীয় পতন।

সাধারণত, আগের বছরের তুলনায় একটি অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ অপরিবর্তিত থাকে বা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে ২০২০-২১ সালে এটি কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল।

মহামারি থেকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই অনুপাত ২০২১-২২ অর্থবছরে ০.৮২ শতাংশ পয়েন্ট বেড়ে ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়ায়।

মহামারি তুঙ্গে থাকা অবস্থায় বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ধস নামে এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম ছিল না। করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করার সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ায় এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিও উচ্চ প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে আসে। যার ফলে স্থানীয় ও বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে আমদানির পরিমাণ বেড়ে যায়।

কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপের মুখে পড়ে, যার ফলে বাংলাদেশ রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য কিছু আমদানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

রিজার্ভ এ বছরের ১৭ মে ৩০ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের একই দিনের ৪২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনের মতে, ডলার সংকট, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তার মধ্যে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ করতে পারেনি।

'যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন শিল্প ইউনিট স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল তারা ডলার সংকটের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়েছে', যোগ করেন তিনি।

রেমিট্যান্স ও রপ্তানিকারকদের আয় আমদানি বিল বৃদ্ধির প্রভাব কমাতে পারেনি। এ কারণে প্রায় ১ বছর ধরে ডলার সংকট অব্যাহত রয়েছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, চীন শূন্য-কোভিড নীতি নেওয়ার পর থেকে বিনিয়োগে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল, তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, 'অতীতে বিনিয়োগ-জিডিপি অনুপাত হয় স্থিতিশীল থাকত অথবা প্রবৃদ্ধি হত। এই অনুপাত কখনো কমেনি।'

উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ।

পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে এপ্রিলে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়েছে, যা গত বছরের একই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মত দেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কিছুটা বাড়াতে পারে, তবে সংকটের আগের পর্যায়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি কর্মসূচির ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া অর্থনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

'স্থবির বিনিয়োগ পরিস্থিতি জিডিপি এবং আমদানির প্রবৃদ্ধি হ্রাসেরও প্রতিফলন ঘটাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রাক্কলিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পেছনে ডলার সংকট, উচ্চমাত্রার মূল্যস্ফীতি এবং হতাশাজনক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ছাড়াও কাঠামোগত সমস্যাগুলিকে দায়ী করেন।

কাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে ব্যবসা করার ব্যয়, বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশের অনুপস্থিতি এবং কার্যকর ওয়ান স্টপ পরিষেবা না দিতে পারার ব্যর্থতা।

এপ্রিলে বিশ্বব্যাংক জানায়, মহামারির আগে প্রায় ১ দশক ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির প্রায় ২৩ থেকে ২৪ শতাংশে স্থবির ছিল। দক্ষ শ্রমের অভাব, অস্বচ্ছ নীতিমালা এবং সীমিত ঋণের প্রাপ্যতার বিষয়গুলো সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রণোদনার সুফলকে ছাড়িয়ে গেছে।

বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি, মূলধনি পণ্যের উচ্চমূল্য, অপ্রত্যাশিত অভ্যন্তরীণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থা, জ্বালানি ঘাটতি এবং আসন্ন নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগ স্থগিত করার প্রবণতা বেড়েছে।

সংক্ষেপিত। মূল প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন Private investment falls for second time in 3 years 

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান 

Comments

The Daily Star  | English

Five arrested in Chattogram for repackaging stolen phones with altered IMEI

A team of CMP also recovered 342 stolen mobile phones of various brands, six laptops, and a large amount of cash

16m ago