বাণিজ্য

ভারতীয় রুপিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এখনো সম্ভব নয়

যশোরের নওয়াপাড়ায় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য ট্রেন থেকে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। স্টার ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে পেমেন্ট করার জন্য ভারতীয় রুপির অনুমোদন দেয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার ক্ষেত্রে এখনো ভারতের মুদ্রা ব্যবহার করতে পারছেন না।

উদ্যোক্তারা জানান, যদি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রুপিতে বাণিজ্য শুরু হয়, তাহলে কমতে থাকা ডলারের রিজার্ভ ও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের চলমান অস্থিতিশীলতা কিছুটা হলেও কমে আসবে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলার থাকলেও গতকাল তা নেমে এসেছে ৩৬ দশমিক ৯৮ বিলিয়নে। আমদানি বিলের পরিমাণ রপ্তানি ও রেমিট্যান্সকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণেই মূলত এই নিম্নমুখী ধারা।

গতকাল ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ছিল ১০২ টাকা ৫৬ পয়সা। ১ বছর আগের তুলনায় এটি ২০ শতাংশ বেশি।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভারত থেকে আমদানি করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে শিল্প খাতের কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারি, তুলা, সুতা, কাপড় ও কেমিক্যাল আমদানি বাবদ ১৬ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।

অপরদিকে প্রতিবেশী দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ, ২ দেশ যদি স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য শুরু করে, তাহলে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে আসবে।

২৪ আগস্ট স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) একটি প্রজ্ঞাপন দিয়ে জানায়, তারা মার্কিন ডলার ও অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার পরিবর্তে টাকা ও রুপিতে এলসি খোলার অনুমতি দেবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এ মুহূর্তে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানির এলসি নিষ্পত্তির জন্য এসবিআইর পরিবর্তে অন্যান্য ব্যাংকের সেবা নিতে হবে।

তারা জানান, যতদিন বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় এলসির নিষ্পত্তি করার সুযোগ না দেয়, ততদিন পর্যন্ত এ পরিস্থিতি বিরাজ করবে।

১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাংলাদেশি ব্যাংকগুলো এখন থেকে ঋণপত্রের ক্ষেত্রে ও ব্যাংকের বিদেশি শাখার সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের লেনদেনের সুবিধার্থে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।

রুপি ও টাকায় ঋণপত্রের নিষ্পত্তি করার জন্য ২ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে একই ধরনের নির্দেশনা দিতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নোটিশ অনুযায়ী, স্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ১৮টি বিদেশি মুদ্রায় তাদের বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারবে।

এসব মুদ্রার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের ডলার, ইউরো, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড, সুইস ফ্রাঁ ও চীনের ইউয়ান অথবা রেনমিনবি।

এসবিআইর নোটিশে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকটি মার্কিন ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ব্যবহার করবে না।

দেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন হলে সবাই উপকৃত হবেন।

সব দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য টাকা ও রুপিতে করা সম্ভব না হলেও অন্তত ২ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য (বাংলাদেশের রপ্তানির সমতুল্য) স্থানীয় মুদ্রায় করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছেন ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমদ।

তিনি জানান, ২ দেশের বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য টাকা ও রুপির মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য একটি সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।

মাতলুব আহমদ আরও জানান, বর্তমানে বৈশ্বিক মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে মার্কিন ডলারে লেনদেন করতে গেলে বাড়তি খরচ হয়। এক্ষেত্রে নিত্যপণ্য কেনায় স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারে ইতিবাচক ফল আসতে পারে।

একইভাবে, সংকটের সময় রুশ রুবল বা চীনের ইউয়ান ব্যবহার করে ডলার রিজার্ভ ধরে রাখা যেতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, রুপি ও টাকায় বাণিজ্য পরিচালনা করার জন্য বেশ কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকেই এই প্রক্রিয়া চালু করতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ সতর্ক করে বলেন, 'ভারতের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ডলারের পরিবর্তে টাকায় লেনদেন করতে খুব একটা আগ্রহী নাও হতে পারে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

6m ago