পায়রা বন্দর: ডিসেম্বরে শুরু সড়ক পথে পণ্য পরিবহন
দেশের তৃতীয় বন্দর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাজে গতি বাড়ছে। কিছু কাজ এখনো বাকি থাকলেও বন্দরটি রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
পায়রা বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর শুরু হওয়া বন্দরের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট।
জাহাজ থেকে জাহাজে পণ্য নেওয়ার পদ্ধতিতে চালু হওয়া পায়রা বন্দরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ জাহাজ আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আসা জাহাজের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৪০টি।
চলতি বছরের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৪৮৪ বিদেশি জাহাজসহ তিন হাজার ১৬০ জাহাজ বন্দরে সফলভাবে পণ্য উঠানামা করেছে। রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় এক হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, এ বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে আছে চুনা পাথর, স্পুন পাইল, সিমেন্ট ক্লিংকার, স্টোন চিপস, প্ল্যান্ট মেশিনারি, মোটা পাথর, ড্রেজিং সরঞ্জাম, চূর্ণ পাথর, পিএইচপি পাইপ পাইল, ওপিসি ক্লিংকার ও এলপিজি।
বাবনাবাদ নদীর তীরে লালুয়ায় বন্দরের টার্মিনালের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রথম টার্মিনালের কাজ ৯৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। এখানে জাহাজ থেকে আমদানি করা পণ্য সরাসরি খালাস করে সড়ক পথে পরিবহনের জন্য আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতু করা হচ্ছে।
গত মার্চে শুরু হওয়া ৯৫০ কোটি টাকার সেতুর কাজ চুক্তি মোতাবেক চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ব্রিজ কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (সিআরবিজি) ও চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্টিটিউশন কর্পোরেশন (সিসিইসিসি) ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করবে।
আন্ধারমানিক নদীতে ফেরি দিয়ে আপাতত বন্দরের পণ্য সড়ক পথে পরিবহনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরেই সড়ক পথে পণ্য পরিবহন শুরু হবে। এতে বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি আরও আসবে বলেও আশাবাদী তারা।
পায়রা বন্দর ব্যবহারকারী 'রেডিয়েন্ট শিপিং এজেন্ট'র প্রধান নির্বাহী কাজী বেলাল উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ব্যাংকিং ও কাস্টমসসহ বন্দরের সব সুবিধা একই জায়গায় পাওয়া গেলে বন্দর ব্যবহারকারীরা আরও বেশি উপকৃত হবেন।
তিনি বলেন, 'এখন বন্দর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী শহরে কাস্টমস অফিসে কাজ সারতে হয়। এটা বিরক্তিকর। আমরা চাই বন্দরের সব সেবা যাতে একই জায়গায় পাওয়া যাক।'
'বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড ও রাস্তার কাজ এখনো শেষ হয়নি। পণ্য খালাসের জন্য ক্রেনও আনা হয়নি,' উল্লেখ করে এই প্রতিষ্ঠানের অপর কর্মকর্তা আবু সাইদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এগুলো দ্রুত শেষ হলে বন্দর ব্যবহারে মানুষ আরও বেশি আগ্রহী হবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'নব্যতা সংকট পায়রা বন্দরের বড় সমস্যা। ছয় বা সাত ফুট ড্রাফট জাহাজ এখানে আসতে পারে। বহির্নোঙ্গর থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করলে খরচ বেড়ে যায়। নব্যতা সংকট কাটাতে পারলে আমদানিকারকরা এই বন্দর ব্যবহারে লাভবান হবেন।'
দেশের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ এই বন্দর দিয়ে ভিয়েতনাম থেকে ওপিসি ক্লিংকার ও লাইমস্টোন আমদানি করে। পায়রা বন্দরের আউটার অ্যাংকোরেজে পৌঁছানোর পর লাইটার জাহাজে করে পণ্য সোনারগাঁওয়ের মেঘনাঘাটে আনা হয়।
মেঘনা গ্রুপের ইউনাইটেড শিপিং লাইনসের ম্যানেজার জামাল হোসেন জামিল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বন্দর দিয়ে ক্লিংকার ও লাইমস্টোন আমদানি করি। বন্দরের সুবিধা বাড়ানো হলে অন্যান্য আমদানিকারকরাও এই বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন।'
২০১৬ সালের ২ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পায়রা শুল্ক বন্দরকে কাস্টমস হাউস ও ওয়্যার হাউজিং ঘোষণা করে। এর আগের দিন বন্দরে প্রথম জাহাজ আসে।
আমদানি-রপ্তানি পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ১৯ সিঅ্যান্ডএফ ও ১১ শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স দেওয়া হলেও এখনো কাস্টমস হাউস তৈরি না হওয়ায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পটুয়াখালী শহরের ভাড়া বাড়িতে চলছে কাস্টমসের কাজ। ফলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
পায়রা বন্দরের কাছে ইটবাড়িয়ায় কাস্টমস হাউস ও অফিস-আবাসিক ভবনের জন্য ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট প্রায় ৪০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় এনবিআর। জমি অধিগ্রহণের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের সময় আপত্তি আসায় বিষয়টি আটকে যায়।
পরে গত ফেব্রুয়ারি পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে বানাতিপাড়ায় ৩৫ একর জমি বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলে ৩০ একর জমির অনুমোদন পাওয়া যায়। সেখানে কাস্টমস হাউস চালু হলে রাজস্ব আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কাস্টমস কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম।
পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। চলতি নভেম্বরে টার্মিনালের জেটি ও ইয়ার্ডের কাজ শেষ হবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে সড়ক পথে বন্দরের পণ্য পরিবহন শুরু করা যাবে।'
পায়রা বন্দরের আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতুর কাজ ৪৬ শতাংশ, জেটির কাজ ৯৭ শতাংশ, ইয়ার্ডের কাজ সাড়ে ৯৬ শতাংশ ও ছয় লেন রাস্তার কাজ ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে।
গত বছর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের কাজ।
'ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন' বলে আশ্বাস দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী।
Comments