হিলি দিয়ে প্রায় ১৭০ মেট্রিক টন ভারতীয় আলু আমদানি
প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও ভারতীয় আলু আমদানি শুরু হয়েছে৷ গত দুই দিনে প্রায় ১৭০ টন আলু আমদানি হয়েছে।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, রোববার ও সোমবার এই দুই দিনে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১৭০ মেট্রিক টন ভারতীয় আলু আমদানি হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, জানুয়ারির শেষ দিকে স্থানীয় বাজারে আলুর দাম কমে যায়। এতে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে আলু আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। কিন্তু, রমজানের আগে বাজারে আলুর দাম বাড়তে শুরু করে, তাই আবারও আলু আমদানি শুরু হয়েছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে ৪২ জন আমদানিকারক ভারত থেকে প্রায় ৩৪ হাজার মেট্রিক টন আলু আমদানির অনুমতি (আইপি) পান।
গত সপ্তাহে দিনাজপুরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি আলু বিশেষ করে হল্যান্ড, গ্রানোলাসহ অন্যান্য জাতের আলু বিক্রি হচ্ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। আর রোমানোসহ দেশি জাতগুলো বিক্রি হচ্ছিল ৪০ টাকার ওপরে।
কিন্তু, ভারতীয় আলু আমদানি শুরু হওয়ায় কেজিতে দাম কমেছে ৩ থেকে ৫ টাকা।
দিনাজপুর শহরের রেলবাজার কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম বলেন, 'কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এক কেজি হল্যান্ড জাতের আলু ৩০ টাকায় বিক্রি করছি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩৫ টাকা। এটা আমদানির প্রভাব।'
পাইকারি বাজারে এক কেজি হল্যান্ড জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ২৭ টাকায়।
এদিকে আলুর মৌসুমে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের কাজ চলছে পুরোদমে। দিনাজপুরের বিভিন্ন হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, হিমাগারের সামনে আলু বোঝাই শত শত যানবাহন জড়ো হয়েছে। জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ হিমাগারে আলু নেওয়া প্রায় শেষের দিকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তারা জানান, দিনাজপুরে ১৩টি হিমাগার রয়েছে, যেগুলো ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। রংপুর বিভাগে এ সংখ্যা প্রায় ১০২, যেখানে প্রায় ১০ লাখ টন আলু রাখা যাবে।
রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রংপুরের পাঁচ জেলায় ৯২ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে প্রায় আলু ২৩ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
একইভাবে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁওসহ তিন জেলায় ৭৯ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ১৯ লাখ ৮ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন হবে।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত বছরের শেষের দিকে প্রথমবারের মতো আলু আমদানির উদ্যোগ নেয় সরকার। পরে নভেম্বরের প্রথম থেকে আলু আমদানি শুরু হয়। তখন এক কেজি আলুর দাম বেড়ে হয়েছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে, আলু আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসে।
তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একাধিকবার রংপুরে বলেছিলেন, আগামী মৌসুমে আলু তোলা শুরু হলে দাম কমে আসবে।
তবে, আলুর দাম কমলেও তা ছিল সাময়িক। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে ২০ থেকে ২৫ টাকা দাম কমলেও তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
এদিকে আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দিনাজপুরসহ অন্যান্য জেলার আলু চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের কৃষক ইমতিয়াজ আলম জানান, তিনি ১২ একর জমিতে আলু চাষ করে ভালো লাভ করেছেন। প্রত্যাশিত গড় উৎপাদন পেলে লাভ আরও বেশি হতো।
তিনি বলেন, 'আবহাওয়া বিরূপ হওয়ায় উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে গেছে।'
সদরপুর গ্রামের চাষি খাদেমুল ইসলামও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, 'চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমি থেকে আলু পেয়েছেন ৩০০ বস্তা, এর মধ্যে ৫৫ বস্তা (৭৬ কেজি) হিমাগারে রেখেছি। পাঁচ বিঘা জমিতে উৎপাদন খরচ ছিল ৩ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আমার লাভ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা।'
Comments