সারাদেশে বিসিকের ৪৩৪ কারখানা হয় বন্ধ নয় সংকটে

বিসিক

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) সারাদেশে ৪৩৪ কারখানা এখন হয় সংকটে নয় বন্ধ।

বিসিকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারখানা মালিকদের আর্থিক সমস্যা, ঋণ খেলাপি হওয়া, মামলা সংক্রান্ত জটিলতা ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের কারণে এসব বরাদ্দকৃত কারখানা হয় সংকটে বা বন্ধ আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এসব কারণে বিসিকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওই কারখানাগুলো চালুর বিষয়ে অনেকগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।'

গত জুলাইয়ে বিসিকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, বিসিক জামদানি শিল্পনগরী ও গবেষণা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৫৪ প্লট সংকটে বা বন্ধ আছে। এরপর টঙ্গী শিল্প নগরীর ২৮ প্লট একই অবস্থা।

বিসিকের প্রতিবেদনে আরও জানা যায়—ফৌজদারহাটে ১৭, রাজবাড়িতে ১৭, কালুরঘাট সম্প্রসারণ অংশে ১৫, চৌদ্দগ্রামে ১৪, রাজশাহীতে ১৪, জামালপুরে ১৩ ও কিশোরগঞ্জে ১৩ কারখানা হয় রুগ্ন নয় বন্ধ।

১৯৫৭ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে 'ইপসিক' আইন পাশ হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে আইনটি পরিবর্তন করে বিসিক নাম দেওয়া হয়।

সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে বিসিক উন্নয়নমুখী ও জনকল্যাণমুখী নানান কর্মসূচি নেয় ও বাস্তবায়ন করে। দেশকে শিল্প সমৃদ্ধ করতে বিসিকের সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা আছে।

এদিকে একজন উদ্যোক্তা একটি প্লট ৯৯ বছরের জন্য বিসিক থেকে ইজারা নিতে পারেন।

সম্প্রতি বিসিকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্থিক সংকটের কারণে যে সব মালিক কারখানা চালু করতে পারছেন না তাদের জন্য বিসিক থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা না হলে ব্যাংক ঋণের জন্য সুপারিশ করা যেতে পারে।

বিসিকের তথ্য বলছে, সংস্থাটির মোট শিল্প প্লটের সংখ্যা ১২ হাজার ৩১১টি। এর মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১১ হাজার ২২৭টি। বরাদ্দকৃত প্লটে কারখানার সংখ্যা ছয় হাজার ১৩২টি। এর মধ্যে চালু আছে চার হাজার ৭১৯টি। বাস্তবায়নাধীন আছে ৯৭৯টি কারখানা। বরাদ্দের অপেক্ষায় এক হাজার ৮৪টি।

রাজবাড়ী বিসিক জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে জানান, গত পাঁচ থেকে ১০ বছর ধরে এখানে ১৭টি কারখানা হয় সংকটে নয় বন্ধ আছে।

এর মধ্যে আছে বস্ত্র ও পোশাক কারখানা, ইউনানি ওষুধ উৎপাদন এবং মসলা ও ডাল কারখানা।

তিনি আরও বলেন, 'দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ও বকেয়া পরিশোধ না করায় সম্প্রতি সাত প্লটের বরাদ্দ বাতিল হয়েছে।'

সংশ্লিষ্ট তিনজন লোকসানের কারণে ঋণ খেলাপি হয়েছেন। তারা ব্যবসা চালু করতে পারেননি।

বাতিল হওয়া প্লটগুলো এখন পুনরুদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুগ্ন ও বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে খাদ্য, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও ডাইং কারখানা আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'করোনার পর থেকে বেশ কয়েকটি কারখানা সংকটে পড়েছে বা বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের মালিকরা কারখানা চালুর চেষ্টা করছেন। কিছু ক্ষেত্রে খেলাপি ও মালিকানা জটিলতা আছে।'

তার ভাষ্য, ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় এসব বিষয় তোলা হয়েছে। পরের সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে।

দেশের আমদানি-বিকল্প পণ্যগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ বিসিকের কারখানায় উত্পাদিত হয়। প্রতি বছর এখান থেকে পণ্য রপ্তানি হয় ১১ শতাংশ।

বিসিকের শিল্প নগরী ও সমন্বয় শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক জিএম রব্বানী তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুগ্ন ও বন্ধ কারখানার সংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১০০ প্লট নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কিছু সমস্যা বেশ পুরনো। কিছু কিছু প্লট প্রতি বছর রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে যায়। আবার কিছু আইনি জটিলতাও আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কারখানা রুগ্ন হওয়ার পর যারা তা হস্তান্তর করতে চান তাদেরকে সহায়তা করি।'

এর পাশাপাশি রুগ্ন ও বন্ধ শিল্প প্লটের সমস্যা সমাধানে বিসিক শিল্পনগরী ও শিল্পপার্কে প্লট বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিসিক ৬৭ লাখেরও বেশি মানুষের কাজের সুযোগ করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে এ পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে।

বিসিক শিল্পনগরীতে কারখানাগুলোর মধ্যে আছে নিটিং ও তৈরি পোশাক, পোল্ট্রি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জামদানি ও হোসিয়ারি, ওষুধ, হালকা যন্ত্রপাতি, বৈদ্যুতিক, প্লাস্টিক ও রাসায়নিক পণ্য।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

9h ago