খাদ্য ও পণ্য উৎপাদনে দেশে হালাল সনদ নীতিমালা

ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হালাল পণ্য, হালাল খাদ্য, হালাল সনদ নীতিমালা, বাংলাদেশের হালাল খাবার,

শরিয়াহ্ সম্মত খাবার, ওষুধ ও কসমেটিকস পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সুবিধার্থে হালাল সনদ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে হালাল পণ্য তৈরি, রপ্তানি ও আমদানির ক্ষেত্রে সনদ ও সংশ্লিষ্ট লোগোর প্রয়োজন হবে।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, 'এই নীতিমালা হালাল সনদের জন্য একটি গাইডলাইন হবে। এটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সনদ দেওয়ার প্রথম নীতিমালা, ২০১৫ সালে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছিল।'

মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী বলেন, নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার আগে পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হয়েছে।

হালাল সনদ নীতিমালায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলেছে, তারা সরকারের পক্ষ থেকে কোম্পানিগুলোকে সনদ ও হালাল লোগো ইস্যু করবে। এই‌ সনদের মেয়াদ হবে এক বছর।

গত সপ্তাহে জারি করা নীতিমালায় বলা হয়েছে, তবে কারখানার মান বিবেচনায় মেয়াদ দুই থেকে তিন বছর বাড়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে পুনরায় অডিট করে সনদ নবায়ন করতে হবে। নবায়নের জন্য আগের সনদের কপিসহ আবেদন করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, হালাল সনদের মেয়াদকালে হালাল খাদ্য, পণ্য, উৎপাদন বাজারজাতকরণ, পরিবেশনের নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ আকস্মিক পরিদর্শন, পর্যালোচনা অব্যাহত রাখবে। প্রতি বছর একবার হলেও কারখানা পরিদর্শন করতে হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে,  খাদ্য, ভোগ্যপণ্য, প্রসাধনী ও ফার্মাসিউটিক্যালস তৈরি ও মোড়কজাতে শরীয়তে হালাল নয় এমন কোনো কাঁচামাল, উপাদান, উপকরণ, এডিটিভস ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না। খাদ্য বা তার উপাদান স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে।

তারা আরও বলেছে, পণ্য তৈরির ক্ষেত্রে গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রাকটিস ও স্ট্যান্ডার্ড স্যানিটেশন অপারেটিং প্রসিডিউর মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, এছাড়া খাদ্য প্রস্তুত, প্রক্রিয়াজাত, প্যাকেটজাত, মজুত বা পরিবহনের সময় হারাম বস্তু থেকে আলাদা রাখতে হবে। সেসব খাদ্য শরিয়াহ্ অনুযায়ী হারাম তার সঙ্গে হালার খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য রাখা যাবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ওষুধের ক্ষেত্রে উপাদান বিশ্লেষণ করে কেবল হালাল ও ঝুঁকিহীন হলে হালাল হিসেবে অনুমোদন করা হবে। হারবাল, ইউনানি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ হালাল সনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তারা আরও বলেছে, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হলে ও পরিশোধিতভাবে পরিবেশিত হলে তা হালাল হিসেবে গণ্য করা হবে। ওষুধের বাহন হিসেবে বা গুণগত মান ঠিক রাখতে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ অ্যালকোহল ব্যবহার করা যাবে।

এছাড়া সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট ও পারফিউমের মতো প্রসাধনী তৈরিতে চর্বি বা অন্য কোনো নিষিদ্ধ প্রাণীর অংশ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো কসমেটিকস দ্রব্য হালাল হিসেবে গণ্য হবে না।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন কারখানা ও কসাইখানার আকারের ওপর নির্ভর করে হালাল সনদ ও লোগোর জন্য বার্ষিক ফি জানিয়ে দিয়েছে।

যেসব ছোট কারখানায় এক থেকে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে, তাদের ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। পাঁচ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের কারখানার জন্য এই ফি দ্বিগুণ দশ হাজার টাকা এবং ৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা বড় কারখানার ক্ষেত্রে প্রায় ২০ হাজার টাকা ফি দিতে হবে।

এদিকে, কসাইখানার প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে ফি পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য হালাল সনদ ফি সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত হবে। দেশি হোটেলের জন্য এক হাজার এবং আন্তর্জাতিক হোটেলের জন্য দুই হাজার টাকা।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ১৭৯টি কোম্পানি আছে, যারা ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে হালাল সনদ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ১ হাজার ৮০০ পণ্য উৎপাদন করে বলে জানিয়েছেন মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী।

হালাল পণ্য তৈরি ও বিপণনের অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬২টি প্রতিষ্ঠান দুই শতাধিক পণ্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে।

তিনি বলেন, হালাল পণ্যের বৈশ্বিক বাজার তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি এবং ২০২৫ সালের মধ্যে তা সাত ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হালাল খাবার ও অন্যান্য পণ্যের বাজারের আকারের কোনো তথ্য নেই।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

5h ago