৫০ বছর পর আবারও যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম ‘যুদ্ধ’

যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম যুদ্ধ
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

সারা দুনিয়ায় ভীষণভাবে আলোচিত যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পর্কে ভিয়েতনামের কলেজ শিক্ষার্থী টাং লিন 'তেমন কিছুই' জানেন না। প্রায় দুই দশকব্যাপী চলা সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তার নানা-দাদা অংশ নিলেও ৫০ বছর পর তিনি তা নিয়ে তেমন আগ্রহীও নন।

১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়া সেই যুদ্ধে মার্কিনিদের পরাজিত করে ভিয়েতনামীরা। সেদিনের সেই বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে হো চি মিন সিটিতে আরও অনেকের মতো গালে নিজ দেশের পতাকার স্টিকার সেঁটে অংশ নেন টাং লিন।

আজ বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়—কালের পরিক্রমায় ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার গ্রহণ করেছে পুঁজিবাদ। এ ক্ষেত্রে তারা অনুসরণ করেছে প্রতিবেশী চীনকে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে ভিয়েতনাম হয়ে উঠেছে বৈশ্বিক পণ্য উৎপাদনকেন্দ্র। ক্ষেত্র বিশেষে, ভিয়েতনাম এখন চীনের বিকল্পও।

এক সময়ের চরম শত্রু থেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বন্ধের ৫০ বছর পর শুরু করেছে নতুন এক 'যুদ্ধ'। গত জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যসব দেশের মতো 'বন্ধু' ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এতে চাপে পড়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী অর্থনীতির এই দেশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভৌগলিকভাবে চীনের গা-ঘেঁষা ভিয়েতনাম এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন এক যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে। তবে আশা করা হচ্ছে, এই যুদ্ধ বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক পরাশক্তি হওয়ার রাশ টেনে ধরবে।

ভিয়েতনামে মধ্যক বয়স ৩৩ বছর। প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও চীনে তা ৪০ বছর। আর জাপানে তা ৫০ বছর। সেই হিসাবে ভিয়েতনাম এখনো তরুণদের দেশ।

টাং লিন বিবিসিকে বলেন, 'আমি এমন চাকরি চাই যা ভিয়েতনামের সাফল্য আরও বাড়িয়ে দেবে। এর সঙ্গে আমার সাফল্যও আসবে।'

আইন নিয়ে পড়ছেন মিন। তিনিও জীবনে 'সফল' হতে চান। হো চি মিন শহরে তিনি বিবিসিকে হেসে হেসে বলেন, 'ধনীও হতে চাই।'

মার্কিনিদের সম্পর্কে সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামের তরুণরা কী ভাবছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিনের ভাষ্য, 'আমরা তাদের ঘৃণা করি না। যা ঘটেছে তা অতীত। এখন আমরা আমেরিকার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে চাই। আমরা তাদের কাছ থেকে শিখতে চাই।'

গত জানুয়ারিতে ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির নতুন নেতা তো লাম দেশটির আমলাতান্ত্রিক খরচ কমানোর উদ্যোগ নেন। প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশে প্রদেশ ও পৌরসভার সংখ্যা ৬৩ থেকে কমিয়ে ৩৪ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সংখ্যা ৩০ থেকে কমিয়ে ১৭ করা হয়েছে। চলতি বছরেই এক লাখ সরকারি কর্মীকে বিদায় জানানো হচ্ছে।

পরে এমনটি দেখা যায় মার্কিন মুল্লুকে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বন্ধু ইলন মাস্ককে দায়িত্ব দেন সরকারি খরচ কমানোর।

যা হোক, ভিয়েতনাম চায় সিঙ্গাপুরের মতো 'মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ' থেকে বেরিয়ে আসতে। চায় ধনী দেশ হতে। দেশটি পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য খুলে রেখেছে নিজেদের দুয়ার।

এখন ভিয়েতনামের সামনে দুইটি রাস্তা খোলা—হয় আমেরিকা নয় চীন। কিন্তু, ভিয়েতনামের প্রয়োজন দুই দেশকেই। ভিয়েতনাম জোর দিচ্ছে 'সামনে এগিয়ে চলা'র ওপর।

দুই সপ্তাহ আগে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয়। দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করতে ইতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়। তবে বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখছে হ্যানয়।

অর্থনৈতিক পরামর্শক লিসা ইউ বিবিসিকে বলেন, 'আমাদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে হবে। আমরা ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এখানকার মানুষের জীবন অনেক উন্নত হয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল করতে আমেরিকানদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।'

কিন্তু, ঠিক ৫০ বছর পর ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্কযুদ্ধ ভিয়েতনামীদের আশা কতটা পূরণ করতে তা ভবিষ্যৎই বলবে।

Comments

The Daily Star  | English

Fakhrul calls for unity among parties to restore democracy

Says empowering people through elections is the shared responsibility of all political forces

42m ago