চট্টগ্রাম

শুল্কছাড়ে খেজুরের বাড়তি আমদানি, দামও কম

ঢাকার কারওয়ান বাজারে একটি খেজুরের দোকান। ছবি: পলাশ খান/স্টার

পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরে শুল্কছাড়ের কারণে গত বছরের তুলনায় এবার আমদানি বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি। এতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় পণ্যটির দাম প্রজাতি ও মানভেদে প্রতি কেজিতে কমেছে ৪০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম 'সহনীয়' থাকার কারণ শুল্কছাড়ের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম কম থাকা। এছাড়া এ বছর আমদানিকারকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় খেজুরের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলা সম্ভব হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছর খেজুর আমদানিতে যুক্ত ছিলেন ৫৮ জন। এবার তা অন্তত ১৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

এনবিআরের তথ্য অনুসারে, দেশে আমদানি করা খেজুরের ৮০ শতাংশই আনা হয় রোজার তিন মাস আগে। সে হিসেবে এবার ডিসেম্বরের শুরু থেকে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫৮ শতাংশ অর্থাৎ আড়াই গুণ বেশি খেজুর আমদানি হয়েছে।

এবার তিন মাসে দেশে খেজুর এসেছে ৪৬ হাজার ১২৩ মেট্রিকটন। এর আর্থিক মূল্য ৮৩৩ কোটি টাকা। গত মৌসুমে এর পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮২৬ মেট্রিকটন, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৪০১ কোটি টাকা।

পাশাপাশি এ দফায় খেজুর আমদানিতে সরকারের রাজস্ব এসেছে ৩২১ কোটি টাকা। গত মৌসুমের একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২১২ কোটি টাকা। এ হিসেবে এবার খেজুর আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১০৯ কোটি টাকার বেশি।

আমদানির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি খেজুর আসে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। এছাড়া তিউনিসিয়া, মিসর, জর্ডান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকেও খেজুর আমদানি হয়।

চলতি বছরের শুরুতে কাস্টমস ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি শুল্কায়ন মুল্যও মানভেদে ৮-২৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। ফলে এ বছর খেজুরের আমদানি ব্যয় ২০-২৫ শতাংশ কমেছে বলে জানান আমদানিকারকরা।

আমদানিকৃত খেজুর থেকে শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে পাঁচ স্তরের শুল্কায়ন মূল্য নির্ধারণ করেছে এনবিআর। সর্বনিম্ন স্তরের খেজুর ৭৫ সেন্ট থেকে শুরু করে ভাল মানের খেজুর ৩.৭৫ ডলারে শুল্কায়ন হয়। যা গত বছর ছিল এক থেকে চার ডলার পর্যন্ত।

তবে গত বছর এনবিআর প্রতি ডলার ১১০ টাকা দরে শুল্কায়ন করেছিল। এ বছর তা করা হচ্ছে ১২০ টাকা দরে। এক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় ডলারের দাম ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় শুল্কহারেও এর প্রভাব পড়ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় শুল্কহার যে হারে কমেছে, সে তুলনায় শুল্ক তেমন কমেনি।

গত ২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আল ওয়ালিদ এন্টারপ্রাইজের ২৫ টনের একটি আজওয়া খেজুরের চালান খালাসের সময় সরকারকে প্রতি কেজি খেজুরে শুল্ককর দিতে হয়েছে ১৭০ টাকা করে।

একই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গত বছরের একই সময়ে একই মানের খেজুরের একটি চালান খালাস করে ২০৮ টাকা শুল্ককর দিয়ে।

অর্থ্যাৎ এবার শুল্ককর কমানোর কারণে প্রতি কেজি খেজুর আমদানিতে অন্তত ৩৮ টাকা কম ব্যয় হয়েছে।

ওয়ালিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবদুল ওয়াদুদ জানান, 'সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খেজুরের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন আমদানিকারক। তবে এ বছর শুল্ক ছাড়ের কারণে আরও বেশি ব্যবসায়ী বাজারে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছেন। ফলে আমদানি বেড়েছে এবং দামও তুলনামূলক কম রয়েছে।'

এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, 'আগের বছরগুলোতে দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে কোনো মার্জিন সুবিধা দিত না। কিন্তু এ বছর আমদানিকারকরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খুলতে সক্ষম হয়েছেন।'

এলসি খোলার ক্ষেত্রে মার্জিন সুবিধা আমদানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি খেজুরের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাহায্য করেছে বলেও মন্তব্য করেন আবদুল ওয়াদুদ।

চট্টগ্রামে খেজুরের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরেও দেখা গেছে, সরবরাহ বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় সব ধরনের খেজুরের দাম তুলনামূলক কম।

চট্টগ্রামের ফলমন্ডির পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল বাশার ডেইল স্টারকে বলেন, বর্তমানে সৌদি আরবের মাবরুম খেজুর প্রতি কেজি গড়ে ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর বিক্রি হয়েছিল ১৩০০-১৪০০ টাকায়।

একইভাবে অন্যান্য খেজুরেও দাম কমেছে ৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত । বর্তমানে আজওয়া খেজুর মানভেদে প্রতি কেজি ৬৫০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিসর থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি মেডজুল খেজুর এবার বিক্রি হচ্ছে ৯০০-৯৭০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য খেজুর মানভেদে ২৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ী আবুল বাশার।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা ও কলেজ শিক্ষক মনসুর নবী বলেন, 'গত বছরের তুলনায় এবার খেজুরের দাম কম। তবে ভোজ্যতেল, আটা ও চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি।'

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

Asset quality reviews by international auditors KPMG and Ernst & Young have revealed that six Shariah-based banks in Bangladesh are in a dire financial state, with non-performing loans (NPLs) skyrocketing four times greater than previously reported.

5h ago