যে পথে দেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান

যে পথে দেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। প্রতীকী ছবি: প্রবীর দাস/স্টার
যে পথে দেশি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান। প্রতীকী ছবি: প্রবীর দাস/স্টার

রাজধানী ঢাকার দূরত্ব মাপা হয় সময়ের বিবেচনায়, কিলোমিটারের হিসাবে নয়। বলা হয়, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে কত মিনিট বা কত ঘণ্টা লেগেছে। কখনো বলা হয়, তীব্র যানজটে পুরো সকাল বা সন্ধ্যা কেটে গেছে। এ শহরের দুই কোটির বেশি মানুষকে রাস্তায় নেমে প্রতিদিন ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়।

এই ক্রমশ জটিল সমস্যার সমাধানে দেশে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের জন্ম হবে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই সমস্যা মোকাবিলায় দেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হচ্ছে 'পাঠাও'। ২০১৫ সালে এই স্টার্টআপের যাত্রা শুরুর পর তা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

'পাঠাও' নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ঢাকার বাসিন্দাদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্য। শহরের রাস্তা-অলিগলির গোলকধাঁধায় বিশৃঙ্খলভাবে যান চলাচলের মধ্যেও গন্তব্যে পৌঁছে দিতে সহায়তা করা এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।

বিশ্বব্যাংক 'ক্যান উই বিল্ড আউট অব ঢাকা আউট ট্রাফিক কনজেশন?' প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই 'পাঠাও'র প্রতিষ্ঠাতারা সক্রিয় হয়ে উঠেন। তারা এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজেননি। বরং তারা কাজের মাধ্যমে সমাধানের পথ দেখিয়েছেন।

'পাঠাও'র দুই বছর আগে তথা ২০১৩ সালে 'চালডাল' নামে আরেকটি স্টার্টআপ গ্রাহকসেবা নিয়ে আসে। কীভাবে সহজে নিত্যপণ্য কেনা যায় এর পথ দেখানো হয়।

এ ছাড়াও, একই বছরে খাবার সরবরাহের স্টার্টআপ 'ফুডপান্ডা' তরুণ-প্রযুক্তিপ্রেমী গ্রাহকদের ঘরে রেস্তোরাঁর খাবার সরাসরি পৌঁছে দিয়ে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।

প্রতিভাবান তরুণদের হাতে শুরু হওয়া মুদি দোকান, খাবার ও যাতায়াতের এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।

বিদ্যমান সমস্যা উদ্ভাবনী উপায়ে সমাধান ও দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া—এই দুই প্রধান বৈশিষ্ট্যের ব্যবসায়িক ধারণা স্টার্টআপ হিসেবে পরিচিত।

আজ এক দশক পর ঢাকায় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন যিনি একবারের জন্যও ফুডপান্ডা বা পাঠাও ব্যবহার করেননি।

তবে এই স্টার্টআপগুলো কি সত্যই সফল?—এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া কঠিন। তারা কি প্রচুর টাকা আয় করতে পারছে? এক বিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারছে?

স্টার্টআপ তহবিলের বাস্তব পরিস্থিতির খোঁজ রাখা প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্সের দৃষ্টিতে, দেশি স্টার্টআপগুলো তুলনামূলক ভালো কাজ করছে। দেশে এক হাজার ২০০-র বেশি সক্রিয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান আছে। প্রতি বছর আরও ২০০ প্রতিষ্ঠান বাজারে আসছে।

কিন্তু, দেশে এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান 'বিকাশ'। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্টার্টআপ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে বাজারে আসে।

তাহলে কেন অন্য স্টার্টআপগুলো সেবা বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে? তাদের কি সাফল্যের জন্য আরও সময় বা অনুকূল পরিবেশ দরকার?

অনেক পথ বাকি

প্রায় এক দশকের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হতে ও গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে বেশ লড়াই করে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা এর জন্য বাজারের সীমাবদ্ধতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিগত বাধা ও অবকাঠামোগত সমস্যাকে দায়ী করেছেন।

ই-কমার্স, খাবার সরবরাহ, লজিস্টিকস, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ডিজিটাল কনটেন্টের মতো জনপ্রিয় খাতগুলোয় গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটিরও কম থাকায় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার সীমিত।

লাইটক্যাসল পার্টনার্সের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কারণ প্রথম ছয় মাসে দেশে স্টার্টআপ তহবিল ৬৬ শতাংশ কমে সাড়ে ৪৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২০১৩ সাল থেকে গত এক দশকে দেশের স্টার্টআপগুলো সম্মিলিতভাবে ৪০০টিরও বেশি চুক্তির মাধ্যমে ৯৮৯ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।

স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ও ছোট ব্যবসার তহবিল ও অর্থায়নের ব্যবস্থা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল (ভিসি) এই সময়ের মধ্যে ১৭১ চুক্তির মাধ্যমে ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে।

এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। মোট তহবিলের ৯২ শতাংশ তাদের।

প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এই পরিমাণ খুবই কম। ২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে ভারতে স্টার্টআপ তহবিল ৫৩ দশমিক এক শতাংশ বেড়েছে। আগের বছরের চার দশমিক নয় বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে তা সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার হয়েছে। গ্লোবালডেটার তথ্য নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এই সংবাদ জানিয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশে বিনিয়োগ কমেছে।'

তার মতে, 'বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী সতর্ক অবস্থায় থাকায় স্টার্টআপগুলো কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। তারা হয়ত আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।'

'টাকার বিনিময় হার কম হওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন। তাদের আশঙ্কা, টাকার মান কমে যাওয়ায় তাদের বিনিয়োগের দাম কমে যাবে। ইতোমধ্যে অনিশ্চিত পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে সার্বিকভাবে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ইতিবাচক নয়।'

তিনি আশা করেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব সংকট শেষ হবে। কারণ বিনিয়োগের বিষয়ে বেশ কয়েকটি আলোচনা চলছে।

ফাহিম মাশরুর মনে করেন, 'রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে। এটি স্টার্টআপগুলোর পরিধি ও বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন সুযোগের দুয়ার খুলে দিতে পারে।'

ফিনটেকের প্রতিশ্রুতি

দেশে স্টার্টআপ তহবিল আকর্ষণের প্রধান খাতগুলোর মধ্যে আছে ফিনটেক, ই-কমার্স, লজিস্টিকস, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা।

অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে যাওয়ায় মোবাইল আর্থিক পরিষেবা ও ডিজিটাল ব্যবস্থায় টাকা পরিশোধের সুযোগ ফিনটেকের বিস্তার ঘটিয়েছে।

তবে, এই খাতগুলোর কোনোটিই বাজার সম্প্রসারণ, সার্বিক ব্যবস্থার উন্নয়ন বা তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।

ফিনটেকের ক্ষেত্রে কয়েকটি স্টার্টআপের প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে 'বিকাশ' শীর্ষে।

২০২১ সালে সফটব্যাংকের ভিশন ফান্ড টু এই প্রতিষ্ঠানে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ২০ শতাংশ শেয়ার নেয়। প্রতিষ্ঠানটির দাম প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। দেশে ফিনটেক খাতে এটি বিশাল মাইলফলক। তবে বিকাশ নিজেকে স্টার্টআপ মনে করে না।

মোবাইলে আর্থিক সেবা দেওয়া অপর প্রতিষ্ঠান 'নগদ' এই খাতকে কলঙ্কিত করেছে। মাত্র পাঁচ বছরে নয় কোটি গ্রাহককে আকৃষ্ট করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখন বিতর্কিত।

'পে লেটার' ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঠাও দেশে প্রথম পণ্য কেনার পর টাকা দেওয়ার সুযোগ করে দেয়।

অন্যান্য ফিনটেক স্টার্টআপগুলো আর্থিক সংকটে আছে। এখনো তেমন তহবিল সংগ্রহ করে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হতে পারেনি।

আত্মবিশ্বাসের অভাব

২০২১ সালে দেশের ই-কমার্স খাতে ভাঁওতাবাজি শুরু হওয়ায় এই খাত এখন গ্রাহকদের আস্থার অভাবে ভুগছে। আর্থিক প্রতারণার কারণে বিনিয়োগ করা হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত পেতে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন অসংখ্য গ্রাহক।

আর্থিক কেলেঙ্কারি এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো ছিল। ২০২১ সালের শুরুতে গ্রাহকরা বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ায় বিনিয়োগ পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।

২০২১ সালের মাঝামাঝি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের সামনে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির আর্থিক কেলেঙ্কারির সংবাদ চলে আসে। সম্পদের তুলনায় গ্রাহকদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির দায় অনেক বেড়ে যায়। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় ইভালির ত্রুটিপূর্ণ ব্যবসায়িক মডেল ইঅরেঞ্জ, কিউকম, ধামাকাসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের কেলেঙ্কারিও সামনে চলে আসে।

ফলে, হাজার হাজার গ্রাহক তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েন। এই খাতে এখনো নামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনা ও ব্যবসা বাড়ানোর সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

পিকাবুর প্রধান নির্বাহী মরিন তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভুয়া ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম থেকে গ্রাহকরা টাকা ফেরত না পাওয়ায় এই খাতের প্রতি তাদের আস্থা অনেক কমেছে।'

'অনেকে এখন ই-কমার্সকে প্রতারণার প্ল্যাটফরম হিসেবে বিবেচনা করছেন। ফলে গ্রামে ই-কমার্স বিস্তার ঘটাতে পারেনি।'

নতুন পথে লজিস্টিক স্টার্টআপ

মরিন তালুকদার আরও বলেন, 'লজিস্টিক সংকট পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। নির্ভরযোগ্য লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও পেশাগত অদক্ষতা আছে। যেমন, গ্রাহকের কাছে একটি টেলিভিশন পাঠাতে চার দিন পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।'

এ ছাড়াও, নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় গ্রাহক কম থাকায় অনেকের ব্যবসা মন্দা।

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো শহরকেন্দ্রিক। মফস্বল ও গ্রামে গ্রাহকদের মধ্যে ভয় ঢুকেছে। ফলে প্রবৃদ্ধি আরও কমেছে। বাজার ধীরগতিতে বাড়ছে। ইলেক্ট্রনিক পণ্যের বিক্রি কম।

এত সংকট সত্ত্বেও লজিস্টিক স্টার্টআপগুলো এফ-কমার্সের উত্থানকে কাজে লাগিয়ে ও নারীদের নেতৃত্বে ছোট ছোট ব্যবসাগুলোর সমর্থন নিয়ে প্রসার লাভের চেষ্টা করছে।

স্টার্টআপগুলো সব জায়গায় পণ্য সরবরাহ ও পণ্য দেওয়ার পর টাকা নেওয়ার পরিষেবা দেওয়ায় ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজার বড় হওয়ার সুযোগ হয়েছে।

ই-কুরিয়ারের প্রধান নির্বাহী বিপ্লব জি রাহুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের প্রবৃদ্ধি ই-কমার্সের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। সামাজিকমাধ্যম এই খাতকে বাঁচিয়ে রেখেছে।'

ই-কমার্সে মন্দার কারণে লজিস্টিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। তবে, দেশে লজিস্টিক খাতের সম্ভাবনা অনেক। এই খাতটি গ্রাহকদের চাহিদা ওপর নির্ভর করছে।

'চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার মতো শহরে সহজে পণ্য পাঠানো গেলেও প্রত্যন্ত গ্রামে পণ্য পাঠাতে এখনো ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার বেশি লাগে। দক্ষতার সঙ্গে সব জায়গায় পণ্য পাঠানোর জন্য উন্নত পরিকাঠামো দরকার।'

স্বাস্থ্য-শিক্ষা খাতে বিশাল সুযোগ

ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ও সহজে সেবা পাওয়ার চাহিদা ক্রমে বেড়ে যাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্যসেবায় স্টার্টআপ খাত ধীরে ধীরে চাঙ্গা হচ্ছে।

স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো টেলিমেডিসিন, ডায়াগনস্টিকস ও সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক পরিষেবায় প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, গ্রামে স্বাস্থ্যসেবা তেমন জোরদার না থাকায় অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রসার ঘটছে।

প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সিলভানা কাদের সিনহা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু প্রযুক্তি দিয়ে স্বাস্থ্যসেবার সংকট মোকাবিলা করা যাবে না। আসল সমস্যাটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং বা ওষুধের দোকানে যাওয়া নয়; এটা আস্থার বিষয়।'

তার মতে, দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতি রোগীদের আস্থার অভাব আছে। অনেককে বিদেশে চিকিৎসা নিতে হয়। প্রযুক্তি দিয়ে গুণগত মান বাড়ানো যেতে পারে, তবে আস্থা তৈরির জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও রোগের নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা জরুরি।

বাংলাদেশে শিক্ষাবিষয়ক স্টার্টআপগুলোর সম্ভাবনা অনেক থাকলেও এই খাতে প্রবৃদ্ধি কম।

'শিখো'র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শাহির চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৯ সাল থেকে বাজার ভালো থাকলেও মোবাইল ইন্টারনেটের খরচ বেশি ও তহবিলের অভাবের মতো সংকটগুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'দেশে গ্রাহক চাহিদার পাশাপাশি মেধাও আছে। এখন প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আর্থিক সংগতি।'

তিনি জানান, ২০২৩ সালে ভারতের ১০ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় দেশের এডটেক খাতে তহবিল খুবই কম। বাংলাদেশ এডটেকের জন্য মাত্র ১৭ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। এর ৯৮ শতাংশেরও বেশি তহবিল এসেছে বিদেশ থেকে।

ডিজিটাল সেবার প্রসারে দরকার নীতিগত সমর্থন

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর নিয়মনীতিও বাজারের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। টেলিকম লাইসেন্সিং ও কর্পোরেট নীতির কারণে ইন্টারনেটের খরচ বেশি এবং সংযোগও সীমাবদ্ধ।

ডিজিটাল অবকাঠামোর স্বল্পতা ও ডেটা শেয়ারিং নীতিমালার কারণে আর্থিক খাত সীমাবদ্ধ হয়ে আছে।

'পাঠাও'র প্রধান নির্বাহী ফাহিম আহমেদ বলেন, 'এপিআই বা ডেটা শেয়ারিংয়ের জন্য দাম নির্ধারণ করা হয়নি বলে ডেটা পরিচালনায় স্টার্টআপগুলোকে বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে।'

তিনি মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি-সংস্কার জরুরি।

সঠিক তথ্য পাওয়া আরেকটি চরম সংকট। 'সেবা প্ল্যাটফর্ম'র প্রধান নির্বাহী আদনান ইমতিয়াজ হালিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিয়ে সরকারের পরিসংখ্যানে ভুল তথ্য পাওয়া যায়। কম দামে মোবাইল ফোন, গ্রামে গতিশীল ইন্টারনেট সংযোগ ও ডেটা খরচ কমাতে হবে।'

তিনি প্রচলিত ব্যবসা ও গ্রাহকদের প্রযুক্তি গ্রহণে প্রণোদনা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

মূল সংকট সম্পর্কে 'চালডাল'র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ওয়াসিম আলিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোট ছোট সমস্যার কারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। একটি স্টার্টআপের জন্য জনপ্রিয়তা হারানো মারাত্মক হতে পারে। এটি প্রতিষ্ঠানের সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করে।'

'ছোট ছোট সমস্যাগুলো আমাদের পরিকল্পনাকে বাধাগ্রস্ত করে। তখন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ি।'

ইতিবাচক দিক সম্পর্কে তিনি বলেন, 'দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী থেকে মেধাবীরা এগিয়ে আসতে পারেন। একবার পুরো প্রক্রিয়াটি সুশৃঙ্খল হয়ে গেলে আমরা বিশ্ব-পরিবর্তনকারী উদ্যোগ তৈরির লক্ষ্য নিতে পারবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Reform commission reports provide framework for new Bangladesh: Yunus

Earlier this morning, the chiefs of four reform commissions submitted their reports to the chief adviser

55m ago