শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিলেন পোশাক কারখানার মালিকরা

ছবি: স্টার

কারখানায় উৎপাদনে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা এবং টিফিন ও রাত্রিকালীন ভাতা ১০ টাকা বাড়ানোর বিষয়ে একমত হয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকরা।

আজ মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান।

ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চার উপদেষ্টা, ইউনিয়ন নেতা এবং বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

শ্রমিকদের ১৮টি দাবির সবগুলোই মেনে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়।

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ায় আগামীকাল থেকে শিল্পাঞ্চলগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভূঁইয়াও শ্রমিকদের আগামীকাল থেকে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান।

শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি

ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের এই ১৮ দফা দাবি হলো—

১. সব পোশাক কারখানায় শ্রমিকের বিদ্যমান হাজিরা বোনাস হিসেবে অতিরিক্ত ২২৫ টাকা, রাত ৮টার পর বিদ্যমান টিফিন বিলের সঙ্গে ১০ টাকা এবং নাইট বিল ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ১০০ টাকা করা হবে।

২. আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে সব কারখানায় সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

৩. আপাতত শ্রমঘন এলাকায় টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা। এ ছাড়া, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিকেও শ্রমঘন এলাকায় সম্প্রসারিত করা। শ্রমিকদের জন্য স্থায়ী রেশন ব্যবস্থার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হবে।

৪. আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে শ্রমিকের সব বকেয়া মজুরি বিনা ব্যর্থতায় দিতে হবে। অন্যথায় শ্রম আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৫. বিজিএমইএ থেকে বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করে শ্রমিকদের হয়রানির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে একটি টেকনিক্যাল টিম পর্যালোচনা করে অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন প্রদান করা হবে।

৬. ঝুট ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব, চাঁদাবাজি বন্ধসহ শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়ে একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৭. ২০২৩ সালের মজুরি আন্দোলনসহ এর আগে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলাগুলো রিভিউ করে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। মজুরি আন্দোলনে নিহত চারজন শ্রমিকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৮. কাজের ধরণ অনুযায়ী নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা হবে।

৯. জুলাই বিপ্লবে শহীদ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সেবার জন্য শ্রমিক নেতারা একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে। প্রাপ্ত তালিকা প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের 'জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে' পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে।

১০. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গঠিত কমিটি অক্টোবর ২০২৪ এর মধ্যে করণীয় বিষয়ে সুপারিশ করবে। প্রাপ্ত সুপারিশের আলোকে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১১. শ্রম আইন অনুযায়ী সকল কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন নিশ্চিত করা হবে।

১২. অন্যায় ও অন্যায্যভাবে শ্রম আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না।

১৩. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ করা হলো।

১৪. শ্রমিক ও মালিক পক্ষের ৩ জন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত অতিরিক্ত সচিবের (শ্রম) নেতৃত্বে একটি কমিটি নিম্নতম মজুরির বিধি-বিধান ৬ মাসের মধ্যে সক্ষমতা পর্যালোচনা করবে।

১৫. শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) পুনরায় সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সকল স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকের সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করা হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে।

১৭. কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিষয়ে পর্যালোচানার জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে শ্রমিক ও মালিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পন্ন অন্যান্য দেশের উত্তম চর্চার আদলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৮. নিম্নতম মজুরি পুন:নির্ধারণ কমিটি বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সক্ষমতা ও করণীয় বিষয়ে আগামী নভেম্বরের মধ্যে একটি সুপারিশ করবে।

Comments

The Daily Star  | English

1,500 dead, nearly 20,000 injured in July uprising: Yunus

He announced plans to demand the extradition of deposed dictator Sheikh Hasina from India

1h ago