ইপিবির দ্বিগুণ গণনায় রপ্তানি তথ্যে গরমিল

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোয় তৈরি পোশাক পণ্যের পরিমাণ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দুইবার হিসাব করায় রপ্তানি তথ্যে ১৪ বিলিয়ন ডলার বেশি দেখা গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে সহযোগিতার ঘাটতিকেও তথ্যগত অসামঞ্জস্যতার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি রপ্তানির হিসাবে অসঙ্গতি সংশোধন করেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রকৃত রপ্তানি ইপিবির আগে প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার কম।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি ছিল ৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশোধনের পর তা ১৩ দশমিক আট বিলিয়ন ডলার কমে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

ইপিবি যে ভুলটি করেছিল তা হলো—ইপিজেডের কারখানারগুলোর রপ্তানি দুইবার গোনা হয়েছে। প্রথমে ইপিজেড থেকে স্থানীয় কারখানাগুলোয় পাঠানোর সময়। পরে রপ্তানিকারকদের কাছ থেকে জাহাজিকরণের সময়।

গতকাল সোমবার রাজধানীর শেরাটনে হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসিবি) বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ডিজিটালকরণ বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে সালমান এফ রহমান এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা অংশ নেন।

কাটিং, মেকিং ও ট্রিমিং বা সিএমটি হিসেবে পরিচিত পোশাক তৈরির প্রক্রিয়ায় বিক্রয়াদেশের ক্ষেত্রে ইপিবি কাপড় ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক পণ্যের দাম গুনেছে। যদিও এটি শুধু কাপড় কাটা, সেলাই ও পোশাক তৈরির খরচ বিবেচনা করার কথা ছিল।

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, 'সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়েছে। আশা করা যায় যে ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর এটি সমাধানে এক সঙ্গে বসবে।'

তিনি মনে করেন, ডিজিটালকরণে দেশ অনেক এগিয়েছে। বাংলাদেশ এখন কিউআর কোডভিত্তিক পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার কথা ভাবছে।

প্রতিপক্ষের দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুধু বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করে না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো আরও রক্ষণশীল হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক নিয়ম বজায় রাখছে।

আইসিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট একে আজাদ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য তুলে ধরে বলেন, '২০২২ সালে মোট ২৫ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য বাণিজ্যের মধ্যে গড়ে ৩৬ নথি ও ২৪০ কপি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।'

তাই তিনি কাগজবিহীন লেনদেনকে উৎসাহিত করার জন্য জাতীয় কমিটি গঠনের আহ্বান জানান। এর ফলে দক্ষতা বাড়বে এবং ব্যবসার খরচ কমবে।

'হ্যাকিং ঝুঁকির সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্যের ডিজিটালকরণ এসেছে,' উল্লেখ করে আইসিসিবির সদস্য কুতুবউদ্দিন আহমেদ জানান, তার অফিসের সফটওয়্যার হ্যাকড হয়েছে। হ্যাকাররা মুক্তিপণ হিসেবে অনেক টাকা দাবি করেছে। তাদেরকে টাকা না দিয়ে তিনি ম্যানুয়ালি নথিপত্র উদ্ধার করেছেন।

তার মতে, শুরুতে বাধা থাকলেও বাণিজ্য ডিজিটালকরণের বিষয়ে জনগণকে শিক্ষিত করা জরুরি।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, 'বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বাণিজ্যে ১৭০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২৯তম। ভিয়েতনাম ও তুরস্কের মতো প্রতিযোগী দেশগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ৭২ ও ৬৬তম।'

তার মতে, ডিজিটাল বাণিজ্যের এমন খারাপ অবস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক, রাজস্ব বোর্ড ও ইপিবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানির ভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরছে।

আইসিসিবি এক বিবৃতিতে বলেছে, রপ্তানি তথ্য ডিজিটাল করা হলে বিশ্ববাণিজ্যে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

গোলটেবিল বৈঠকে সঞ্চালনার সময় আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ডিজিটালকরণ দক্ষতা ও বাজার বাড়ানোর পাশাপাশি খরচ কমায়।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতি বছর জাহাজগুলো প্রায় সাড়ে চার কোটি বিল অব লেডিং ইস্যু করে। এটি গুরুত্বপূর্ণ শিপিং ডকুমেন্ট। অনেক আন্তর্জাতিক শিপিং ডকুমেন্ট এখনো মানসম্মত নয়। বেশিরভাগই খাতাকলমে কাজ করে। শারীরিক যোগাযোগের দরকার হয়।'

ইলেকট্রনিক বিল অব লেডিং (ইবিএল) ব্যবহার করলে কার্গো হ্যান্ডলিং ও ডকুমেন্ট প্রসেসিংয়ে প্রশাসনিক খরচ কমানোর পাশাপাশি ডিজিটাল অথেনটিকেশনের মাধ্যমে জালিয়াতির ঝুঁকি কমবে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, 'বাণিজ্যের কার্যকর ডিজিটালকরণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে। উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার সম্প্রসারণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।'

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিসির ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড ইনিশিয়েটিভের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পামেলা মার।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

13h ago