বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

ব্যবসায়ে ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারে পিছিয়ে বাংলাদেশ

ডিজিটাল প্রগ্রেস অ্যান্ড ট্রেন্ডস রিপোর্ট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ইন্টারনেট, দক্ষিণ এশিয়া, বিশ্বব্যাংক,
ফাইল ছবি

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্ধেকেরও কম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ব্যবহার করে। ওই প্রতিবেদনে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ব্যবসায়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থানের চিত্র উঠে এসেছে।

ডিজিটাল প্রোগ্রেস অ্যান্ড ট্রেন্ডস রিপোর্ট-২০২৩ অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র ৪৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ব্যবহার করেছে এবং ৫০ শতাংশ কোম্পানির ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।

ব্রাজিল, চিলি, জর্জিয়া, ভারত, কোরিয়া, পোল্যান্ড ও ভিয়েতনামের প্রায় ১০০ শতাংশ কোম্পানির ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারে একটি কম্পিউটার ছিল।

অন্যদিকে বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো ও ইথিওপিয়ার মাত্র অর্ধেক প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইন্টারনেটের নিম্ন গতির কারণে কিছু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের কোম্পানিগুলোর ঘন ঘন ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়।

ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ইন্টারনেট সেবা প্রায়ই বিঘ্নিত হয়, ফলে কোম্পানিগুলোর প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যায়।

'বাংলাদেশে প্রতি মাসে গড়ে সাতবার ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়। এ ধরনের ঘন ঘন বিঘ্ন ব্যবসায়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতিতে অন্যান্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে কঠিন করে তোলে।'

ফলে, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের জন্য দেশের অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এছাড়া সরকার 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' রূপকল্প অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে।

২০১৯ থেকে ২০২২ সময়কালে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা ব্যবহারে পিছিয়ে ছিল, যেখানে দেশের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মাত্র সাত শতাংশ ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা ব্যবহার করেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ৩৪ শতাংশ কোম্পানির ওয়েবসাইট রয়েছে এবং ২৩ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে ৩৯ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

এই হার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তুলনায় বেশি হলেও ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের মতো প্রতিবেশী এবং সমকক্ষ অর্থনীতির তুলনায় কম।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, সরকার ডিজিটাল ডিভাইস ও ডাটা কানেকটিভিটি যথেষ্ট সস্তা করতে পারেনি। ট্যাক্স ও ভ্যাট কাঠামো সহায়ক হলে মোবাইল ডেটা সস্তা হতে পারে। এছাড়া বড় শহরগুলোর বাইরে ইন্টারনেটের মান খুবই খারাপ।

তিনি করেন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বাস্তব দিকটি উঠে এসেছে।

'এর অন্যতম প্রধান কারণ বাংলাদেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের এবং বেশিরভাগেরই কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট ব্যয়ে বিনিয়োগের জন্য অর্থ খরচের সক্ষমতা কম।'

এ ছাড়া এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত স্বল্পমূল্যের সফটওয়্যার সলিউশন নেই বলেও জানান ফাহিম মাশরুর।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে এবং এসব দেশের জনসংখ্যার গড়ে ৫৬ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

দক্ষিণ এশিয়ায় এই গড় হার ৪২ শতাংশ। এ থেকে বোঝা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার গড় হারে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রায় ৫১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার সবচেয়ে কম। এমনকি আফগানিস্তানেও এই হার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। আফগানিস্তানে স্মার্টফোন ব্যবহারের হার ৫৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

তবে আফগানিস্তানের মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর হার বেশি- মালদ্বীপে ৮৩ শতাংশ, ভুটানে ৮১ শতাংশ, ভারতে ৭৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৭০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬৩ শতাংশ এবং নেপালে ৫৯ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

Reform commission reports: Proposals seek to bring youths into JS

Reform commissions on the constitution and election process have both recommended measures that increase opportunities for the youth to run for parliament and become more involved in politics, sparking both hope and criticism.

9h ago