আব্দুল মোনেম গ্রুপের আমদানি-রপ্তানি স্থগিত ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

পাশাপাশি বন্ড সুবিধায় আনা সুগার রিফাইনারি থাকা সব ধরনের অপরিশোধিত চিনি বাজারজাতকরণ ও সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্ড কর্মকর্তাদের।

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে কর ফাঁকি দেওয়া ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারিসহ ব্যবসায়িক গ্রুপটির সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এ ছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির চলতি অ্যাকাউন্টসহ অন্যান্য সব অ্যাকাউন্ট অপরিচালনযোগ্য বা জব্দ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (দক্ষিণ) এক অফিস আদেশে এ নির্দেশ দিয়েছে।

কমিশনারের পক্ষে আদেশে সই করেন বন্ড কমিশনারেটের উপকমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমা।

আদেশে দেশের সব সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দরকে প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করার পাশাপাশি সব বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা বিআইএন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিআইএন স্থগিত রাখার অর্থ হচ্ছে—প্রতিষ্ঠানটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া। বন্দরে যেসব পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে, তার শুল্কায়ন কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে।

একইভাবে গ্রুপটির প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি এর মালিকানাধীন ও ব্যবস্থাপনাধীন সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার অর্থ—প্রতিষ্ঠানটি এসব অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো অর্থ উত্তোলন বা লেনদেন করতে পারবে না।

অফিস আদেশে বলা হয়, শুল্ক পরিশোধ না করে ৫ লাখ ২৫ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি কারখানা থেকে অবৈধভাবে অপসারণ করে ১ হাজার ২০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় কিস্তিতে এসব অর্থ পরিশোধের নির্দেশনা দেওয়া হলে প্রতিষ্ঠানটি ৫৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে এবং বাকি ৬৭৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এখন পর্যন্ত জমা দেয়নি।

দেশের ১৯টি শুল্ক স্টেশনসহ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে নির্দেশনা দিয়ে আদেশপত্রে বলা হয়, কাস্টমস অ্যাক্ট ১৯৬৯ এর সেকশন ২০২ (১,বি) অনুযায়ী সরকারি পাওনা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠান অথবা তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অথবা একই মালিকানাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাস স্থগিত থাকবে।

পাশাপাশি বন্ড সুবিধায় আনা সুগার রিফাইনারি থাকা সব ধরনের অপরিশোধিত চিনি বাজারজাতকরণ ও সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্ড কর্মকর্তাদের।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, বন্ড বা হোম কনজাম্পশন সুবিধার আওতায় শুল্ক ছাড়াই আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড অপরিশোধিত চিনি আমদানি ও খালাস করে থাকে। তবে শর্ত থাকে, এসব পণ্য কোম্পানির বন্ডেড ওয়ারহাউজ থেকে অপসারণের সময় শুল্ক পরিশোধ করবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি প্রাপ্যতার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করেছে এবং এর শুল্ক  পরিশোধ না করেই বাজারজাত করেছে। ফলে, আমদানি শুল্কের পাশাপাশি ভ্যাট থেকেও বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট (ঢাকা দক্ষিণ) কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হাসান ও উপকমিশনার দ্বৈপায়ন চাকমাকে কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি এবং তাদের মোবাইলে মেসেজ দেওয়া হলেও তার কোনো জবাব দেননি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বন্ড কমিশনারেটের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১ হাজার ১৯০ কোটি ৫২ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। দুটি দাবিনামায় এসব অর্থ পরিশোধের জন্য সময় বেধে দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানটি পুরো অর্থ পরিশোধ করেনি।'

এক বছর ধরে কয়েক দফা অর্থ পরিশোধের পত্র দেওয়া হলেও কোনো ধরনের সাড়া না দেওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, ঢাকা কাস্টমস, মোংলা কাস্টমস ও কমলাপুর আইসিডির কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন নয়টি প্রতিষ্ঠানের শতাধিক চালান খালাস স্থগিত করে দিয়েছেন তারা।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে আব্দুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেডের ১০টি চালানে থাকা প্রায় ৫০ হাজার টন চিনি ও খাদ্যপণ্য রয়েছে। তাছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির ইগলু ডেইরি, এএম বেভারেজ, ইগলু আইসক্রিম, এএমএল কনস্ট্রাকশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আরও অন্তত ১০টি চালান স্থগিত রেখেছেন তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার মোহাম্মদ ফায়জুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। গতকাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সব চালান স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিআইএন লক হয়ে যাওয়ায় কোনোভাবেই পণ্য খালাস বা রপ্তানি পণ্য জাহাজিকরণ করার সুযোগ নেই।'

কমলাপুর আইসিডি কাস্টমসের কমিশনার আকবর হোসেনও জানান, তারাও এই নির্দেশনা পেয়েছেন।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মহিউদ্দিন মোনেমকে কল ও মেসেজ করা হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

Comments