ই-কমার্স প্রতারণা: এখনো ৬০০ কোটি টাকা ফেরত পাননি গ্রাহক

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে ৫০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করা ১৯ হাজার ৬২৩টি অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে ৬০০ কোটি টাকা পাওয়া নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছেন গ্রাহকরা।

অভিযোগগুলোর মধ্যে ১৬ হাজার ২০৪টি ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং ও কিউকমের বিরুদ্ধে। ইভ্যালি ও কিউকম ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমানে কোনো কার্যক্রম নেই।

ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৯৭৮টি অভিযোগ, ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ১৭টি অভিযোগ, আলেশা মার্টের বিরুদ্ধে ২ হাজার ২৫৭টি ও ধামাকা শপিংয়ের বিরুদ্ধে ৬১৮টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত আলেশা মার্ট থেকে মাত্র ১ কোটি টাকার অভিযোগ নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে।

'কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম আমাদের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনজুরের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছি', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, একাধিকবার যোগাযোগ করার পরেও হাইকোর্ট-গঠিত ইভ্যালি বোর্ড গ্রাহকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামানের মতে, অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মালিক ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।

'সেই কারণেই অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি হতে বেশি সময় লাগছে। এ ছাড়া কিছু কোম্পানি বিষয়টি আদালতে নিয়ে গেছে। যতক্ষণ না আদালত রায় দেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ভোক্তা অধিদপ্তর কিছু করতে পারবে না', যোগ করেন তিনি।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের আইনজীবী তাপস কান্তি বাউল বলেন, 'ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, রিংআইডি ও দালাল প্লাসের মালিক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ছেড়েছেন।'

তাপস কান্তি বাউল বলেন, 'শুনানির তারিখে তারা আদালতে হাজিরা দেন না। আমার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি আশঙ্কা করছি ভোক্তাদের এই টাকা ফেরত পেতে অনেক সময় লাগবে।'

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল ডিজিটাল কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী বলেন, পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় এখন গ্রাহকদের দিচ্ছে।

পেমেন্ট গেটওয়েতে ২৭টি ই-কমার্স কোম্পানির প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা আটকে আছে।

যাচাইয়ের পর এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের ৩৬১ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

'তবে যারা ২০২১ সালের ৩০ জুনের আগে কেনাকাটা করেছেন, তাদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কম', বলেন তিনি।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, 'যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে।'

যেসব ই-কমার্সের বিরুদ্ধে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে, তাদের ই-ক্যাবের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ধামাকা শপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম জসিম উদ্দিন ওরফে চিশতি বলেন, 'আমরা অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি এবং এই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।'

আইন অনুযায়ীই সবকিছু নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানান তিনি।

'আশা করি শিগগির আমরা সমস্যার সমাধান করতে পারব।'

কিউকমের আইনি উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ দাবি, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভোক্তাদের করা ১ হাজার ৯৭টি অভিযোগের ৭০ শতাংশই সমাধান করা হয়েছে।

'কিন্তু বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে জানানো হয়নি', বলেন তিনি।

ই-অরেঞ্জের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমান উল্লাহ চৌধুরীর আইনজীবী মো. হায়দার তানভীরুজ্জামান জানান, আমান ও প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবিন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সেই কারণে অভিযোগগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির অধ্যাপক বিএম মইনুল হোসেন বলেন, 'মামলার কারণে গ্রাহকের অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগলে ই-কমার্স শিল্পে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তির জন্য সরকারের একটি জোরালো উদ্যোগ নেওয়া উচিত।'

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানতে আলেশা মার্ট ও ইভ্যালির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to expedite hiring of 40,000 for public sector

The government has decided to expedite the recruitment of 6,000 doctors, 30,000 assistant primary teachers, and 3,500 nurses to urgently address the rising number of vacancies in key public sector positions.

7h ago