মুদ্রণশিল্প ও প্রকাশনা শিক্ষার ভবিষ্যৎ

মুদ্রণশিল্প ও প্রকাশনা বর্তমান বিশ্বে একটি অগ্রসরমান মাধ্যম- যা প্রতিনিয়ত আধুনিকতর রূপে বিকশিত হচ্ছে এবং নবতর চিন্তা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তির সমন্বয়ে দ্রুত রূপাদল পরিবর্তিত হচ্ছে। বাংলাদেশও প্রযুক্তির এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে সমান তালে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। এ সকল ক্ষেত্রে প্রকাশনা-মাধ্যম সবসময় গুরুত্ববহ ভূমিকা পালন করে এসেছে।

বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মর্যাদা পাচ্ছে। আমাদের কৃষি, আমাদের শিল্প, আমাদের অর্থনীতির কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি এর মূল কারণ। একটি আধুনিক রাষ্ট্রের মৌলিক সূচকের প্রতিটি ধাপে বাংলাদেশ সফলতার ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ সকল ক্ষেত্র তখনই সফলতা পেতে পারে, জাতি যখন সমাজের সার্বিক অগ্রগতির জন্য মানুষের জ্ঞানবৃদ্ধির সকল বিষয়কে জাতীয় শিক্ষার বিষয় হিসেবে গণ্য করতে শেখে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনো গতানুগতিকতার মধ্যে আবদ্ধ থাকে না। প্রতিনিয়ত নবতর জ্ঞানসৃষ্টির মধ্য দিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় অগ্রগতির নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে, জাতিকে স্বাবলম্বী করে তোলার দায়িত্ব পালন করে। বাংলাদেশে মুদ্রণ ও প্রকাশনাশিল্প দীর্ঘকাল নীতিনির্ধারকদের সুদৃষ্টির বাইরে থেকেছে। ফলে গড়ে ওঠেনি দক্ষ প্রকাশনা পেশাজীবী, পেশায়ও থেকে গেছে অদক্ষতার ছাপ। এর প্রধান কারণ আমাদের দেশে সম্পাদনা-প্রকাশনা বিষয়ে এতকাল উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না।

প্রকাশনা শুধু ছাপাকাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ বিষয় নয়। একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা বলতে বোঝায়- অনেক কর্মধাপ পার হয়ে আসা একটি সমন্বিত উপস্থাপনা। এ কাজের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হচ্ছে—লেখার বিষয় নির্ধারণ, লেখক নির্বাচন, প্রাপ্ত লেখার যথার্থতা যাচাই, বিশেষজ্ঞ মত গ্রহণ, পাঠকশ্রেণি নির্দিষ্টকরণ এবং সে-অনুযায়ী লেখার ভাষানির্মাণ, সম্পাদনা করা এবং নিখুঁত ছাপা-বাঁধাই তারপর পাঠকের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এটি একটি সৃজনশীল কাজ। সৃজনশীল মন না থাকলে, ক্রম-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে অগ্রসর না হলে এ কাজে সফল হওয়া কঠিন। আর এর উপরই নির্ভর করে পাঠকপ্রিয়তা ও ব্যবসায় সফলতা। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পকে বিশ্বমানে উন্নীত করা সময়ের এক বড় দাবি আজ।

প্রত্যেক শিক্ষিত মানুষকে ছোটবেলা থেকেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মুদ্রিত বস্তুর সঙ্গে পরিচিত হতে হয়েছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তা যতই আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে, ততই শিক্ষার্থীর কাছে গ্রহণীয় হয়েছে। অনেকের বেলায় এও দেখা গেছে, শিশুকালে পাঠের প্রতি জন্ম-নেওয়া আকর্ষণ পরবর্তীতেও অব্যাহত থেকেছে। এটা সমাজের জন্য একটা বড় ইতিবাচক দিক। তা নির্ভর করে- উপস্থাপিত পাঠ্যবস্তুটি কতটা সুন্দর ও গ্রহণীয় হয়েছে তার উপর। পাঠ্যবস্তুকে সুসম্পাদিত, সুমুদ্রিত ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য একজন সম্পাদক/প্রকাশককে যে-ধাপগুলো পেরিয়ে আসতে হয়- তা পাঠকের অগোচরেই থেকে যায়। এসব কারো জানার প্রয়োজন পড়ে না। এই না-জানা অধ্যায়ের দায়িত্বটুকুই পালন করে একজন প্রকাশনা নির্বাহী।  কোথাও কোথাও প্রকাশনা দপ্তরে কমিশনিং এডিটর এ দায়িত্ব পালন করে। এটি প্রকাশনা সংস্থার অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব- যা জানার জন্য শেখার জন্য মুদ্রণ ও প্রকাশনার কৌশলগত পঠনপাঠন অতি আবশ্যক। উন্নত দেশগুলোতে প্রকাশনা বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের সুযোগ রয়েছে বিধায় সেসব দেশে অনেক আগে থেকেই প্রকাশনাশিল্প বিকাশ লাভ করেছে। আর আমাদের দেশে যারা এ কাজে যুক্ত হয়েছেন তাদের অনেকেরই পেশাগত শিক্ষা কিংবা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ না-থাকায় তাদেরকে কাজ করতে করতে শিখে নিতে হয়েছে। তা মোটেই বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের দক্ষতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ থাকলে আমাদের প্রকাশনাশিল্পের এই রুগ্ন অবস্থা এতদিন থাকতো না। স্বাভাবিকভাবে অনেক আগেই তা চাহিদা অনুযায়ী বিকাশ লাভ করতে পারতো এবং আমাদের জাতীয় উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারতো।

আমাদের জ্ঞানচর্চার বহু ক্ষেত্র আজ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত। সাহিত্যে, চারুশিল্পে কিংবা বিজ্ঞান গবেষণায় আমরা পিছিয়ে নেই। আমাদের মেধাবী বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের অবদান বিশ্বে নন্দিত হচ্ছে। নিজেদের উদ্ভাবিত কৌশল কাজে লাগিয়ে আমরা আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের বেড়েছে মাথাপিছু আয়। আমাদের কৃষিসহ সামগ্রিক অগ্রগতির রূপ এবং এর সুফল সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রকাশনা-মাধ্যম বড় ভূমিকা রাখে। গ্রন্থ প্রকাশের পাশাপাশি পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী/জার্নাল ইত্যাদিও এক্ষেত্রে পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ সবের জন্য প্রয়োজন সৃষ্টিশীল মন, রুচিশীল উপস্থাপনা। এতেই বাড়ে প্রকাশনার মান। আর তা প্রথমত নির্ভর করে বিষয়-নির্বাচনের উপর, দ্বিতীয়ত সঠিক সম্পাদনা ও তৃতীয়ত ভালো মানের মুদ্রণ-ব্যবস্থাপনা/বাঁধাই ইত্যাদির উপর। প্রচ্ছদ নির্বাচনেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়। প্রচ্ছদ হচ্ছে প্রকাশনার প্রথম রূপ। এর জন্য সম্পাদক/প্রকাশকের শিল্পজ্ঞানও থাকা চাই। যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গ্রন্থও উপযুক্ত মানে উপস্থাপনের অভাবে আকর্ষণ হারাতে পারে, এবং তা জনগণ তথা যথার্থ পাঠকের অগোচরে থেকে যেতে পারে। যার ফলে তা নিশ্চিত বাজার হারাতে পারে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ প্রকাশনার এই ক্ষেত্রটিতে এটিই বড় দুর্বলতা!

প্রকাশিত পুস্তক-পুস্তিকা, নিউজলেটার ইত্যাদি অনেক সময় সাধারণ পাঠকের জন্য মূল্যবান হয়ে ওঠে তার পাঠ-উপাদানের জন্য। যেকোনো সামাজিক তথ্য, গবেষণার যেকোনো ফলাফল, যা দেশের মানুষের কাজে লাগবে তা জনস্বার্থে প্রচারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে প্রকাশনা। সব ক্ষেত্রে তা পাঠকের বোধের স্তর অনুযায়ী সম্পাদনা ও পরিমার্জন করে, প্রয়োজনে পুনর্লিখন করে উপস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। এ ক্ষেত্রেও প্রকাশক/সম্পাদকের স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি ও সৃষ্টিশীল মন থাকা দরকার। অনেক সময় বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো কোনো লেখা সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে সহজ ভাষায় প্রকাশ করা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে লেখকের মূল বক্তব্যকে অবিকৃত রেখে লেখকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা করতে হয়। এ সবই একজন সম্পাদক/প্রকাশকের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। আমাদের দেশে এরও অভাব প্রকট—যা শিক্ষার মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়।

আমাদের মত ক্রম-অগ্রসরমান দেশে মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম চালুর আশু প্রয়োজন ছিল আরও আগে। ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশে প্রকাশনা বিষয়ে শিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। এ ক্ষেত্রে যতই বিলম্ব হয়েছে, ততই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও তার ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই ছিল বলে এ ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে গেছে, আর আমাদের দেশে প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা এতকাল ছিল না বলেই আমরা পিছিয়ে আছি। যে কারণে আমাদের প্রকাশনাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তেমন মানসম্পন্ন হয়নি। ফলে পাঠক তৈরিতে যেমন ধীর গতি হয়েছে, বিশ্ববাজারেও আমরা তেমন জায়গা করে নিতে পারিনি। এমনকি আমাদের বড় বড় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহেও প্রকাশনা পেশাজীবীর চাহিদা থেকেই গেছে বছরের পর বছর। যে কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের প্রকাশনার মানও অধোমুখী। মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিষয়ের পাশাপাশি সম্পাদনা বিষয়েও শিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ টেক্সটবুক বোর্ডের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণীর বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে সম্পাদনা ও প্রকাশনাজ্ঞানের অভাবে যে-বিপর্যয় ঘটে গেছে সেটাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মতো বিষয়! বই প্রকাশনা যে শুধু লেখা জোগাড় করে আধুনিক মেশিনে ছাপিয়ে দায়িত্ব সম্পন্ন করার মতো বিষয় নয়, তা বুঝে নিতে আর বাকি থাকে না।

অন্য অনেক দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও প্রকাশনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ কিংবা উচ্চশিক্ষার বিষয়টি আমার ভাবনার মধ্যে থেকে যায়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দায়িত্ব গ্রহণ করছি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর দ্য এভেইলএবিলিটি অব সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন-এর সহযোগিতায় ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নাল প্রকাশনা বিষয়ে একটি জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করি। বিষয় ছিল- স্ট্র্যাটেজিক জার্নাল পাবলিশিং ওয়ার্কশপ। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থায় জার্নাল সম্পাদনা/প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ২৪ জন অধ্যাপক/গবেষক অংশগ্রহণ করেন। সেই কর্মশালায় প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আবার অনুভূত হয়।

বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে পুনরায় ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক ফর দ্য এভেইলএবিলিটি অব সায়েন্টিফিক পাবলিকেশন-এর সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। সে বারের বিষয় ছিল—অনলাইন জার্নাল পাবলিশিং ওয়ার্কশপ। এই কর্মশালায়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থায় জার্নাল প্রকাশনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ২৩ জন অংশগ্রহণ করেন। প্রথম ওয়ার্কশপে জার্নাল সম্পাদনা ও প্রকাশনার বিভিন্ন দিকে আলোকপাত করা হয়, আর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে প্রকাশিত সকল জার্নাল বিশ্বপাঠকের কাছে সহজপ্রাপ্য করার বিষয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রকাশিত জার্নাল বিশ্বপাঠকের কাছে প্রাপ্য করতে 'বাংলাদেশ জার্নাল অনলাইন' নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করা হয়- যা ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে এবং বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রায় সকল জার্নাল এই সাইটে পাওয়া যাচ্ছে। উভয় ওয়ার্কশপের সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করি। দায়িত্ব পালনকালে বাংলাদেশে প্রকাশনা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে অনুভূত হয়।

প্রকাশনায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিশিং স্টাডিজ নামে একটি বিভাগ খোলার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উপস্থাপন করি। সে উদ্যোগ ধীর গতিতে এগোয় এবং আমার প্রচেষ্টাও অব্যাহত থাকে। সময় অতিক্রান্ত হয়। প্রস্তাবটি ২০১৪ সালে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করেন এবং পরিমার্জনের নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী তা পরিমার্জন করে ডিপার্টমেন্ট অব প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ নামে পুনরায় উপস্থাপন করি। প্রস্তাবটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ২০১৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদন দেয়। একই বছর ড. সুধাংশু শেখর রায়কে চেয়ারম্যান নিয়োগের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এখন তা সময়োপযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ। এটি প্রতিষ্ঠার ফলে প্রশিক্ষিত জনবলের চাহিদা ক্রমান্বয়ে পূরণের পথ সুগম হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রকাশনা এক অসম প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চলেছে। কেউ সম্পাদনা-প্রকাশনার অভিজ্ঞতা নিয়ে এ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন, আবার কেউ কেউ এ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়া আসছেন। তাই, প্রকাশনা শিল্পের সার্বিক মান আশানুরূপ বাড়ছে না। অথচ আমাদের একুশের বইমেলা বিশ্বের অন্যতম বড় বইমেলা। এ ছাড়া সারা বছর বিভিন্ন জেলা শহরেও বইমেলার আয়োজন হয়। প্রকাশিত হচ্ছে হাজার হাজার বই। যথাযথ সম্পাদনা করে মানসম্মত রূপে প্রকাশ করে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বাকিসব সাধারণ মানের নিচে, যারা বাজারে প্রতিযোগিতায় যেতে সক্ষম হয় না। প্রকাশনা সুসম্পাদিত না হলে তা পাঠকের মধ্যে অনেক সময় বিরূপ প্রভাবও ফেলতে পারে। এই বিষয়ে উপযুক্ত শিক্ষাই দেখাতে পারে এর উত্তরণের পথ। বর্তমানে সারাদেশে কয়েক হাজার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর তাদের রয়েছে দক্ষকর্মীর সঙ্কট। আপাতত প্রতি প্রতিষ্ঠানে একজন করে প্রশিক্ষিত প্রকাশনাকর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে গেলেও আমাদেরকে এখনো কয়েক যুগ অপেক্ষা করতে হবে।

বিমল গুহ: অধ্যাপক, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Comments

The Daily Star  | English

Indian Media Reporting on Bangladesh: Fake or Fact?"

Why is the Indian media's coverage of Bangladesh markedly different from that of Bangladeshi news outlets?

8h ago