দৌড়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া

বিশ দিন, এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ। পুরোটা পাড়ি দিয়েছেন দৌড়ে। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দৌড়ে শেষ করা এই মানুষটির নাম শামসুজ্জামান আরাফাত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে কর্মরত আছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে। প্রথম পরিচয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় পরিচয়টা বেমানান হলেও ঠিক এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন আরাফাত। প্রায় ২০ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে গত ৬ মার্চ আরাফাত পৌঁছে যান তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে। এরই মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পুরো বাংলাদেশ দৌড়ে পাড়ি দেয়ার সম্মান অর্জন করেছেন তরুণ এই দৌড়বিদ।

তবে এই অর্জন মোটেও সহজ ছিল না, বলেছেন আরাফাত। নিজেকে প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে দৌড়ে প্রতিটি পদক্ষেপে বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করেই তিনি এই গৌরব অর্জন করেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের নোয়াপাড়া পরিবেশ টাওয়ার থেকে দৌড় শুরু করে প্রতিদিন প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৌড়েছেন তিনি। নানা প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হাঁটুতে চোট নিয়েও এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নির্মাণাধীন রাস্তায় দৌড়ানো ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় যমুনা সেতু। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাকে দৌড়ে যমুনা সেতু অতিক্রম করার অনুমতি দেয়া হয়নি। অনুরোধ করা হয়েছিল এটুকু পথ যানবাহনে চড়ে  পার হওয়ার জন্য। কিন্তু নিজের প্রতিজ্ঞা থেকে একচুলও নড়তে নারাজ আরাফাত। পরে তিনি সাঁতরে যমুনা নদী পাড়ি দেন।

কীভাবে শুরু এই দৌড়ের পরিকল্পনা? এই প্রশ্নে আরাফাতের উত্তর ছিল, অনেক বড় প্রস্তুতি এ ধরনের একটি দৌড়ের জন্য প্রয়োজন। আমিও সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছি ফিটনেস ও দৌড়ের প্রতি আগ্রহ থেকে। বাংলা চ্যানেল নিয়ে কাজ করেছি কিছুদিন, এখন রানিংটাকে এগিয়ে নিতে চাই।

বিশ্বে দৌড়সহ ফিটনেসের বিভিন্ন প্রতিযোগিতা থাকলেও কোনোটাতেই বাংলাদেশিদের তেমন অংশগ্রহণ দেখা যায় না বলে আক্ষেপ রয়েছে আরাফাতের। বোস্টন ম্যারাথন, নিউইয়র্ক ম্যারাথনের মতো বড় আয়োজনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ এখনো শূন্য। আরাফাত চান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যারাথন ও ফিটনেস আয়োজন ‘আয়রন ম্যান’-এ নাম লেখাতে এবং সম্পন্ন করতে। এই টার্গেটকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চান তিনি। ভালো স্বাস্থ্যের জন্য, ফিটনেসের জন্য হলেও সবাইকে এসব কাজে যুক্ত থাকার প্রয়োজন বলে মনে করেন আরাফাত। আর সেই প্রয়াসকে সামনে এগিয়ে নিতে আরাফাতের এই প্রচেষ্টা। ফিটনেসের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে ‘ফ্রাইডে ফিটনেস’ নামের একটি পরিকল্পনাও রয়েছে আরাফাতের, যেখানে সব বয়সের মানুষ নিজেদের জন্যই প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম বা শারীরিক কসরতের কোনো কাজে যুক্ত থাকবে।

একটি মানুষের রানার বা দৌড়বিদ হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য আগ্রহী আরাফাত। এই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যেতে চান তিনি। সাঁতার ও দৌড়ে বেশ পারদর্শী হলেও ‘আয়রন ম্যান’ প্রতিযোগিতায় যাওয়ার উপযোগী সাইকেল বাংলাদেশে এখনো ঠিকভাবে পাননি বলে প্রস্তুতি এখনো সম্পন্ন করতে পারেননি বলে জানান তিনি। তবে বাংলাদেশের নামকে ম্যারাথনের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আরাফাত।

Comments

The Daily Star  | English

Students, teachers declare 'shutdown' at JnU

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

1h ago