স্ট্রিক্স-আনন্দধারা হেয়ারস্টাইলিং কম্পিটিশন ২০১৭

আনন্দ আয়োজনের দুটো দিন

আনন্দধারা। এখানে থাকবে আনন্দের নহর। তাই অনেক আনন্দের সঙ্গেই এ বছর আনান্দধারার প্রথম এবং সবচেয়ে সুন্দর ও মজার ইভেন্টটি সম্পন্ন হয়ে গেল গত ১৭ ও ১৮ আগস্ট। দু’দিনব্যাপী সবাই মেতেছিল স্ট্রিক্স-আনন্দধারা হেয়ারস্টাইলিং কম্পিটিশন-২০১৭ আয়োজনে। সঙ্গে ছিল ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনও। ইভেন্টের মিডিয়া পার্টনার ছিল আরটিভি ও স্টার শোবিজ এবং আমাদের কস্টিউম পার্টনার ছিল রঙ বাংলাদেশ।

প্রথমেই বলে রাখি তাদের কথা যাদের সহযোগিতায় আমরা এই ইভেন্টটি সম্পন্ন করতে পেরেছি। পাক্ষিক আনন্দধারা পত্রিকার সম্পাদক রাফি হোসেন এবং সাইফুর রহমানসহ আমাদের পুরো আনন্দধারা টিমের নিরলস প্রচেষ্টায় পুরো ইভেন্টটি সুসম্পন্ন হয়েছে। ইভেন্টের আগে-পরে মিলিয়ে আমরা সবাই অনেক খাটাখাটি করেছি। আমাদের প্রাপ্তি এই যে অনুষ্ঠানটি কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই শেষ হলো।

ফেসবুকের বদৌলতে আজকাল সবকিছুই আমাদের হাতের খুব কাছেই থাকে। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত এবং সমাদৃত নতুন মেকআপ আর্টিস্ট  এবং নতুন ফটোগ্রাফারদের নিয়েই মূলত এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। নতুন মেকআপ আর্টিস্টদের আমরা বিউটি ব্লগার বলছি। কারণ তারা সবাই প্রফেশনাল। কিন্তু এদের কোনো স্যালন নেই। বিউটি ব্লগার আর ফটোগ্রাফারদের পরিচিত করার জন্য আমাদের এই উদ্যোগ আশানুরূপ  ফল দিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই আয়োজন সামনে আবারো আয়োজিত হবে।

মোট ১৩ জন বিউটি ব্লগার এবং ১২ জন ফটোগ্রাফার এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। বিউটি ব্লগাররা সেলিব্রিটি মডেলদের সাজিয়েছেন। আর প্রত্যেক মডেলের ছবি তুলেছেন ১২ জন ফটোগ্রাফার। এদের মধ্যে অনেকেই ফেসবুকে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। আনন্দধারার পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করেছি তাদের পরিচিতি বাড়ানোয় সহায়ক হতে। বিউটি ব্লগার এবং ফটোগ্রাফারদের মতে, এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। তারা ভবিষ্যতে এমন আরো ইভেন্টে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেলিব্রিটিদের সঙ্গে কাজ করা, সুন্দর করে তাদের মেকওভার করা, তাদের ফটোশ্যুট করা সব মিলিয়ে পুরোপুরিই একটা নতুন অভিজ্ঞতা তরুণ মেকআপ আর্টিস্ট এবং ফটোগ্রাফারদের জন্য। সেলিব্রিটি মডেলদের সঙ্গে কাজ করতে পেরে তারা সবাই খুশি। এটা  ছিল নতুনদের নিয়ে আমাদের প্রথম কাজ। আর প্রথম কাজ হওয়া সত্ত্বেও বিপুল আলোচিত হয়েছে এই ইভেন্ট। অদূর ভবিষ্যতে এমন আরো অনেক ইভেন্ট করবে আনন্দধারা। ১৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে ইভেন্টের কার্যক্রম শুরু হয়। একে একে সব বিউটি ব্লগার আর ফটোগ্রাফারররা পৌঁছে যান। মডেলদের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আসতে সময় লেগে যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এতে একজন প্রতিযোগীরও কোনো অভিযোগ ছিল না। কারণ তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই সেলিব্রিটি মডেলদের সঙ্গে এই প্রথম কাজ। প্রতিযোগীরা সবাই খুব খুশি ছিল। ফলে মডেলদের দেরি সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছেন।

পরের দিন ১৮ আগস্টও প্রতিযোগীরা সবাই সময়মতো হাজির ছিলেন। কিন্তু মডেলদের কারো কারো আসতে বিলম্ব হলেও প্রতিযোগীরা কেউ অস্থির হননি, বরং তারা সবাই উৎসাহ নিয়েই কাজ করেছেন। যেমন- অভিনেত্রী স্বাগতার আসতে অনেক দেরি হয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তিনি পৌঁছান। কিন্তু তার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে তাকে সাজান সানিয়া মাহমুদ বৃষ্টি। সত্যিই এই ব্যাপারটা খুব অবাক করার মতোই। একজন সেলিব্রিটিকে আমরা নিজ চোখে একবার দেখার জন্য কী-না করি। এমনই আরেক ঘটনা হলো প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন। একজন মডেলের খুব জরুরি কাজ পড়ে যাওয়ায় তিনি ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে সময় দিতে পারেননি। তখন তার জায়গায় হুট করেই অন্য আরেকজন মডেলকে আনতে আমাদের একটু দেরি হয়ে যায়। সেই সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন বিউটি ব্লগার। কিন্তু তার কোনো ক্ষোভ ছিল না। তার মডেল আসার সঙ্গে সঙ্গেই হাসিমুখে সাজাতে শুরু করেন তার মডেলকে। আর এই পুরো ইভেন্টজুড়ে ছিল অনেক তারকা সমাগম। এসব তারকার সঙ্গে ছবি তুলতে পেরে সব প্রতিযোগীই ছিলেন খুবই উৎফুল্ল।

একসঙ্গে এতজন সেলিব্রিটিকে কাছে পাওয়া, তাদের সঙ্গে ছবি তুলতে পারার সুযোগ সচরাচর হয় না। নিজেদের খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছে এই তরুণ শিল্পীদের। সেই সঙ্গে আমাদেরও মন ভরে উঠেছে তাদের খুশিতে। যদিও অনেকেই অনেকের সঙ্গে ছবি তুলতে পারেননি, তবুও সবাই ছিল আনন্দিত। বিউটি ব্লগারদের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠ ছিলেন নিসা হাই। সেদিনটি তার মতো করে কয়জন উপভোগ করেছেন জানি না। তবে নিসা অনেক আনন্দ করেছেন আনন্দধারার আয়োজনে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল খুশিতে আত্মহারা অবস্থা। অল্প বয়সের একটি মেয়ে নিসা স্বপ্ন দেখছেন একদিন তিনি একজন বিখ্যাত মেকআপ আর্টিস্ট হবেন। অনেক বড় হবেন তিনি এই পেশায় থেকে। তার চোখে-মুখে স্বপ্ন শুধুই এই পেশায় নিজেকে সঁপে দেয়ার। এই বিষয়টা সামনে থেকে অবলোকন করার মধ্যে আমি নিজেও একধরনের তৃপ্তি পেয়েছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল আমাদের এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সত্যিই কিছু লুকিয়ে থাকা প্রতিভা বেরিয়ে আসতে পেরেছে। নিসাকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। কারণ তিনিই প্রথম হয়েছেন। সবাইকে টপকে গেছেন।

অংশগ্রহণকারী সব বিউটি ব্লগার নিজেদের অভিমত দিয়েছেন এই ইভেন্ট সম্পর্কে। তাদের প্রত্যেকের মন্তব্যে একটা কথাই মুখ্য ছিল, আনন্দধারা যেন মেকআপ বিষয়ক এই ধরনের প্রতিযোগিতা অথবা ওয়ার্কশপ আগামীতে আরো আয়োজন করে। আর ফটোগ্রাফারদের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ফটোগ্রাফারই প্রচন্ড পরিমাণে ধৈর্যশীল। একেকজন ফটোগ্রাফার এক এক করে ১৩ জন মডেলের শ্যুট করেছেন। দু’দিনে ১৩ জন নামিদামি মডেলের শ্যুট করা ইয়াং ফটোগ্রাফারদের জন্য চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। এই প্রশংসাটুকু না করলেই নয় যে, এই তরুণ ফটোগ্রাফারদের তুমুল ধৈর্য তাদেরকে একদিন অনেক লম্বা পথ পেরিয়ে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।

স্ট্রিক্স হেয়ার কালারের পক্ষ থেকে আমাদের পুরো অনুষ্ঠানের স্পন্সরশিপের দায়িত্ব নেয়া হয়। স্ট্রিক্স-হেয়ার কালারের টেকনিক্যাল ট্রেইনার সাদিয়া ইসলাম দু’দিন থেকে আমাদের পুরো ইভেন্টটি উপভোগ করেছেন। তিনি আমাদের সেলিব্রিটি মডেলদের চুলে তাদের পছন্দমতো কালার করে দিয়েছেন খুবই সানন্দে। পাশাপাশি আমাদের প্রধান সম্পাদক রাফি হোসেন নিজের চুলও একটু কালার করিয়ে নিয়েছেন। এই সুযোগে আমরা আনন্দধারার সঙ্গে কর্মরত অনেকেই চুলে একটু-আধটু রঙ করিয়ে নিলাম। তবে আপনি অনায়াসেই স্ট্রিক্স হেয়ার কালারের নিজস্ব স্যালনে গিয়ে অত্যন্ত যত্ন সহকারে নিজের পছন্দমতো কালার করিয়ে নিতে পারেন চুলে। সাদিয়া ইসলাম জানালেন, আমাদের এই ইভেন্টটি বর্তমান যুগের তরুণ মেকআপ আর্টিস্টদের জন্য নেয়া খুবই উপযোগী একটা পদক্ষেপ। এই ইভেন্টের মাধ্যমে এসব তরুণ মেকআপ আর্টিস্টের জনপ্রিয়তাও বাড়বে। মডেলদের মধ্যে যারা চুল কালার করেছিলেন সবাই অত্যন্ত খুশি ছিলেন। মডেল শাহতাজ কখনো চুল কালার করেননি আগে। তাই এই ইভেন্টে এসে কালার করার লোভ সামলাতে পারলেন না আর। খুব দ্বিধায় পরে গিয়েছিলেন, তিনি কোন রং করবেন তা নিয়ে। পরে সাদিয়া ইসলামের পরামর্শে তিনি চুলে লাল রঙ ব্যবহার করলেন এবং তাকে খুবই মানিয়ে গেছে সেই রঙে।

এবার আসা যাক বিচার পর্ব নিয়ে। এই পুরো প্রতিযোগিতায় বিচারক পালায় ছিলেন মোট পাঁচজন। বিউটি অ্যান্ড হেয়ার স্টাইলিংয়ের  বিচারক ছিলেন বিউটি এক্সপার্ট আফরোজা পারভীন (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার-রেড বিউটি পার্লার অ্যান্ড স্যালন এবং কো-ফাউন্ডার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর, উজ্জ্বলা), হেয়ার অ্যান্ড বিউটি এক্সপার্ট কামরুল ইসলাম (বান থাই বারবার অ্যান্ড বিউটি স্যালন)। আর ফটোগ্রাফির বিচার ছিলেন বিশিষ্ট তিনজন ফটোগ্রাফার- ডেভিড বারিকদার, ফটোগ্রাফার অ্যান্ড সিইও, পল ইমেজেস, ফটোগ্রাফার প্রীত রেজা, ডিরেক্টর, ওয়েডিং ডায়েরি এবং দ্যা ডেইলি স্টারের সিনিয়র ফটোগ্রাফার ও পাঠশালার লেকচারার সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ। এছাড়াও ছিলেন স্ট্রিক্স হেয়ার কালারের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সামরিন হাসান। এই পুরো বিচারকমন্ডলীর সহায়তায় প্রথম তিনজন মেকআপ আর্টিস্ট এবং প্রথম তিনজন ফটোগ্রাফার নির্বাচিত হয়। ফটোগ্রাফি বিভাগের বিচারকাজ হয়েছিল ইভেন্ট শেষ হওয়ার পরদিন অর্থাত ১৯ তারিখ, সেদিন উল্লেখিত তিনজন ফটোগ্রাফার বিচারক ছিলেন। সর্বসম্মতির মাধ্যমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় তিনজন ফটোগ্রাফারকে নির্বাচিত করা হয়। এই কাজটি বিচারকদের জন্য খুব একটা সহজ ছিল না কারণ একেকজন ফটোগ্রাফার ১৩ জন মডেলের প্রত্যেকের ছবি তুলেছিল। এত ছবি থেকে তিনটি ছবি বাছাই করা একটু কঠিনই বটে। কিন্তু বিচারকরা খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচন পর্ব শেষ করেন। আফরোজা পারভীন এবং কামরুল ইসলাম সব প্রতিযোগীর কাজ ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। হেয়ার কালারিংসহ তিন ঘণ্টার মধ্যে একজন স্বনামধন্য মডেলকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা এবং সঙ্গে সঙ্গেই বিচারকদের সামনে নিজের সাজানো মডেলের সঙ্গে স্বয়ং হাজির হওয়ার জন্য অবশ্যই অনেক সাহস দরকার। এতে করে বোঝা গেছে এই তরুণ আর্টিস্টরা খুবই সাহসী এবং নিজের কাজে ও লক্ষ্যে দৃঢ়সংকল্প। দু’দিনই উপস্থিত ছিলেন মৌসুমী এন্টারপ্রাইজের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সামরিন হাসান। দ্বিতীয় দিন এসেছিলেন আমান গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার মার্কেটিং।

ফটোগ্রাফি বিভাগের বিচারকার্যের সময় একটা মজার ব্যাপার ঘটেছিল। ডেভিড বারিকদার আর প্রীত রেজার দুটো ছবির মধ্যে কোনটা প্রথম নির্বাচিত হবে তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। প্রীত রেজা তার পছন্দের ছবির মন্তব্যে বললেন, ‘ছবিটা দেখেই মনে হচ্ছে মেয়েটার সঙ্গে কফি খেতে যাই।’ আর প্রত্যুত্তরে ডেভিড বারিকদার তার নিজের বাছাইকৃত ছবিটি দেখে বললেন, ‘এই মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে এখনই ওর সঙ্গে ডিনারে চলে যাই।’ এভাবে মজা করতে করতে পুরো কার্যক্রম শেষ হয়েছিল।

আমাদের বিশ্বাস এই আয়োজন বাংলাদেশের বিউটি আর ফ্যাশন ফটোগ্রাফিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করবে। স্ট্রিক্সকে ধন্যবাদ এই আয়োজনে শরিক হওয়ার জন্য। আমরা আশা করি এই আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আর এখান থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিউটি এক্সপার্ট এবং ফ্যাশন ফটোগ্রাফার। সেদিনের অপেক্ষায় আমরা সবাই।

ছবি : শাহরিয়ার কবির হিমেল  

Comments

The Daily Star  | English

‘Salma was killed by tenant, not her son’

Salma was killed by her “drug peddler” tenant, not by her 19-year-old son, said police yesterday contradicting Rab’s claim.

3h ago