দেশ থেকে সরাসরি বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি বন্ধ, বাড়ছে দাম

বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রি বন্ধ
বেশির ভাগ এয়ারলাইনস বাংলাদেশে কম ভাড়ার টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছে। ছবি: সংগৃহীত

ডলার সংকটের কারণে টিকিট বিক্রির মুনাফা নিজ দেশে নিতে না পারায় বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে টিকিট বিক্রি বন্ধ করেছে বেশ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইনস।

এখন তারা অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সির (ওটিএ) কাছে টিকিট বিক্রি করছে।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে বেশ কয়েকটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর একটি হলো স্থানীয় এজেন্টদের কাছে টিকিটের দাম বেড়ে যাওয়া। বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের, বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকরা চাপে পড়ছেন।

অন্যটি হলো, প্রায় তিন হাজার ৬০০ স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টদের ব্যবসা দ্রুত লোকসানে পড়ছে।

বিদেশি এয়ারলাইনস ও অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তাদেরও বিব্রত করছে এবং বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে।

উদাহরণ স্বরূপ, গত ডিসেম্বরে রিয়াদে আয়োজিত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) এয়ার সার্ভিস নেগোসিয়েশন ইভেন্টে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধান ও কয়েকটি দেশের এয়ারলাইনসের প্রতিনিধিরা একত্রিত হন।

সেখানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের কাছে তারা জানতে চান, বাংলাদেশে আটকে থাকা অর্থ তারা কবে নাগাদ ফেরত পাবেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'সবার সামনে তারা আমাদের (বেবিচক) প্রধানকে তাদের আটকে থাকা অর্থ ছাড় করতে বলেছিল, যা আমাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে।'

প্রায় ৩০০ এয়ারলাইনসের একটি সংস্থা আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ)। এর মাধ্যমে আকাশপথে বিশ্বের ৮৩ শতাংশ পরিবহন হয়। টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের অর্থ দিতে না পারায় গত বছরের জুনে সংস্থাটি বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় 'সর্বোচ্চ খারাপ' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

তালিকার প্রথমে আছে নাইজেরিয়া।

বৈদেশিক রিজার্ভ কমতে শুরু করায় বাংলাদেশ বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে ধীর গতিতে মুনাফার অর্থ দিচ্ছে। আইএটিএ-তথ্য অনুসারে, গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের কাছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ২১৪ মিলিয়ন ডলার পাওনা ছিল।

গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদেশি এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, তবে তা এখনো ভয়াবহ। আমাদের আয় সঠিকভাবে পাঠাতে পারছি না। আমরা ওটিএ-তে চলে এসেছি, যেন মুনাফা পাঠাতে পারি।'

আরেকটি এয়ারলাইনসের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আগে ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে পারতাম এবং একটি নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে আমাদের আয় পাঠাতে পারতাম। কিন্তু এখন ডলারের সংকট সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছে।'

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আয়ের অর্থ পাঠাতে দেরি হলে লাভের পরিমাণ কমে আসে। কারণ দ্রুত টাকার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যায়।

বেবিচকের তথ্য অনুসারে, ৩২টি বিদেশি এয়ারলাইনস প্রতিদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (এটিএবি) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, 'পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশের প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার এয়ার টিকিট ব্যবসা বিদেশি অনলাইন ট্রাভেল এজেন্টদের হাতে চলে যাবে।'

তিনি বলেন, কয়েকটি রুটে টিকিটের দাম; বিশেষত নিউইয়র্ক, কানাডা ও লন্ডনের মতো দূরের পথে টিকিটের দামও ৫০ থেকে ১০০ ডলার বেড়েছে।

টিকিট বিদেশে বিক্রি হওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এটিএবি সভাপতি এসএন মঞ্জুর মুর্শেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশে কম ভাড়ায় টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ায় যাত্রীদের বেশি দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, এখন যে কোনো স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টের কাছে ব্যাংকক যাওয়ার টিকিটের দাম প্রায় ২৫ হাজার টাকা। একই টিকিট ওটিএ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে।

মঞ্জুর মুর্শেদ জানান, তারা বারবার বেবিচককে এই সমস্যার সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।

অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এবং অ্যাভিয়েশন ও ট্যুরিজম সংক্রান্ত এক জার্নালের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই এ সংকট চলছে।'

তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি এয়ারলাইনসকে তাদের আয়ের একটি অংশ পাঠানোর সুযোগ দিচ্ছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে বেশির ভাগ এয়ারলাইনস বাংলাদেশে কম ভাড়ার টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছে।

'ফলে বাংলাদেশি যাত্রী ও স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এতে বাংলাদেশের বদনাম হচ্ছে মত দিয়ে ওয়াহিদুল আরও বলেন, 'বাংলাদেশে সেবা দিতে আগ্রহী এয়ারলাইনসরা নিরুৎসাহিত হবে।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেবিচক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, 'বাংলাদেশে কয়েকটি এয়ারলাইনসের বিশাল বিনিয়োগ আটকে থাকায় কয়েকটি এয়ারলাইনস ও কয়েকটি দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রধানরা আমাকে অনুরোধ করেছেন, যাতে আমরা তাদের আয় তাদের নিজ দেশে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করি।'

'আমরা ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছি।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'ডলার সংকটের কারণে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো তাদের আয় দেশে পাঠাতে পারছে না এমন তথ্য তার কাছে নেই।'

Comments

The Daily Star  | English

NBR revises VAT, SD on 9 items following public outcry 

NBR said it has slashed VAT on ready-made clothes, restaurants, sweets, non-AC hotels and motor workshops and mostly restored to the previous levels

31m ago