মালয়েশিয়ায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়ের মৃত্যু

মালয়েশিয়ায় ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীর ইসলাম জয়ের মৃত্যু
খোন্দকার তানভীর ইসলাম জয় | ছবি: সংগৃহীত

মালয়েশিয়ায় পলাতক ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী খোন্দকার তানভীর ইসলাম জয় কুয়ালালামপুরে মারা গেছেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত ১২ এপ্রিল কুয়ালালামপুরে একটি তালাবদ্ধ অ্যাপার্টমেন্ট থেকে পুডু থানা পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেছে। সোমবার দুপুরে স্বজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

জয় এত দিন তারেক রানা পরিচয়ে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছিলেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। তাকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হতো। গত ১২ এপ্রিল সকালে তার গৃহকর্মী অ্যাপার্টমেন্টে এসে কলিং বেল বাজানোর পরও সাড়া না পেয়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের জানান। তারাও ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে থানাকে অবহিত করেন।

পুলিশ দরজা ভেঙে জয়ের মরদেহ উদ্ধার করে ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার ইউকেএম হাসপাতালে পাঠায়। ওই হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের অধ্যাপক ফারিদা মুহা নূর ময়নাতদন্ত করেন।

ইউকেএম হাসপাতালের অধ্যাপক ফারিদা মুহা নূরের একজন সহকর্মী জানিয়েছেন, জয়ের এক বোন মরদেহ নিতে মালয়েশিয়ায় যান। তবে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, জয়ের বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কুয়ালালামপুরে এসে সেখানকার ভারতীয় দূতাবাসে ভাইয়ের মরদেহ গ্রহণ করতে লিখিত আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে দূতাবাস অনাপত্তিপত্র (এনওসি) দেয়। সেটা হাসপাতালে জমা দিয়ে তিনি মরদেহ গ্রহণ করেন এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় তার দাফন সম্পন্ন হয়।

নব্বইয়ের দশকের ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপ লিয়াকত-হান্নানের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আলোচিত হন তানভীর ইসলাম জয়। কলাবাগানের ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান জয় সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

সে সময় তাদের গ্রুপটি পুলিশের কাছে সেভেন স্টার নামে পরিচিতি পায়। জয়ের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যাকাণ্ড, দুটি হত্যাচেষ্টা, মারাত্মক জখম ও চাঁদার জন্য শারীরিক ক্ষতির হুমকি দেওয়ার অনেকগুলো অভিযোগ ছিল।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে ২০০০ সালে গ্রেপ্তার হন জয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি ভারতে চলে যান। সেখান থেকে তারেক রানা নামে পাসপোর্ট করে ২০০১ সালে মালয়েশিয়া চলে যান। পরবর্তীতে আবার ভারতে ফিরে আসেন।

ভারতে থাকাকালে তার নামসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর পোস্টার প্রকাশ করে পুলিশ। ২০০৫ সালে বাংলাদেশের অনুরোধে ইন্টারপোল জয়ের বিরুদ্ধে 'রেড কর্নার নোটিশ' জারি করে।

২০০৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফতাব আহমেদ খুনের ঘটনায় নতুন করে তার নাম আসে। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৭ সালে রাজধানীর গড গিফট ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিতে গুলির ঘটনায়ও জয়ের সম্পৃক্ততা ছিল। ওই বছর তিনি সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন এবং কিছু দিন জেল খেটে বেরিয়ে কানাডায় চলে যান।

কানাডায় জয় 'এসজে ৭১' নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। সেখানে রানা অ্যাজাক্স নামে নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন। ২০১৫ সালে কানাডা পুলিশ তার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে।

২০১৯ সালে কানাডার নির্বাচনের আগে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যান। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও থাইল্যান্ডে বসবাস করে আসছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

8h ago