সিডনির শপিংমলে হামলা: এক ‘দুঃসাহসী মা’য়ের গল্প

অ্যাশলি গুড। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যনগরী সিডনির বন্ডাই জংশনে ওয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টারে গতকাল হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত হন ৩৮ বছর বয়সী অ্যাশলি গুড। 

কিন্তু নিজের ৯ মাস বয়সী ছোট্ট মেয়ে হ্যারিয়েটকে বাঁচানোর জন্য ছুঁড়ে দিয়েছিলেন অপরিচিত একজনের দিকে। পরে মারা যান অ্যাশলি। 

তার সাহসিকতা এখন অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমের শিরোনাম। বেদনাদায়ক এ গল্প এখন অস্ট্রেলিয়ানদের মুখে মুখে। 

তাকে অভিহিত করা হচ্ছে এক 'দুঃসাহসী মা' হিসেবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী সিডনির নাইন নিউজকে  বলেন, 'শিশুটিকে এবং তার মাকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। মা শিশুটিকে আমার দিকে ছুঁড়ে মারল। আমি শিশুটিকে ধরে ফেলি। খুব খারাপ লাগছিল।'

'মেঝেতে প্রচুর রক্ত​ছিল। আশা করি শিশুটি ভালো আছে,' যোগ করেন তিনি। 

গতকাল শনিবার বিকেলে সিডনির একটি শপিং সেন্টারে হামলায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হন। সেখানেই অ্যাশলি গুড এবং তার ৯ মাস বয়সী মেয়ে হ্যারিয়েটকে ছুরিকাঘাত করে হামলাকারী। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, হামলাকারীর ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার পরও অ্যাশলি তার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। 

যার দিকে অ্যাশলি তার মেয়েকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তার ভাইও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা কেনাকাটা করছিলাম। দেখলাম ওই নারী ও শিশুর দিকে ছুটে আসছে হামলাকারী। পরে কাছে গিয়ে তাদের ছুরিকাঘাত করে। মা শিশুটিকে হামলাকারীর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়।'

তিনি আরও বলেন, 'শিশুটির রক্তপাত বন্ধ করতে আমরা জামাকাপড় খুঁজি এবং চিৎকার করি। আমার ভাই শিশুটিকে ভালোভাবে জাপটে ধরেছিল। আশা করি শিশুটি ঠিক আছে।'

নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশের সহকারী কমিশনার অ্যান্থনি কুক আজ রোববার জানান, শিশুটি এখনো হাসপাতালে 'গুরুতর অবস্থায়' চিকিৎসাধীন।

অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতিতে অ্যাশলির পরিবার তাকে সুন্দরী মা, দায়িত্বশীল কন্যা, বোন, সহযোগী, বন্ধু এবং সব মিলিয়ে অসামান্য একজন মানুষ হিসেবে অভিহিত করেছে।

তারা বলেন, 'আমরা অস্ট্রেলিয়ান জনসাধারণের প্রতি শুভকামনা জানাই এবং তাদের ভাবনার প্রশংসা করি যারা অ্যাশলি ও আমাদের ছোট্ট শিশুটির জন্য ভালবাসা প্রকাশ করেছেন। আমরা সিডনি চিলড্রেনস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের প্রতি কৃতজ্ঞ।'

শিশুটির বাঁচানোর জন্য ওই দুই ভাইকেও ধন্যবাদ জানিয়েছে অ্যাশলির পরিবার।

স্কাই নিউজ অস্ট্রেলিয়া টেলিভিশনের প্রতিবেদক লরা জেয়েস টিভি প্রতিবেদনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, অ্যাশলি গুডকে তিনি চেনেন। 

তিনি বলেন, 'মা হয়ে অ্যাশলি খুব উচ্ছ্বসিত ছিলেন এবং এক বিকেলে সেকেন্ডের মধ্যেই সব কিছু শেষ হয়ে গেল।'

'আমি ভাবতে পারি না যে, তাকে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদকে কারও হাতে হস্তান্তর করতে হবে। আমরা চাই, তার সন্তান জানুক যে তার মা ছিলেন একজন দুঃসাহসী মা,' যোগ করেন তিনি। 

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Iran's top security body to decide on Hormuz closure after parliament approval

JD Vance says US at war with Iran's nuclear programme, not Iran

12h ago